২৮ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড। আর ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর আরেকটি ফাইনাল ডাকছে ইংল্যান্ডকে। রাশিয়া বিশ্বকাপে সুইডেনকে বিদায় করে সেমিফাইনালে উঠে গেছে থ্রি লায়নরা। গতরাতে সামারা অ্যারিনায় সুইডিশদের ২-০ গোলে হারিয়ে মাঠ ছাড়ে হ্যারি কেইনের দল। ম্যাচে ফিরতে মরিয়া সুইডেনের বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা রুখে দেন ইংল্যান্ডকে কোয়ার্টার ফাইনালে তোলার নায়ক জর্ডান পিকফোর্ড।
বিশ্বকাপের গত দুই আসরে বাছাইপর্বে বাদপড়া সুইডিশদের দৌড় থামলো কোয়ার্টার ফাইনালে। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে এ নিয়ে তৃতীয়বার বিশ্বকাপের শেষ চারে পা রাখলো ইংল্যান্ড। চতুর্থ স্থান নিয়ে ১৯৯০ আসর শেষ করে ৬৬’র চ্যাম্পিয়নরা। চারবার সেমিফাইনাল খেলা সুইডেনকে শেষবার শেষ আটে দেখা যায় ১৯৯৪ আসরে। ইংল্যান্ডের আক্রমণ ঠেকাতে ডিফেন্সিভ কৌশল নিয়ে নামে সুইডেন। সেটপিস থেকে ম্যাচের ৩০ মিনিটে লিড নেয় ইংল্যান্ড। অ্যাশলে ইয়াংয়ের কর্নার খুঁজে নেয় ডিফেন্ডার হ্যারি ম্যাগুয়েরকে। লাফিয়ে উঠে বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি তিনি। ৪৩ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন রাহিম স্টারলিং। সুইডেনের ডিফেন্সের ওপর দিয়ে দারুণ পাস দেন কাইরান ত্রিপিয়ার। কিন্তু গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেননি স্টারলিং। প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থতার পর পাশে থাকা হ্যারি কেইনকে পাস না দিয়ে নিজেই আবার গোল করতে যান। কর্নারের বিনিময়ে বল ক্লিয়ার করেন সুইডিশ সেন্টারব্যাক ভিক্টর লিনডেলফ। এক গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ইংল্যান্ড। প্রথমার্ধে বল দখলে এগিয়ে থাকলেও খুব বেশি শট নিতে পারেনি কেইন-ড্যালি আলী-স্টারলিংরা। গোলমুখ তাক করে ৫টি শটের একটি ছিল পোস্টে। তিন ম্যাচে ৬ গোল করা ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইনের একটি মাটি কামড়ানো শট বারের বাম পাশ দিয়ে চলে যায়। সুইডেন মাত্র একটি শট নেয়। সেটিও ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট।

দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারতো সুইডেন। ফরোয়ার্ড মার্কাস বার্গের হেড বামদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে প্রতিহত করেন পিকফোর্ড। উল্টো ৫৮ মিনিটে হেড থেকেই দ্বিতীয়বার গোল হজম করে সুইডেন। জেসে লিনগার্ডের ক্রস থেকে ফিনিশিং টানেন ড্যালি আলী। সুইডিশ গোলরক্ষক রবিন অলসেনের কিছু করার ছিল না। ৬২ মিনিটে আরেকটি চমৎকার সেভ করেন ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ড। ডি-বক্সে সুইডিশ মিডফিল্ডার ভিক্টর ক্লাইসনের বাম পায়ের শট ব্লক করেন তিনি। ৭১ মিনিটে ফের সুইডিশদের নিরাশ করেন পিকফোর্ড। ক্রসবারের নিচে মার্কাস বার্গের শট হাত ছুঁইয়ে সেভ করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত আর ম্যাচে ফেরা হয়নি সুইডেনের। ডাচ্‌ রেফারি বিজর্ন কুইপার্স শেষ বাঁশি বাজাতেই উল্লাসে মাতে গোটা ইংলিশ শিবির।

অপরিবর্তিত একাদশ মাঠে নামান ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। দুইটি পরিবর্তন আনেন সুইডিশ কোচ জ্যান অ্যান্ডারসন। ডিফেন্সে নামেন এমিল ক্রাফথ। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঝমাঠে ফেরেন সেবাস্তিয়ান লারসন। সেমিফাইনালে রাশিয়া-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের জয়ী দলের মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড। আগামী বুধবার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে রাত ১২টায় ম্যাচটি শুরু হবে। মঙ্গলবার একই সময়ে সেইন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে মোকাবিলা করবে বেলজিয়াম। বিশ্বকাপে এর আগে দুইবার সুইডেনের মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড। এক ম্যাচেও ফল দেখেনি দর্শকরা। ২০০২ আসরের গ্রুপ পর্বে প্রথম দেখায় দুইদলের মধ্যকার ম্যাচটি ১-১ সমতায় শেষ জয়। পরের বিশ্বকাপেও একই গ্রুপে পড়ে ইংল্যান্ড ও সুইডেন। গ্রুপ পর্বের ওই ম্যাচটিও ২-২ গোলে ড্র হয়। চলতি বিশ্বকাপের আগে সব মিলিয়ে ২৪ বারের দেখায় ইংল্যান্ড ৮ ম্যাচে ও সুইডেন ৭ ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। বাকি ৯ ম্যাচ ড্রয়ের মুখ দেখে। সবশেষ ২০১২ সালের প্রীতি ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-২ গোলের রোমাঞ্চকর জয় পায় সুইডিশরা। স্টকহোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে একাই ৪ গোল করেন জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ।

এবার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে সুইডিশরা। ভিন্ন গ্রুপে দ্বিতীয় হয় ইংল্যান্ড। গ্রুপ পর্বে দুইদলই ২ জয় ও ১ ম্যাচে হার দেখে। বিশ্বকাপের গত দুই আসরে বাছাইপর্ব উতরাতে পারেনি সুইডেন। সুইডিশদের সেরা সাফল্য নিজ দেশে ১৯৫৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে। সেবার ব্রাজিলের কাছে ৫-২ গোলে হেরে রানার্সআপ হয় স্বাগতিকরা। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে বিদায় নেয় ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় রাউন্ডে সুইজারল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারায় সুইডেন। ইংল্যান্ড-কলম্বিয়া ম্যাচটি ছিল নাটকীয়। ইনজুরির সময়ের গোলে ১-১ সমতায় ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নেয় কলম্বিয়া। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে খেলার নিষ্পত্তি ঘটে। কলম্বিয়া দুইটি ও ইংল্যান্ড একটি পেনাল্টি শট মিস করে। পঞ্চম শট ঠেকিয়ে নায়কের আসনে বসেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। পিকফোর্ড বীরত্বে টাইব্রেকার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে পেনাল্টি শুটআউটে এই প্রথম জয়ের দেখা পায় ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপ ইতিহাসে ইংলিশদের দ্বিতীয় গোলরক্ষক হিসেবে পেনাল্টি শট ঠেকানোর কৃতিত্ব দেখান পিকফোর্ড। ১৯৯৮ আসরের দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে টাইব্রেকারে একটি শট প্রতিহত করলেও দলের পরাজয় এড়াতে পারেননি ডেভিড সিম্যান।


Spread the love

Leave a Reply