শীর্ষ ব্যক্তিদের বাসভবনে বিমান হামলার ছক

Spread the love

gggবাংলা সংলাপ ডেস্কঃনাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের একজন পাইলটসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। র‌্যাবের দাবি তারা সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের বাসভবনে বিমান নিয়ে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। তারা মিরপুরের দারুসসালাম এলাকায় গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর একটি বাড়িতে অভিযানে নিহত জঙ্গি আব্দুল্লাহর সহযোগী এবং জেএমবি সদস্য। সোমবার রাতে রাজধানীর মিরপুরের দারুসসালাম এলাকা থেকে বাংলাদেশ বিমানের ফার্স্ট অফিসার সাব্বির এমাম সাব্বির, তার মা সুলতানা পারভীন, মো. আরিফুর রহমান আসিফ ও মো. আলম নামের ৪ জনকে আটক করা হয়। গতকাল বিকালে রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং প্রধান মুফতি মাহমুদ খান এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, সাব্বির এমাম সাব্বিরের মতো একজন দুর্ধর্ষ ব্যক্তি বাংলাদেশ বিমানের মতো সংবেদনশীল স্থানে চাকরিরত ছিলেন। এ ধরনের একজন উগ্রবাদী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব ভবিষ্যতের আরো একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে দেশকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে।

র‌্যাবের দাবি, সাব্বির ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি হতে বিমান চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত রিজেন্ট এয়ারওয়েজে চাকরি করেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি স্পেন থেকে বিমান চালনায় বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১৪ সাল থেকে অদ্যাবধি সাব্বির বাংলাদেশ বিমানের পাইলট হিসেবে চাকরিরত ছিলেন। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, সাব্বির বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং-৭৩৭ পরিচালনা করে থাকেন। সবশেষ তিনি গত সোমবার (৩০শে অক্টোবর) ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা (১৯:৫০-২৩:০০) ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। সাব্বির তুরস্ক থেকেও বিমান চালনার উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং প্রধান বলেন, সাব্বির দুবাই, কাতার, মাসকাট, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ছাড়াও আরো অনেক দেশে বাংলাদেশ বিমানের পাইলট হিসেবে কাজ করেছেন। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, নিহত জঙ্গি আবদুল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল সাব্বিরের। এ ছাড়া সাব্বির জঙ্গি সারোয়ার জাহানের কাছ থেকে বয়াত গ্রহণ করেন। গুলশান হামলার আগে ও পরে নিহত জঙ্গি আবদুল্লাহ, সাব্বির ও সারোয়ার জাহান একত্রে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। সবশেষ পরিকল্পনা হিসেবে সাব্বির বিমান চালিয়ে সরকারের শীর্ষপর্যায়ের ব্যক্তির বাসভবনে আঘাত করা অথবা বিমানযাত্রীদের জিম্মি করে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করে। এমনকি সাব্বির জঙ্গি নেতা আবদুল্লাহকে এমন কথাও দিয়েছিল যে, চাকরির ভাতা বাবদ সে ১০ লাখ টাকা পাবে- তা সংগঠনে দান করে দেবে। র‌্যাব জানায়, গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর থেকে ৮ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিরপুর দারুসসালাম এলাকায় কমলপ্রভা নামের বাড়ির পঞ্চম তলায় জঙ্গি আস্তানায় র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করে। ওই অভিযানে নিজেদের বোমার বিস্ফোরণে জেএমবির সদস্য মীর আকরামুল করিম আবদুল্লাহ, তার দুই স্ত্রী, দুই ছেলে এবং তার দুই সহযোগী নিহত হয়। এ ঘটনার পরও আব্দুল্লাহর অন্যান্য সহযোগী সক্রিয় ছিল। বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে র‌্যাবের গোয়েন্দা দল ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৬শে অক্টোবর র‌্যাব-৪ এর অভিযানে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লাহ থেকে আব্দুল্লাহর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী জেএমবি সদস্য মো. বিল্লাল হোসেন (২৩) কে গ্রেপ্তার করে। পরে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরবর্তী সময়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতায় আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ঘাটিত হয়। সামগ্রিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে র‌্যাব-৪ এর এক দল সোমবার রাত ২টা থেকে গতকাল সকাল ১১টা পর্যন্ত মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিমানের পাইলটসহ ৪ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। প্রশ্নোত্তর পর্বে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, বিমানের পাইলট সাব্বির গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিমান চালিয়ে রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির বাসভবনে হামলা পরিকল্পনা বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করেছে। এও স্বীকার করেছে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সে এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান রেকি করেছে। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যানবাহন নিয়ে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকতে পারে। নিহত জঙ্গি আব্দুল্লাহ ও সাব্বির তাদের সহযোগীদের দেশে গাড়ি হামলা চালানোর জন্য এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। আর বিমান হামলার বিষয়ে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই র‌্যাব স্পর্শকাতর এই তথ্যটি প্রকাশ করছে।


Spread the love

Leave a Reply