বাংলাদেশ বিমানে আগুনঃ অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন এরশাদ, বাবলু ও আনিসুল
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বিমান দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু ও পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ ২০৬ জন যাত্রীসহ ২২১ আরোহী। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রায় ৫ ঘণ্টা আকাশে কাটানোর পর অবশেষে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে সক্ষম হয় বিমানটি।বিমানটির যাত্রী ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছি। বিমানে যে আগুন ধরে গিয়েছিল তা বুঝতেই পারিনি। ভেতরে প্লাস্টিক পোড়া গন্ধ পাচ্ছিলাম। তবে সেটা মাথায় ছিল না। চেয়ারম্যান স্যার (হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ), আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আর আমি আলাপে ব্যস্ত ছিলাম। বিমানটি আকাশে এতক্ষণ কেন চক্কর দিচ্ছিল সেটা বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু বাংলাদেশের আকাশ সীমায় প্রবেশের পর অস্বাভাবিক ঝাঁকুনি দেখে বুঝেছিলাম ‘সামথিং রং’।
তিনি আরো বলেন, বিমানটি সিঙ্গাপুর থেকে উড্ডয়নের পরেই ত্রুটি দেখা দেয়। ৪৫ মিনিট পর আবার সিঙ্গাপুরে ফিরে যায় বিমানটি। একঘণ্টা পর ফের সিঙ্গাপুর থেকে ছাড়ে। তখন বলা হয়েছিল কম্পিউটারে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। সেটা মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু আকাশে উড়ার পর ফের ইঞ্জিনের ত্রুটি দেখা দেয়। বিমানটি বাংলাদেশের আকাশে ঢোকার পর যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে আমাদের বসে থাকতে বলেন বিমানকর্মীরা। অকেনসময় আকাশে চক্কর দেয় এয়ারবাসটি। মাঝে মাঝেই জোরে ঝাকুনি দিচ্ছিল। আমরা ভেবেছিলাম আবহাওয়ার কারণে। ঘণ্টা দেড়েক আকাশে চক্কর দিয়ে বিমানবন্দরে অনেকটা আছড়ে পড়ার মতো অবতরণ করে এয়ারবাসটি। এতজোরে ঝাকুনি খায় যে যাত্রীরা একে অন্যের উপর গিয়ে পড়ে। অবতরণের পর বিমানের দরজা খুলছিল না। এ অবস্থায় ভেতরে যাত্রীরা কান্নাকাটি শুরু করেন। এত বছরের পুরনো এয়ারবাস কীভাবে চলে সেটাই বুঝি না।
জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানের এয়ারবাস ৩১০ ফ্লাইট নং বিজি ০৮৫ সিঙ্গাপুরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় শনিবার বিকেল ৪টায় উড্ডয়ন করে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে এয়ারবাসটি হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশের পর চট্টগ্রামের শাহ আমানত (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটির দ্বিতীয় ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। এসময় যাত্রীরা সবাই আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকেন। এরপর পাইলট বিমান থেকে প্রায় সব জ্বালানি তেল সাগরে ফেলে আড়াই ঘণ্টা আকাশে চক্কর দেন। অবশেষে রাত পৌনে ৯টায় এয়ারবাসটি শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে উড্ডয়নের ৪৫ মিনিট পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গী বিমানবন্দরে ফিরে যায় ওই এয়ারবাসটি। দ্বিতীয় দফা উড্ডয়নের ঘণ্টা দেড়েক পর বিমানের দ্বিতীয় ইঞ্জিনে আবারও আগুন ধরে যায়। পাইলটরা বিমানে থাকা স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে আকাশেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। আগুনে বিমানটির ভেতরে ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রুমে খবর দেয়া হয়। এ খবরে পুরো বিমানবন্দরে রেড-অ্যালার্ট জারি করা হয়। রানওয়েতে নেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলোকে। অ্যাম্বুলেন্সসহ যাবতীয় উদ্ধারকারী দলকে প্রস্তুত রাখা হয়। ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমেও খবর দেয়া হয়।
২২১ আসনের বিমানটিতে যাত্রী ছিলেন মোট ২০৬ জন। বাকিরা পাইলট ও কেবিন ক্রু।সংশ্লিষ্টরা জানান, বিমানের তেল না ফেলা হলে অবতরণের সময় বিমানটি বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কা ছিল।