করবিনের কাছে ক্ষমা চাইলেন সরকার-দলীয় এমপি

Spread the love

korbinবাংলা সংলাপ ডেস্কঃ জেরেমি করবিনের বিরুদ্ধে করা মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির এমপি বেন ব্রাডলি। বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনকে বিদেশি গুপ্তচর দাবি করে টুইট করেছিলেন তিনি। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকির জেরে নিজের দাবি মিথ্যা ও লেবার নেতার প্রতি মানহানিকর বলে মুচলেকা দিয়েছেন এই এমপি। এ ঘটনা বলা চলে দেশটিতে নজিরবিহীন।

ভবিষ্যতে এমন মন্তব্য আর না করারও অঙ্গীকার আছে ওই মুচলেকায়। সেই সঙ্গে জেরেমি করবিনের পছন্দের দুটি দাতব্য সংস্থায় বড় অঙ্কের অর্থদানে সম্মত হয়েছেন ব্রাডলি। অর্থের পরিমাণ প্রকাশ করা হয়নি।

এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বাম ঘরানার নীতিনিষ্ঠ রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত জেরেমি করবিনের বিরুদ্ধে ডানপন্থী গণমাধ্যম এবং সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের অব্যাহত অপপ্রচার বড় ধরনের ধাক্কা খেল। কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি এমন গুরুতর অভিযোগ তোলার কারণে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নৈতিকতা।

আইনি ব্যবস্থার প্রাথমিক ধাপেই ক্ষমতাসীন-দলীয় এমপির মুচলেকা পেয়ে আত্মবিশ্বাসী লেবার পার্টি। অনেকটা উজ্জীবিতও। তারা অন্যদেরও আইনিভাবে মোকাবিলা করে অপপ্রচারকারীদের শেষ দেখে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে।

১৯৮০-র দশকের উত্তাল স্নায়ুযুদ্ধের সময় জেরেমি করবিন কমিউনিস্ট গুপ্তচরদের কাছে যুক্তরাজ্যের গোপন তথ্য পাচার করতেন—এমন দাবি করে সংবাদ প্রচার করে দেশটির কয়েকটি ডানপন্থী পত্রিকা। যার ধারাবাহিকতায় মেন্সফিল্ড থেকে নির্বাচিত এমপি বেন ব্রাডলি গত সোমবার এক টুইট বার্তায় দাবি করেন, ‘করবিন রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য বিক্রি করেছেন’। অবশ্য প্রমাণবিহীন এমন দাবির পরিণতির কথা আঁচ করতে পেরে পরক্ষণেই তিনি তা মুছে দেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।

করবিনের আইনজীবীর নোটিশের জেরে গতকাল শনিবার মুচলেকা দিতে বাধ্য হন ব্রাডলি। করবিনের প্রতি ক্ষমা প্রার্থনা ও নিজের ভুল শিকারের পাশাপাশি করবিনের পছন্দের দুটি চ্যারিটিতে অর্থ দেওয়ার মুচলেকা তিনি নিজের টুইটে প্রচার করতে বাধ্য হন।

যুক্তরাজ্যের ডানপন্থী সংবাদপত্র ডেইলি মেইল, দ্য সান, টেলিগ্রাফ এবং দ্য এক্সপ্রেস লেবার নেতা করবিনের বিরুদ্ধে বরাবরই নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করে। রক্ষণশীল দলের সমর্থক হিসেবে পরিচিত এসব সংবাদপত্র সপ্তাহ দুয়েক ধরে লেবার নেতা করবিন ‘চেকোস্লোভাকিয়ার গুপ্তচর’ ছিলেন দাবি করে সংবাদ প্রচার করছে।

এসব সংবাদে দাবি করা হয়, ১৯৮৬ ও ১৯৮৭ সালে করবিন তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রদূত জেন সারকোজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে ব্রিটিশ সরকার পরবর্তী সময়ে সারকোজিকে বহিষ্কার করেছিল। বহিষ্কৃত ওই রাষ্ট্রদূতের বরাত দিয়ে পত্রিকাগুলো বলছে, তথ্যের বিনিময়ে করবিন ও লেবার পার্টির কয়েকজন এমপিকে ১০ হাজার পাউন্ড দেওয়া হয়েছিল।

বিবিসির খবরে বলা হয়, চেকোস্লোভাকিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সারকোজিকে একজন মিথ্যাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, করবিন তাঁদের কাছে প্রিয় ছিলেন। কিন্তু করবিন কখনো গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেছেন—এমন তথ্য তাঁদের কাছে নেই।

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ অস্বীকার করেন করবিন। ১৯৮৬ সালে সারকোজির সঙ্গে বৈঠকের দাবির বিষয়ে একমত পোষণ করেন তিনি। কিন্তু ১৯৮৭ সালের ২৪ অক্টোবর ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্টে দ্বিতীয় বৈঠকের দাবি অস্বীকার করেন। কারণ, ওই দিন তিনি লন্ডনেই ছিলেন না। ছিলেন ডার্বিশায়ার এলাকায়। তার আগের দিন করবিনের মা মারা গিয়েছিলেন বলে দিনটি তাঁর স্পষ্ট স্মরণে আছে।

সর্বশেষ গতকাল ডানপন্থী গণমাধ্যমগুলোকে পাল্টা আক্রমণ করে এক ভিডিও বার্তা ছাড়েন করবিন। করবিন বলেন, সারকোজির সঙ্গে তখনকার কনজারভেটিভ-দলীয় প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারও সাক্ষাৎ করেছিলেন। তিনি বলেন, অপপ্রচারে লিপ্ত সংবাদমাধ্যমগুলো তাঁর ক্ষমতাসীন হওয়ার বিষয়ে চরমভাবে ভীত। কারণ, তিনি এসব সংবাদপত্রের কর ফাঁকিবাজ মালিকদের কাছ থেকে ন্যায্য আয়কর নিশ্চিত করবেন। সংবাদপত্রগুলো এর মালিকদের কাছে জিম্মি উল্লেখ করে করবিন বলেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি গণমাধ্যমের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করবেন।

প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী করবিনের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী গেভিন উইলিয়ামসন চেক গোয়েন্দার সঙ্গে করবিনের বৈঠককে ‘দেশের সঙ্গে বেইমানি’ বলে আখ্যায়িত করেন। নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেন ওয়ালেস রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে অভিযুক্ত কিম ফিলবির সঙ্গে করবিনকে তুলনা করেন।

বেন ব্রাডলির ক্ষমতা প্রার্থনার পর কনজারভেটিভ পার্টি এখন চরম চাপের মুখে। রাজনীতিক ভাষ্যকারেরা বলছেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের দায়িত্বহীন মন্তব্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। বিরোধী দলের প্রতি ক্ষমতাসীনদের এমন আচরণ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য বিপজ্জনক।

বাম ঘরানার রাজনীতিক জেরেমি করবিন নিজ দলের প্রভাবশালী এমপি ও বিরোধীদের নানা নেতিবাচক প্রচারণার বিরুদ্ধে লড়াই করে নেতৃত্বে টিকে আছেন। বিনা মূল্যে চিকিৎসা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অবৈতনিক উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। পরিবহন, পানি ও বিদ্যুতের মতো জরুরি সেবাগুলোর খরচ সাধারণের মানুষের নাগালে রাখতে এগুলোকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন। দেশটাকে মুষ্টিমেয় ধনীর নয়, লাখ লাখ সাধারণ মানুষের জন্য বাসযোগ্য করে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তাঁর এসব প্রতিশ্রুতিতে পুঁজিপতিরা বেজায় উৎকণ্ঠিত। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে করবিনের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে।

করবিনের প্রতিশ্রুতিগুলোর সমালোচনা সহজ নয়। তাই তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণে ব্যস্ত বিরোধীরা।


Spread the love

Leave a Reply