গুহায় আটকা ফুটবল দল: উদ্ধারে কয়েক মাসও লাগতে পারে
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃআটকে পড়ার ৯ দিন পর থাইল্যান্ডের কিশোর ফুটবল দলের ১৩ জনের জীবিত থাকার খবর স্বস্তির পাশাপাশি দুশ্চিন্তারও জন্ম দিয়েছে। কীভাবে তাদের উদ্ধার করা হবে, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা ও বিশ্লেষণ। কারণ, যে গুহায় তারা আটকা পড়েছে, সেটি এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। টানা ভারী বর্ষণ ও বন্যায় সেই ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে না এলে তাদের উদ্ধারে কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ওয়াইল্ড বোয়ার ফুটবল দলের ১২ কিশোর ও তাদের এক কোচ ২৩ জুন বেড়াতে গিয়ে উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই এলাকার থাম লুয়াং গুহায় আটকা পড়ে। গুহাটি প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম গুহার একটি। এখানে যাত্রাপথের দিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। সংযোগ পথও (করিডর) বেশ সংকীর্ণ। ভারী বর্ষণ আর কাদায় থাম লুয়াংয়ের প্রবেশমুখ বন্ধ হয়ে গেলে তারা আটকা পড়ে। ভেতরে বন্যার পানি ঢুকে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
দেশটির সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার জানায়, আটক ১৩ জনকে উদ্ধার করার প্রক্রিয়াটি জটিল। থাইল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনীর দেওয়া বিবৃতির উল্লেখ করে নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন আনন্দ সুরাবন বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে চার মাস চলার মতো খাবার পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। গুহার মধ্যে ঢুকে পড়া বন্যার পানি সরানোর চেষ্টার পাশাপাশি ১৩ জনকে ডুবসাঁতার শেখানো হবে।’ এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার উচ্চ ক্যালরির জেল, প্যারাসিটামলসহ অতি প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধ তাদের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
চিয়াং রাইয়ের গভর্নর নারংসাক ওসোতানাক্রন বলেন, ‘আমরা এটাকে বলছি অসম্ভব চেষ্টা। কারণ, প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। তবু আমরা আমাদের দৃঢ়সংকল্প ও যন্ত্রপাতি নিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে লড়ে যাব।’ আটকে পড়া ব্যক্তিদের কাছে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের সংক্রমণ ও অসুস্থতা এড়াতে তাদের বিশেষ ধরনের ওষুধ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিশোরদের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। আর তাদের কোচের বয়স ২৫ বছর। তাদের ডুবসাঁতার শেখানোর লক্ষ্য হচ্ছে এভাবে তাদের গুহার বাইরে বের করে আনা। তবে এই পদ্ধতি নিয়ে সংশয় আছে। যদি এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, তাহলে এটা হবে খুবই কঠিন কাজ। গুহায় ডুবসাঁতার এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে এই কিশোরদের জন্য, যারা ডুবসাঁতার দিতে পারে না এবং ৯ দিন না খেয়ে একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বন্যার পানিতে বিভিন্ন স্থানে পথ আটকে গেছে। সুস্থ-সবল ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নেভি সিলের সদস্যদেরই এই পথ পাড়ি দিতে ছয় ঘণ্টা সময় লাগবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কেভ রেসকিউ কমিশনের সমন্বয়কারী আনমার মির্জা বলেন, গুহায় ডুবসাঁতার দেওয়া খুবই দক্ষতার বিষয়। এটা চরম বিপজ্জনক, বিশেষ করে অদক্ষ ডুবসাঁতারকারীদের জন্য। তাই অন্য কোনো উপায়ে তাদের বের করার ওপর জোর দেন তিনি। তাদের উদ্ধারে খননপদ্ধতি ব্যবহারের কথা ভাবা হচ্ছে। এতে পাহাড়ের ওপর থেকে খনন করে গুহা পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। তবে সে ক্ষেত্রে আশঙ্কার বিষয় হলো ঠিক কোন স্থানটিতে খনন করা হবে। যেদিকে খনন করা হবে, সেখান থেকে আটকে পড়া ফুটবলারদের দূরত্ব কতটুকু বা সেখানে যাওয়ার পথ আছে কি না। আবার সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও দুর্বল শরীরে শিশুরা এতটা পথ বেয়ে ওপরে উঠতে পারবে কি না, সেটি নিয়েও দুশ্চিন্তা আছে।
আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে সবচেয়ে নিরাপদ উপায় মনে করা হচ্ছে তারা যদি হেঁটে বের হয়। তবে বন্যার পানি গুহার অনেক স্থানে রয়ে যাওয়ায় এই মুহূর্তে সেটি সম্ভব নয়। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পাম্প দিয়ে বন্যার পানি বের করার সময়ও সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কোনো ধরনের ধসের ঘটনা না ঘটে। কারণ, টানা ও ভারী বৃষ্টির কারণে সেখানকার মাটি এমনিতেই নরম হয়ে আছে। তবে এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে অনেক সময় লেগে যাবে বলে মনে করেন উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া বেলজিয়ামের ডুবুরি বেন রেমেনান্টস। তিনি বলেন, ‘বন্যার পানিতে গুহার বিভিন্ন এলাকা ভরে গেলে সেসব পানি বের করতে কয়েক মাস সময় লেগে যাবে।’ তবে গুহায় আটক খুদে ফুটবলারদের উদ্ধারে ঠিক কত দিন সময় লাগবে, এটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থায় আটকে পড়াদের গুহায় থাকতে হতে পারে কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাসও। ডুবুরি রেমেনান্টস বলেন, ডুবসাঁতার দিয়ে বের হয়ে আসতে তাদের যেমন শরীরের জোর লাগবে, তেমনি গুহার ভেতরে দীর্ঘদিন থাকতে মনের জোর লাগবে। তবে আটকে পড়া কিশোর ও তাদের কোচ মানসিকভাবে বেশ ভালো আছে, এটা ভালো লক্ষণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উদ্ধারকাজের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রাউত চান-ওচা। তিনি বলেন, ‘থাইল্যান্ডের সবাইকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ বিদেশিদের। সবাই নায়ক। সবাই পরস্পরকে সহায়তা করছেন।’
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুপং পাওচিন্দা জানিয়েছেন, উদ্ধারকারীরা পাম্প দিয়ে পানি সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে। তবে যদি অনেক বেশি বৃষ্টি হয়, পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে। তখন আটকে পড়াদের বের করে আনা আরও কঠিন হবে।