ট্রাম্পের বিপদঃ আটকে গেছে প্রশাসন
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃপ্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পূর্তিতে কঠিন এক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র। একদিকে রয়েছে তার গৃহীত বিভিন্ন বিতর্কিত পদক্ষেপ । অন্যদিকে এখন সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি নতুন বাজেট নিয়ে সিনেটররা একমত হতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস বলেছেন, এ অবস্থায় তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড শতকরা ৫০ ভাগই বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া কিছু রক্ষণাবেক্ষণ, প্রশিক্ষণ, গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়বে।
এ অবস্থায় করণীয় কি তা নিয়ে জোর তৎপরতা চলছে। এ ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রতিনিধি পরিষদ, সিনেট এবং হোয়াইট হাউস রয়েছে রিপাবলিকান দলের নিয়ন্ত্রণে। এটাই এমন কোনো সরকারের জন্য প্রথম। তবে এ জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ডেমোক্রেটদের দায়ী করেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস। মধ্যরাতের সামান্য আগে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স বলেছেন, শুক্রবার রাতে তারা (ডেমোক্রেট) জাতীয় নিরাপত্তা, সেনা পরিবার, বিপন্ন শিশু এবং সব মার্কিনিকে আমাদের সেবা দেয়ার সক্ষমতার ঊর্ধ্বে রেখেছেন রাজনীতিকে। আমরা অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে কোনো সমঝোতা করবো না। অন্যদিকে তাদের অযৌক্তিক দাবির জন্য আমাদের বৈধ নাগরিকদের জিম্মি করেছে ডেমোক্রেটরা। পরাজিতদের বাধা সৃষ্টির এমনই আচরণ। এ আচরণ কোনো রাজনীতিকের হতে পারে না। আগামী ১৬ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের বাজেট বাড়ানো নিয়ে বিলটি সিনেটে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। বিলটি স্থানীয় সময় শুক্রবার মধ্যরাতে সিনেটে ভোটে দেয়া হয়। পাস হতে প্রয়োজন ৬০টি ভোট। কিন্তু পক্ষে বা বিপক্ষে কত ভোট পড়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানাতে পারে নি সিএনএন। তবে তারা বলছে, বিলটিকে আটকে দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সিনেটর ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ১৬ মিনিটে সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককনেল ভোটের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। কিন্তু সিএনএন যা বলছে, তাতে বিলটি পাস হয় নি। ফলে সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককনেল ও সিনেট সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার সমস্যা উত্তরণের পথ খুঁজতে সিনেট চেম্বারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানকার সূত্র উল্লেখ করে সিএনএন বলছে, আলোচনা চলছে। কিন্তু সেখানে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। বিলটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ বৃহস্পতিবার রাতে ২৩০-১৯৭ ভোটে পাস করে। ওদিকে মধ্যরাতের পর সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও চালু থাকবে অত্যাবশ্যকীয় সেবাখাতগুলো। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা, পোস্ট, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর মেডিকেল সেবা, দুর্যোগ সহায়তা, কারাগার, আয়কর ও বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত। বন্ধ হয়ে যাবে জাতীয় পার্ক ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো। এর আগে এমন পরিস্থিতিতে ব্যাপক জনক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। তবে ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইটে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি ডেমোক্রেট সিনেট নেতা চাক শুমারকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে সংকট উত্তরণের পথ খোঁজার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তারা অভিন্ন সমাধানে আসতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর এক ঘণ্টা পরে চাক শুমার সাংবাদিকদের বলেছেন, কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তবে অনেক বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। এর আগে একই পরিণতি হয়েছিল ২০১৩ সালে এবং তা স্থায়ী হয়েছিল ১৬ দিন। এবার বিলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে রিপাবলিকান ও ডেমক্রেট সিনেটরদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। এ কারণে বিলটি ভোটে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেটরদের নেতা মিচ ম্যাককনেল।
যা যা ঘটতে পারে
চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতি
সোমবার কাজে যোগ দেবে না হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী। তারা সাময়িক ছুটিতে থাকবেন। অপ্রয়োজনীয় ধরা হবে, এমন এজেন্সি ও দপ্তরগুলোতে নিয়োজিত সকল কর্মচারী কাজ থেকে অব্যাহতি নেবে। আর এই অব্যাহতি ততদিন পর্যন্ত চলতে থাকবে যতদিন না কংগ্রেস নতুন বাজেট পাস করা নিয়ে একমত হতে পারবেন। পূর্বে এমন অবস্থায় কাজ থেকে বাধ্যগতভাবে বাড়িতে অবস্থানকারী কর্মচারীদের পরবর্তীতে ওই সময়ের জন্য অর্থ পরিশোধ করা হয়েছিল। তবে এবার তেমনটা করা হবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে একবার বর্তমানের মতো অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তখন প্রতিদিন গড়ে চাকরি থেকে সাময়িক ছুটিতে ছিলেন প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার কর্মচারী।
হোয়াইট হাউস
হোয়াইট হাউস শুক্রবার জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের নির্বাহী কার্যালয়ের ১ হাজার ৫৬ জন কর্মচারীকে সাময়িকভাবে কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে। অন্যদিকে, কর্মরত থাকবেন অত্যাবশ্যক ৬৫৯ জন কর্মচারী। তবে সাময়িক অব্যাহতিতে থাকা কর্মচারীরা সোমবার থেকে পুনরায় কাজে যোগ দিতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সামরিক বাহিনী
সামরিক বাহিনীকে একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধরা হয়। তাই এর সদস্যরা সাময়িক অব্যাহতিতে যাবেন না, প্রতিদিনের মতোই কাজে নিয়োজিত থাকবেন। তবে, যারা বর্তমানে যুদ্ধে লড়ছেন তারাসহ সকল সেনাকে অচলাবস্থা চলাকালীন সময় কোনো বেতন দেয়া হবে না। এছাড়া, এই অচলাবস্থা যদি কয়েক সপ্তাহ ধরে চলে তাহলে প্রায় ১৩ লাখ সামরিক কর্মচারীর ওই সময়টুকুতে কোনো বেতন ছাড়াই কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
সেপশাল কাউন্সেল
বিচার মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সিএনএন’কে জানিয়েছেন, সেপশাল কাউন্সেল রবার্ট মুয়েলার ও তার টিম অচলাবস্থায়ও রাশিয়া তদন্তের কাজ চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, সেপশাল কাউন্সেলের কার্যালয়ের সকল কর্মচারীকে বাধ্যগত অব্যাহতি থেকে রেহাই দেয়া হচ্ছে। তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাবে।
জাতীয় উদ্যানসমূহ ও বন্দুক কেনার অনুমতি
দেশজুড়ে বেশকিছু জাতীয় উদ্যান, চিড়িয়াখানা, জাদুঘর বন্ধ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি অ্যালকোহল, তামাক, বন্দুক, বিস্ফোরক সমপর্কিত ব্যুরোও বন্ধ থাকবে। অন্য কথায়, কেউ এই সময়ের মধ্যে বন্দুক কিনতে পারবে না।