মেক্সিকোতে উল্লাস
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃঅকস্মাৎ যেন ভয়াবহ এক ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো মেক্সিকো। মানুষ যে যা পরা ছিল সেভাবেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো। না, তাদের চোখেমুখে হতাশা নেই। ভয় নেই। তারা আনন্দে ঘর ছেড়ে রাস্তায়। রংবেরংয়ে ছেয়ে গেল পুরো মেক্সিকো।তাদের উল্লাসে, আনন্দের কান্নায় যেন সত্যি সত্যি কেঁপেছে মাটি। ভূমিকম্প নির্ণয়কারী ডিটেক্টরও হয়তো বুঝতে পেরেছে তা। বিশ্বকাপ ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন দল জার্মানিকে হারানোর পর এমনই এক উন্মাদনায় মেতে ওঠে মেক্সিকো। রোববার জার্মানিকে তারা হারানোর পর এমন উন্মাদনার কথা লিখেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে তুলে ধরা হয়েছে মেক্সিকানদের ফুটবলের প্রতি ভালবাসা আর অবিশ্বাস্য পারফরমেন্সের কথা। মেক্সিকার দীর্ঘ পতাকা ছেড়ে গেছে দেশ। বাতাসে দোল খাচ্ছে তা। মেক্সিকান সিটির ডাউনটাউনে আইকনিক অ্যানজেল অব ইন্ডিপেন্ডেন্স ভাস্কর্য্যরে মাথায় পরিয়ে দেয়া হয়েছে ‘সোমব্রেরো’ লেখা হ্যাট। দেশের অনানুষ্ঠানিক ফুটবল সঙ্গীত গাইছেন সমবেত সুরে মানুষ। তারা গাইছেন ‘সেইলিতো লিন্ডো’ অথবা অতি জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত ‘প্রিটি লিটল স্কাই’। একটি ক্যাথেড্রালের সুউচ্চ টাওয়ারের সামনে বসানো হয়েছে জায়ান্ট স্ক্রিন। এটি মেক্সিকো সিটির সবচেয়ে বড় স্কয়ার। এখানে বসানো ওই স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে মেক্সিকান ফুটবলের জার্সিগুলো। মানুষ তা দেখছে। আনন্দে উদ্বেলিত হচ্ছে। কখনো বা চোখ থেকেই নিজের অজান্তে ঝর ঝর ঝরে পড়ছে অশ্রু। খেলা শুরুর ৩৫তম মিনিটে তারকা খেলোয়াড় হারভিং লোজানো যখন জার্মানির বিরুদ্ধে গোল করে বসেন তখন সেই উত্তাল জনতা সমুদ্রে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের মতো উচ্চতায় উঠে গেল। চারদিকে তখন চিৎকার। এক সুরে সবাই বলে উঠলেনÑ ‘ইয়েস উই ডিড ইট’। ইন্সটিটিউট অব জিওলোজিক্যাল অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক ইনভেস্টিগেশনস বলেছে, ৩৫তম মিনিটে গোল হওয়ার সাত সেকেন্ড পরে রাজধানীর দুটি স্থানে ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘আর্টিফিশিয়ান’ বা কৃত্রিম ভূমিকম্প। এ ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছে পুরো মেক্সিকো লাফিয়ে ওঠার জন্য। ম্যাচ শেষে ৪৭ বছর বয়সী রোডোলফো পুলিদোর নেতৃত্বে সবাই চিৎকার করে বলতে লাগলেন ‘মেক্সিকো! মেক্সিকো! মেক্সিকো!’ সেই চিৎকার যেন কংক্রিটের প্রাচীর ভেদ করে প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যাচ্ছিল। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য যে কংক্রিটের ব্যারিয়ার ব্যবহার করা হয় তা যেন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। পুলিদো এই সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন তার গার্লফ্রেন্ড আর ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে। তিনি বলেন, আমি অবিশ্বাস্য রকম খুশি। দিনটি ছিল ফাদারস ডে। তাই পুলিদো বলেন, দিনটিতে দুটি গিফট পেলাম আমি। এক হলো মেক্সিকো জিতেছে। আর হলো ছেলের সঙ্গে নিয়ে তা উপভোগ করতে পারা। পুলিদো বলেন, এখন তার সাহস বেড়ে গেছে অনেক। মেক্সিকো পরের রাউন্ডে উঠবে এটা হলফ করে বলতে পারেন তিনি। তারপর কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনাল। এরপর জিতে আসতে পারে ফাইনালেও। বলতে বলতে চোখ ছল ছল করে ওঠে তার। মেক্সিকোতে নিজ দেশের টিমকে ডাকা হয় ‘এল ত্রি’ নামে। এর কারণ, এ দেশটির পতাকায় রয়েছে তিনটি রং। সামনেই মেক্সিকোতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেই নির্বাচনে এগিয়ে আছেনব অ্যান্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ অব্রাডোর। তিনি এক নির্বাচনী প্রচারণা থেকে তার দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সমর্থকদের বলেছেন, রোববার যেমন করে মেক্সিকো জিতেছে ঠিক একইভাবে মেক্সিকো জিতে যেতেই থাকবে। ওদিকে সামাজিক যোগাযোগ মিডিয়ায় তো বাণ ডেকেছে। একজন আরেকজনকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। অন্যরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করছেন। কারণ, তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। একটি গোলপোস্টের পাশে দাঁড়িয়ে প্রহরা দিচ্ছেন ওচোওয়া। এমন একটি ছবি পোস্ট করে তারা এর ক্যাপশন লিখেছেন ‘হেই! উই অলরেডি হ্যাভ এ ওয়াল’। অর্থাৎ, দেখ আমরা এরই মধ্যে দেয়াল বানিয়ে ফেলেছি। আরেকটি ছবিতে ব্যঙ্গ করা হয়েছে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেলকে নিয়ে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মারকেল তার কাছে একটি ফোন ধরে আছেন। আর বলছেন, ‘ডনাল্ড? আমি অ্যাঙ্গেলা। অনুগ্রহ করে দেয়ালটা নির্মাণ করুন’। উল্লেখ্য, আগামী শনিবার রাশিয়ার রোস্তোভ-অন-ডোভে দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে মেক্সিকো।