‘সেনা অভিযান বন্ধ করুন’
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃমিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণের জবাবে অবিলম্বে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য আবারো আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরাঁ। এ ছাড়া সারা বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। গুঁতেরার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বুহারি সহ অনেক রাষ্ট্রপ্রধান। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে শিক্ষামুলক যে প্রশিক্ষণ দেয় বৃটেন তা স্থগিত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে বলা হয়, সুচির মঙ্গলবারের দেয়া বক্তব্যের আগে যেমন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল তার, পরেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণ রাখেন অ্যান্টনিও গুতেরাঁ। এ সময় তিনি বলেন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশন তাদের রিপোর্টে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার যে সুপারিশ করেছিলেন তা মেনে চলার বিষয়ে সুচি যে কথা বলেছেন সে বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। তিনি বলেন, তবে আমি আরো পরিষ্কার করে বলতে চাই, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে অনুমতি দিতে হবে। উল্লেখ্য ২৫ শে আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর কমপক্ষে চার লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানকার নৃশংসতাকে জাতিসংঘ জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে জাতিসংঘের অধিবেশনে গুতেরাঁ এসব বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন,ম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নাটকীয়তার সঙ্গে যে জাতিগত উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে তাতে আমরা সবাই হতাশাগ্রস্ত। এর আগে এক সাক্ষাতকারে তিনি অং সান সুচিকে শেষ সুযোগ দিয়েছিলেন। বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে তিনি যেন মুখে খোলেন এবং দলে দলে মানুষের দেশত্যাগ বন্ধ করেন। তা না হলে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। ওদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন জাতিসংঘে প্রথম বক্তব্য রাখেন। এতে তিনি রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্মমতার বর্ণনা দেন। তিনি অবিলম্বে সেখানে সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, আমরা জানি রাখাইনে জাতি নিধন চলছে। সেখানে অবশ্যই সেনা অভিযান বন্ধ করতে হবে। মানবিক সহায়তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। আইন শৃংখলা ফেরাতে হবে। ওদিকে রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে লন্ডন। প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে নিউ ইয়র্কে স্কাই নিউজকে বলেছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সামরিক অভিযান বন্ধ হতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে বৃটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকবে। ওদিকে লন্ডনে সরকারের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতার প্রেক্ষিতে, ক্রমবর্ধমান মানবিক সঙ্কট যা ঘটছে এবং ঘটমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে আমাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে। এ কারণে মিয়ানমারে বর্তমান পরিস্থিতির যতক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য সমাধান না হবে ততদিন পর্যন্ত মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে শিক্ষামুলক প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকবে। রাখাইনে সহিংসতা বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সব সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মানবিক সহায়তা দেয়ার পূর্ণাঙ্গ সুবিধা দিতে হবে। (জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান নেতৃত্বাধীন) রাখাইন এডভাইজরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। বৃটেনের পররাষ্ট্র বিষয়ক জুনিয়র মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন ভোকেশনাল কোর্স, ভাষা প্রশিক্ষণ, সুশাসন, জবাবদিহিতা, জাতিগত, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে বৃটেন। তবে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় না। ওদিকে মিয়ানমারকে দেয়া এসব প্রশিক্ষণ বন্ধ করতে গত ৬ই সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনকে চিঠি লিখেছেন বৃটিশ পার্লামেন্টের প্রায় দেড়শ সদস্য। জাতিসংঘের অধিবেশনে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বুহারি মিয়ানমারে জাতি নিধনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে নিন্দা জানাতে আহ্বান অন্য নেতাদের প্রতি। তবে মিয়ানমারকে সমর্থন করছে চীন। তারা রাখাইন সমস্যাকে দেখছে মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে। ওদিকে সোমবার জাতিসংঘে মহাসচিব গুতেরাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনি এ সময় বলেছেন, আলোচনা ও শলাপরামর্শের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে পরামর্শ দেয়ার কথা বলেছেন। ওয়াং এ সময় বলেন, যারা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের প্রতি চীনের সহানুভুতি আছে। তারা বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা পাঠাবে।