পাঁচ মিনিটের সাম্বা ম্যাজিক
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃনাটকীয়তা শেষে বিলম্বিত সাম্বা ছন্দ দেখালেন নেইমার-কুটিনহোরা। গতকাল শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শেষ ৫ মিনিটের ম্যাজিকে কোস্টারিকার জালে দুই বার বল পাঠায় ব্রাজিল। তার আগে ভিএআর দেখে ডাইভের দায়ে নেইমারের পাওয়া পেনাল্টি বাতিল করেন রেফারি। সেইন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে ২-০ গোলের স্বস্তির জয়ে রাশিয়া চলতি বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের পথে এগিয়ে গেল সেলেকাওরা। টুর্নামেন্টে প্রথম জয় দেখল পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। গোল দুইটি করেন ফিলিপ্পে কুটিনহো ও নেইমার।
টানা দুই ম্যাচ হেরে আসর থেকে বিদায় নিলো কোস্টারিকা। কোস্টারিকানদের কান্নার মাঝে দৃষ্টি কাড়েন নেইমার। ম্যাচ শেষে মাঠে বসে মুখ ঢেকে আবেগে কেঁদে ফেলেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। ‘ই’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর জয়ে ফিরল ব্রাজিল। নেইমারদের একের পর এক আক্রমণ ঠেকিয়ে চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কেইলর নাভাস। শেষ রক্ষা হয়নি কোস্টারিকান গোলরক্ষকের। নব্বই মিনিটের খেলা থাকে গোলশূন্য। ছয় মিনিটের ইনজুরি সময়ের শুরুতেই নাভাসকে পরাস্ত করেন কুটিনহো। বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতে ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরা। গোল উদযাপন করতে গিয়ে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে মাঠে পরেও যান কোচ লিওনার্দো বাচ্চি তিতে। ডি-বক্সে জটলার মধ্যে মার্সেলোর ক্রস মাটিতে নামান রবার্তো ফিরমিনো। দৌড়ে এসে ফিরমিনোর আগেই বলে শট নেন কুটিনহো। রিয়াল মাদ্রিদে খেলা নাভাসের দুই পায়ের ফাঁক গলে বল আশ্রয় নেয় জালে। শেষ মিনিটে ডান পাশ থেকে গোলমুখে ডগলাস কস্তার বাড়ানো বল থেকে সহজ ফিনিশিং টানেন নেইমার। এর আগে ৭৮ মিনিটে ব্রাজিলের পক্ষে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেয়ার পর ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সহায়তা নিয়ে তা বাতিল করেন রেফারি। নেইমারকে কোস্টারিকান ডিফেন্ডার জিয়ানকার্লো গঞ্জালেজের কোনো ফাউল ধরা পড়েনি। হালকা স্পর্শে অহেতুক পড়ে যান নেইমার। কোনো কার্ড অবশ্য দেখাননি ডাচ রেফারি বিজর্ন কুইপার্স। তিন মিনিট পর বল আছড়ে ফেলে হলুদ কার্ড দেখেন নেইমার। ম্যাচের শুরু থেকে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলা কোস্টারিকার রক্ষণভাগ ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন তিতের শিষ্যরা। ম্যাচের ৭২ শতাংশ বল দখলে রেখেছিল ব্রাজিল। কোস্টারিকার গোলমুখ তাক করে ২২টি শট নেন নেইমার-কুটিনহো-জেসুসরা। এর মধ্যে সরাসরি গোলমুখে শট ছিল ১০টি। বিপরীতে ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক অ্যালিসন অনেকটা চাপমুক্ত থাকেন। কোস্টারিকার তিনটি প্রচেষ্টার একটি শটও গোলমুখে ছিল না। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা কোস্টারিকা এবার এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ছিটকে গেল। সার্বিয়ার কাছে তারা প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে হার মানে। সার্বিয়ার বিপক্ষেই গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল। আগামী ২৭শে জুন স্পার্তাক স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায়। এবারের আসরে হট ফেভারিট ব্রাজিল শুরুতেই হোঁচট খায়। ১৯৭৮ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ জিততে ব্যর্থ হয় তারা। সেই আসরে সুইডেনের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছিল ব্রাজিল। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ বার ফাউলের শিকার হন নেইমার। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর আর কোনো খেলোয়াড়কে এতবার ট্যাকল করতে দেখা যায়নি। সেবার তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ১১ বার ফাউলের শিকার হয়েছিলেন ইংল্যান্ড স্ট্রাইকার অ্যালান শিয়েরার। সুইজারল্যান্ড ম্যাচ শেষে অনুশীলন মিস করায় নেইমারের ফিটনেস নিয়ে শঙ্কা জাগে। শঙ্কা কাটিয়ে কোস্টারিকার বিপক্ষে পুরো ম্যাচেই মাঠে ছিলেন নেইমার। কোস্টারিকার বিপক্ষে জয়ের মধ্য দিয়ে টানা ১৪টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে অপরাজিত ব্রাজিল। মধ্য আমেরিকার দেশ কোস্টারিকার বিপক্ষে এ নিয়ে ১১ বারের সাক্ষাতে ১০ ম্যাচেই জয় পেলো সেলেকাওরা। কোস্টারিকার একমাত্র জয়টি আসে ১৯৬০ সালের প্রীতি ম্যাচে। আর বিশ্বকাপে এর আগে দুই বার মুখোমুখি হয় ব্রাজিল-কোস্টারিকা। ১৯৯০ ও ২০০২ আসরের গ্রুপ পর্বে কোস্টারিয়াকে যথাক্রমে ১-০ ও ৫-২ গোলে হারায় ব্রাজিল। এবারের বাছাইপর্ব দাপুটে নৈপুণ্য দেখিয়ে সবার আগে চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেয় পেলের উত্তরসূরিরা। বিশ্বকাপের আগে টানা দুই প্রস্তুতি ম্যাচে অস্ট্রিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল। পায়ের পাতার হাড়ে অস্ত্রোপচার কাটিয়ে ফিরেই দুই ম্যাচে গোল করেন নেইমার।