প্রীতি প্যাটেলের বিপদ ডেকে আনল ইসরায়েলই
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অননুমোদিত বৈঠক করার জেরে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলকে ইস্তফা দিতে হয়েছে – যার ফলে এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার মন্ত্রিসভায় রদবদল করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে।
মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার সময় প্রীতি প্যাটেল, যিনি বিদেশে ব্রিটেনের আর্থিক সহায়তা বরাদ্দের ভারপ্রাপ্ত ছিলেন, স্বীকার করেছেন যে তার কাজকর্মে ‘স্বচ্ছ্বতার অভাব’ ছিল।
গত সপ্তাহে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে মাইকেল ফ্যালোন পদত্যাগ করার মাত্র সাতদিনের মধ্যে প্রীতি প্যাটেল হলেন দ্বিতীয় ক্যাবিনেট মন্ত্রী, যাকে ইস্তফা দিতে হল।
কিন্তু যে প্রীতি প্যাটেলকে ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ পার্টিতে একজন অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল ও উদীয়মান রাজনীতিক হিসেবে দেখা হচ্ছিল, কেন তাকে এরকম একটা বিব্রতকর অবস্থায় সরে দাঁড়াতে হল?
প্রীতি প্যাটেলের এই সমস্যার শুরু গত সপ্তাহে, যখন বিবিসি এ খবর প্রকাশ করে যে গত আগস্ট মাসে ইসরায়েলে ‘পারিবারিক ছুটি’ কাটাতে গিয়ে তিনি সে দেশের বাণিজ্য ও রাজনীতি জগতের নানা ব্যক্তিত্বের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
তিনি ওই সফরে সে দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও দেখা করেন, যে সব বৈঠকে সরকারি কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয় বলে জানা যাচ্ছে।
তার এই আচরণ ছিল নিয়মবিরুদ্ধ, কারণ ব্রিটেনে মন্ত্রীরা যদি কোনও বৈঠকে সরকারি কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করতে চান তাহলে তাকে সেটা সরকারকে আগাম জানাতে হয়।
পরে আরও জানা যায় যে ইসরায়েল সফরের সময় তিনি নিজের মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এটাও দেখতে বলেছিলেন যে অধিকৃত গোলান মালভূমি এলাকায় ইসরায়েলি সেনারা যে সব মানবিক অভিযান চালিয়ে থাকে – তাতে ব্রিটেন সহায়তা করতে পারে কি না।
ব্রিটেনে সরকারি কর্মকর্তাদের মতে এই প্রস্তাব ছিল ‘অনৈতিক’, কারণ বিশ্বের আরও প্রায় সব দেশের মতোই ব্রিটেনও গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দেয় না – যে ভূখন্ডটি ১৯৬৭র যুদ্ধে তারা সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করে নিয়েছিল।
এ কারণেই সোমবার ৪৫ বছর বয়সী মিস প্যাটেল, যিনি ২০১০ সাল থেকে এসেক্সের উইথ্যাম আসনের এমপি, ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়।
প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে তখন তার ক্ষমাপ্রার্থনা মেনে নিলে ধারণা করা হয়েছিল মিস প্যাটেলের চাকরি আপাতত টিঁকে যাচ্ছে। কিন্তু প্রীতি প্যাটেলের ইসরায়েল সংযোগের ব্যাপারে নতুন আরও নানা তথ্য সামনে বেরিয়ে আসে গতকাল বুধবার।
জানা যায়, কোনও সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ছাড়াই তিনি ওয়েস্টমিনস্টারের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনে ইসরায়েলের জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী গিলাদ এরদানের সঙ্গে সেপ্টেম্বরের গোড়ায় দেখা করেছিলেন।
তা ছাড়া একই ভাবে কর্মকর্তাদের অন্ধকারে রেখে নিউ ইয়র্কে গিয়ে তিনি বৈঠক করেছিলেন ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ইয়ুভাল রোটেমের সঙ্গেও।
এই খবর ফাঁস হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আফ্রিকার উগান্ডাতে তার সরকারি সফর কাটছাঁট করে প্রীতি প্যাটেল দেশে ফেরার বিমান ধরেন।
‘ফ্লাইটরাডার টোয়েন্টি ফোর’ টুইট করে বুধবার রাতে একটা সময় জানায়, কেনিয়া ওয়ারওয়েজের যে বিমানে প্রীতি প্যাটেল লন্ডন ফিরছিলেন, বাইশ হাজারেরও বেশি মানুষ সেই বিমানটি ট্র্যাক করছেন!
পরে রাতে মিস প্যাটেলের পদত্যাগের ঘোষণার মধ্যে দিয়েই শেষ হয় সারাদিন ধরে চলা জল্পনার।
ব্রিটিশ-গুজরাটি পরিবারের মেয়ে প্রীতি প্যাটেল ছিলেন টোরি মন্ত্রিসভায় প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মন্ত্রী।
কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতাই শেষ পর্যন্ত তার রাজনৈতিক কেরিয়ারে বিপদ ডেকে আনল।