সুচির সম্মাননা স্থগিত বৃটেনে, কেড়ে নেয়ার কথা ভাবছে অনেকে
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃমানবিক সঙ্কট নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে অং সান সুচিকে দেয়া সম্মাননা স্থগিত করেছে বৃটেনের বৃহৎ একটি ট্রেড ইউনিয়ন। এর নাম ইউনিয়নস। শুধু তা-ই নয়, বৃটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান সুচিকে যে সম্মানসূচক পুরস্কার বা পদ দিয়েছিল তাও কেড়ে নেয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান এ বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। ইউনিয়নসের সভাপতি মারগারেট ম্যাকি বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা মর্মান্তিক পরিস্থিতির মুখোমুখি। ইউনিয়নসে অং সান সুচির যে সম্মানসূচক সদস্যপদ ছিল তা স্থগিত করা হচ্ছে। আমরা আমা করছি, তিনি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সাড়া দেবেন। এ খবর দিয়েছে বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়, এক সময়ের রাজনৈতিক বন্দি, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচিকে সম্মাননা জানিয়ে যে পদ দেয়া হয়েছিল তা স্থগিত করেছে বৃটেনের সবচেয়ে বড় শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর অন্যতম ইউনিয়নস। এর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়া স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক চাপ তো বাড়ছেই। সামরিক জান্তার নিষ্পেষণে তাকা অবস্থায় অং সান সুচি গণতন্ত্রের জন্য যে লড়াই করেছিলেন সে জন্য তাকে সম্মানসূচক পদ দেয় বৃটিশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রোহিঙ্গা নির্যাতনের পরে বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার পর সুচিকে দেয়া সেই সম্মাননা স্থগিত করা বা বাতিল করার বিষয় বিবেচনা করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। গার্ডিয়ান লিখেছে, বৃটেনের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ট্রেড ইউনিয়নের নাম ইউনিয়নস। তারা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে সুচির সম্মানসূচক সদস্যপদ স্থগিতের। সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগের নিন্দা জানাতে অং সান সুচির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। বিরোধী দলে অর্থাৎ সরকারের বাইরে থাকাকালে সুচিকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দিয়েছিল ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি। বৃটেনের অনেকগুলো ভাল ইউনিভার্সিটির অন্যতম এটি। তারা বলেছে, জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতাকে জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এর প্রেক্ষিতে তারা সুচিকে দেয়া ওই সম্মাননার বিষয়ে রিভিউ করছে। ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির এক মুখপাত্র বলেছেন, মিয়ানমারে চলমান পরিস্থিতিতে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের সঙ্গে অভিন্ন অবস্থানে এই বিশ্ববিদ্যালয়। ওই মুখপাত্র আরো বলেছেন, অং সান সুচি মিয়ানমারে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এ জন্য ১৯৯৮ সালে তাকে এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডিগ্রি ডক্টর অব ল’স প্রদান করে। কিন্তু এই সম্মাননা এখন কেড়ে নেয়ার মতো কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে ভুল। তবে আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখবো। প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা পরিস্থিতি রিভিউ করবো। এ ছাড়া সুচিকে সম্মানসূচক প্রেসিডেন্সি পদক দিয়েছিল দ্য লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের ছাত্র ইউনিয়ন। তারা বলেছে, তারাও ওই সম্মাননা কেড়ে নিতে পারে। ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতির পাশা বলেন, বর্তমানে যে গণহত্যা চলছে এবং তাতে সুচির নিষ্ক্রিয়তার মাধ্যমে তিনি আমাদের বিরোধী প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। তাই আমরা অং সান সুচিকে দেয়া সম্মানসূচক প্রেসিডেন্সি খেতাক কার্যকরভাবে প্রত্যাহার করে নেবো। গত প্রায় ৩০ বছর ধরে অং সান সুচিকে বৃটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডিগ্রি দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো গ্লাসগো, বাথ ও কেমব্রিজ। অক্সফোর্ডের কাউন্সিলররা ঘোষণা দিয়েছেন, তারা ১৯৯৭ সালে অং সান সুচিকে ‘ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব অক্সফোর্ড’ খেতাব দিয়েছিলেন। তারাও তাকে দেয়া এই সম্মাননার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। এ বিষয়ে আগামী মাসে কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। অক্সফোর্ড কাউন্সিলের পরিচালনা পরিষদের সদস্য জন ট্যানার বলেছেন, যদি কোনো পরিবর্তন না-ই ঘটে, আমি মনে করি, তার ওই পদক কেড়ে নেয়াই হবে। এ জন্য আমরা অবশ্য অনুশোচনা করি। কিন্তু তিনি এখন পাল্টে গেছেন। ফলে তাকে সমর্থন দেয়ার যেসব কারণ ছিল তার সবই বদলে গেছে।