খালেদা জিয়ার সফরের পেছনে ‘নির্বাচনী ভাবনা’
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারের পথে রয়েছেন।
শনিবার সকালে যাত্রা শুরু করার পর থেকে তিনি পথে বিভিন্ন স্থানে গাড়িবহর থামিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীদের সাথে কথাবার্তা বলছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কিছু নেতৃবৃন্দ বলছেন, বিএনপি রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফরকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সড়ক পথে এই যাত্রার মাধ্যমে বিএনপি নেত্রী মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন।
সকাল সাড়ে দশটার দিকে গাড়ি বহর নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
ফেনীতে যাত্রা বিরতি করেছেন। আজ রাতে থাকার কথা রয়েছে চট্টগ্রামে। ফেনীতে ঢোকার মুখে তার গাড়িবহরের ওপর হামলায় চালানো হয়েছে। এসময় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
বিএনপি অভিযোগ করেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে এই হামলা চালিয়েছে। তবে সরকারি দলটি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
রবিবার তিনি কক্সবাজার পৌঁছবেন বলে কথা রয়েছে। সেখানেও রাতে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে তার। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খালেদা জিয়ার যাওয়ার কথা পরশু অর্থাৎ সোমবার।
গাড়ি বহর নিয়ে যাওয়ার পথে নানা জায়গায় নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন তাকে স্বাগত জানাতে। খালেদা জিয়া তখন গাড়ি থামিয়ে তাদের সাথে কথাবার্তাও বলেছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কিছু নেতা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফরকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলছেন, “বেগম খালেদা জিয়ার আজকের যে কর্মসূচী তা দেখে মনেই হয় তিনি জনসংযোগে নেমেছেন। কারণ এখান থেকে কক্সবাজার যেতে খুব বেশি হলে আট থেকে নয় ঘণ্টা লাগে। কিন্তু তিনি সারা রাস্তায় গণসংযোগ করতে করতে যাচ্ছেন।”
কক্সবাজারে পৌঁছানোর পর বিএনপি নেত্রী রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলছেন, সেটিই মুল উদ্দেশ্য। কিন্তু যাত্রাপথে জনসংযোগ রাজনীতিরই একটি অংশ, বলছিলেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেছেন, “রাস্তায় যেটা হচ্ছে, স্বাভাবিক ভাবে নেত্রী যাওয়ার সময় নেতাকর্মীরা সবাইতো ওনাকে একটু দেখতে চান। খালেদা জিয়াতো সারা দেশব্যাপী জনপ্রিয় নেত্রী। উনি একজন রাজনীতিবিদ। যাত্রাপথে লোকজনের সাথে জনসংযোগ করা রাজনীতিরই একটি অংশ।”
এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে নির্বাচন কমিশনের ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে বিএনপি আগামী নির্বাচন সম্পর্কে তাদের কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছে।
তার মধ্যে ছিলো বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে, একটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে নির্বাচন আয়োজন করা। সেই নির্বাচনের হাওয়া ইতিমধ্যেই লেগেছে। বিএনপি সামনে তার দাবি পূরণে বড় কোন আন্দোলনের ঘোষণা না দিলেও কক্সবাজারে যাওয়ার এই যাত্রাটি বিএনপির জন্য জনসংযোগের একটি বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, বলছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক এবং বিএনপির রাজনীতির একজন পর্যবেক্ষক আমানুল্লাহ কবির।
তিনি বলেন, “একটা জিনিস মনে রাখতেই হবে আমাদের, যে যত যাই বলুক এটা নিয়ে রাজনীতি করা যাবে না বা ওটা নিয়ে রাজনীতি করা যাবে, রাজনীতি কিন্তু সবখানে থেকেই যাচ্ছে। সামনে একটা নির্বাচন। তার একটা আবহ কিন্তু ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। এই যে তিনি গেলেন, এই যে দীর্ঘ রাস্তায় লোক জড়ো হবে এটাও কিন্তু সংগঠনের একটা কাজ। আর যাওয়ার পথে লোকজনের সাথে তার সাক্ষাৎও হবে।”
আমানুল্লাহ কবির আরো বলছিলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এই যাত্রাটি মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও সক্রিয় করার একটি চেষ্টা। মঙ্গলবার ঢাকায় ফেরার পথে চট্টগ্রামে আরো একরাত থাকার কথা রয়েছে খালেদা জিয়ার। অনেকদিন তাকে এরকম গাড়ি বহর নিয়ে দেশের ভেতরে কোথাও কোন জনসংযোগে দেখা যায়নি।