গুহায় আটকে পড়া ফুটবলারদের উদ্ধার অভিযান শুরু ,৬ জন উদ্ধার
বাংলা সাংলাপ ডেস্কঃ দুই সপ্তাহ ধরে গুহায় আটকে পড়া থাইল্যান্ডের ১২ টিনেজ ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধারে বিপদজনক এক উদ্ধার অভিযান আজ শুরু করেছে থাই কর্তৃপক্ষ।এ পর্যন্ত ৬ কিশোরকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, দুর্ধর্ষ ও দুঃসাহসিক এক অভিযানে থাইল্যান্ডে গুহায় আটকে পড়া কিশোরদের ছয়জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে তাদেরকে উদ্ধার করে গুহার বাইরে অস্থায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্তু উদ্ধার অভিযান চলছিল। এই মুহূর্তে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে মাতামাতিকেও ছাড়িয়ে গেছে ওই বালকদের আটকে পড়া, তাদের দুর্দশা ও উদ্ধারের কাহিনী। প্রতিজন বালককে সরু গুহাপথে বের করে আনতে দু’জন করে ডুবুরি ব্যবহার করা হয়। এসব ডুবুরি উচ্চ মাত্রায় প্রশিক্ষিত। চিয়াং রাইয়ের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা তেসাথেপ বুনথং ওই বালকদের ৬ জনকে উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন মিডিয়াকে।
বলেছেন, তাদের বিভিন্ন রকম শারীরিক পরীক্ষা করা হচ্ছিল। প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ থাম লুয়াং গুহার মধ্যে আটকে পড়া এসব বালকের জন্য প্রার্থনা করা হয় বিভিন্ন উপাসনালয়ে। উদ্বেগে উৎকণ্ঠায় কাটাতে থাকে থাইল্যান্ড। আর বিশ্ব অখন্ড দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তাদের শেষ পরিণতির দিকে। এমনই অবস্থায় ব্যাপক তৎপরতায় গতকাল শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। একে ডি-ডে বা অভিযান শুরুর দিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। দুই সপ্তহের বেশি সময় গুহায় আটকে পড়ে ১২ টিনেজ ফুটবলার ও তাদের কোচ। তাদেরকে উদ্ধারে বিপদজনক এই উদ্ধার অভিযান গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় শুরু করে থাই কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, ১১ ঘন্টা অভিযান চালানোর পর হয়তো প্রথম কোনো টিনেজারকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে। তখন বাংলাদেশের সময় হতে পারে রাত এগারটা। কিন্তু তার আগেই প্রথমে দুটি বালককে উদ্ধারের খবর জানান কর্মকর্তারা। এর পর পর খবর পাওয়া যায় যে, ৬টি বালককে উদ্ধার করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি, বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, এই অভিযানে অংশ নিচ্ছেন বিদেশী ১৩ জন ডুবুরি ও থাইল্যান্ডের নেভি সিল ইউনিটের ৫ জন সদস্য। তবে বিপদের কথা হলো এ সপ্তাহের শুরুর দিকে ওই গুহায় উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর একজন ডুবুরি মারা গেছেন। কারণ, গুহাটি স্থানে স্থানে এতটাই সংকীর্ণ যে, সেখান দিয়ে আসা-যাওয়া করা খুবই কষ্টসাধ্য। এরই একটি পথে আটকা পড়ে পানিতে ডুবে মারা যান ওই ডুবুরি। উদ্ধার অভিযানের প্রধান নারোংসাক ওসোত্তানোকর্ন গতকালের অভিযান সম্পর্কে বলেছেন, এটা হলো ডি- ডে। উল্লেখ্য, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ চিয়াং রাইয়ে বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। গুহার ভিতর থেকে কয়েক লাখ লিটার পানি সেচ দিয়ে বের করে আনা হয়েছে। আবার সেখানে বৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য এটাকেই উদ্ধার অভিযানের জন্য উপযুক্ত সময় বলে বিবেচনা করা হয়। ফলে শুরু হয় অভিযান। এ অভিযানকে গভর্নর বলেছেন, সময় ও পানির বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ হিসেবে। গত ২৩ শে জুন থেকে ওই টিনেজার ফুটবল টিম ও তাদের ২৫ বছর বয়সী কোচ ওই দীর্ঘ গুহার ভিতরে আটকে ছিলেন। উদ্ধার অভিযানে প্রস্তুত রাখা হয় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা। উপস্থিত রাখা হয়েছে মেডিকেল ইউনিট, এম্বুলেন্স ও হেলিকপ্টার। গুহার মুখেই এসব প্রস্তুত রাখা হয়, যাতে উদ্ধার করে কোনো বালককে আনা হলেই তাদেরকে চিকিৎসা দেয়া যায়। নারোংসাক বলেছেন, ফুটবল টিমের ওই বাচ্চাদের স্থানীয় সময় রাত ৯টায় উদ্ধার করার সম্ভাবনা থাকলেও এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা ছিল না। যেকোনো সময় এ অভিযান স্থগিতও হওয়ার আশঙ্কা ছিল। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগতে পারে ৬ ঘন্টা- এমনটা অভিযানের শুরুতে আশঙ্কা করা হয়। উদ্ধার অভিযানে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার একজন চিকিৎসক। তিনি গত রাতে ওই বালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন এবং তাদেরকে উদ্ধার করা যায় বলে ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন। এরপরই প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। চীনের ডুবুরি গোয় হুই আছেন এ মিশনে। থাইল্যান্ড ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ১৩০ জনের মতো ডুবুরির ভিতর থেকে তাকে বাছাই করা হয়েছে। তিনি শনিবার রয়টার্সকে বলেছেন, গুহার ভিতরে পানির স্তর অনেকটাই কমেছে। কয়েক লাখ লিটার পানি সেচে ফেলে দেয়ার পর এমন পরিস্থিতি হয়েছে। এ অবস্থায় উদ্ধার অভিযান চালানো সহজ হতে পারে।