ঈদ বাজার ও কেনাকাটা
নাজমিন রিয়া, বাংলাদেশ
রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি লোকালয়ে জমে উঠেছে ঈদের বাজার ও কেনাকাটা।ঘর থেকে বের হলেই এখন দেখা যায় ঈদের জমজমাট বাজারের চিত্র। বিভিন্ন বাজার, দোকানের পাশাপাশি বাংলাদেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইনেও কেনাকাটা।
এসব কেনাকাটার কিছু জনপ্রিয় মাধ্যম হলো- www.akhoni.com, www.ajkerdeal.com, www.rokomari.com, www.bangladeshbrands.com, www.upoharbd.com, www.ushop.com.bd, www.esufiana.com, www.okhanei.com, ইত্যাদি।
বাজার সয়লাব ভারতীয় পোষাকে। ভারতের বিভিন্ন সিরিয়ালের পোষাকের প্রতি রয়েছে তরুণীদের ব্যাপক চাহিদা। সিরিয়ালের নামানুসারে এসব পোষাকের নাম রাখা হয়েছে- কিরণমালা, কটকটি, পাখি, ইত্যাদি। এছাড়া আছে বাহারি ডিজাইনের আনারকলি, জিপসী, লেহেঙ্গা, ফ্লোরটাচ, গাউন আরো অনেক কিছু।
রাজধানীর বিভিন্ন দোকান ও শপিংমলগুলো ঘুরে দেখা গেছে এগুলো সর্বনিম্ন ৩০০০ থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভিড় বাড়ছে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোতেও। দোকানগুলোয় শোভা পাচ্ছে নিত্যনতুন ডিজাইনের দেশী-বিদেশী পোশাক। বাজারে ভারতীয় পোশাকের ভিড় ছাপিয়ে ক্রেতাদের পছন্দের কেন্দ্রে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর নানা ডিজাইনের পোশাক। ফলে ভিড় লেগে আছে দেশী ফ্যাশন হাউজগুলোয়।
রাজধানীর শাহবাগ, বসুন্ধরা সিটি, ওয়ারী, বেইলি রোড ও মিরপুরের বিভিন্ন দেশীয় ফ্যাশন হাউজ ঘুরে দেখা গেছে, নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক শোভা পাচ্ছে সেখানে। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের পোশাকেও এসেছে নতুনত্ব। মেয়েদের জন্য রয়েছে লং ও সেমি লং সালোয়ার-কামিজ। পাশাপাশি আছে ওয়ান পিস টপস, কুর্তা ও স্কার্ট। সঙ্গে আছে চিরায়ত চুড়িদার, এক রঙের ও প্রিন্টেড পালাজ্জো। ফুলহাতা বা থ্রি কোয়ার্টার হাতা জামা যেমন চলছে, তেমনি গলার ডিজাইনেও এসেছে পরিবর্তন। গরমের কারণে এবার হাইনেক বা কলারওয়ালা গলার বদলে রয়েছে নতুন নতুন ডিজাইনের গলা। সালোয়ার-কামিজের মধ্যে এমব্রয়ডারির কাজ চলছে বেশি। তবে হাতের কাজের কদরও রয়েছে সমানভাবে।
মিরপুরে কে-ক্রাফটের একটি শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রয়কর্মীদের কথা বলার ফুরসত নেই।প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা জানান, এবার নতুন পার্ট বাই পার্ট ডিজাইন বাজারের প্রধান জায়গা দখল করে থাকবে। এর বাইরে থাকছে মেয়েদের পোশাকের ক্ষেত্রে ফতুয়া ও নিচের দিকের পঞ্চো স্টাইল এবং ফিশ স্টাইলের পোশাক। টিনএজদের জন্য রয়েছে সুতি ও লিনেনের ফতুয়া, কুর্তা ও ওয়ান পিস জামা।
দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো পোশাকের ক্ষেত্রে সুতি ও সিল্কের ওপরই জোর দিয়ে থাকে। এবার সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি শাড়ির ক্ষেত্রেও নতুন ডিজাইন নিয়ে এসেছে তারা। রয়েছে চিরায়ত তাঁতের শাড়ির ভেতর রকমারি রঙের মিশেল আর বাহারি রঙের সমাবেশ। তাঁতের শাড়ির মধ্যে রয়েছে মসলিন, সুতি ও মাসলাইস কটন। এর বাইরে রয়েছে নানা ডিজাইনের সিল্ক ও হাফসিল্ক শাড়ির সমাহার।
এবার মেয়েদের সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি শাড়িকে ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টায় রয়েছে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো।
ছেলেদের ক্ষেত্রে এবারো ফ্যাশনের বড় অংশজুড়ে আছে পাঞ্জাবি। তবে তাতেও রয়েছে নতুনত্ব। এবার সেমি লং পাঞ্জাবি ও ঢিলেঢালা পোশাকের চল রয়েছে ।এছাড়া দ্বিতীয় পোশাক হিসেবে শর্ট হাতার শার্ট ও টি-শার্টের চাহিদা রয়েছে।
ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখেই পোশাকের দাম নির্ধারণ করেছে ফ্যাশন হাউজগুলো । মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে, ওয়ান পিস ৭০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। পালাজ্জো ৩০০ থেকে ৫০০, তাঁতের শাড়ি ৮৫০ থেকে ৩ হাজার ২৫০, সিল্ক ও অন্যান্য ২ হাজার থেকে ২০ হাজার পর্যন্ত রয়েছে। ছেলেদের সেমি লং পাঞ্জাবির দাম ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। শার্টের দাম ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। বাচ্চাদের ফ্রক ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। এছাড়া এবার ফ্যাশন হিসেবে বাজারে আছে মেয়েদের রঙিন স্কার্ফ, যার দাম ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত।
জমে উঠেছে রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটে বাহারি পাঞ্জাবি। বিভিন্ন বিপণিবিতান আর ফ্যাশন হাউসগুলোতে চলে এসেছে আধুনিক ডিজাইনের নতুন নতুন কালেকশন। এবার সুতি আর গাঢ় রঙের পাঞ্জাবির প্রতিই বেশি আগ্রহ ছেলেদের। রাজধানীর বিভিন্ন পাঞ্জাবির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাহারি রঙ আর নতুন ডিজাইন আর কারুকাজ করা পাঞ্জাবিতে সাজানো হয়েছে বিপণিবিতানগুলো। ঝুট কটন, টিস্যু কটন, তাঁতডুবী, এনডি সিল্ক, কুমিল্লার খাদি, ধুপিয়ান, ধুতি কটন, তাঁতঝর্না, তাঁত কটন, রাজশাহী সিল্ক, হাফ সিল্ক, তসর, জয়শ্রী সিল্ক, লিলেন ইত্যাদি কাপড়ের পাঞ্জাবির প্রতিই আগ্রহ ক্রেতাদের। এগুলো বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে। সর্বনিম্ন ৪০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে এসব পাঞ্জাবি। এবার গরমের কারণে হালকা রঙের সুতি পাঞ্জাবির দিকেই তরুণদের ঝোঁক বেশি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গরমে সূতি কাপড়ের পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হচ্ছে। শর্ট ও সেমিলং পাঞ্জাবিও বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া রাজধানীর বসুন্ধরা শপিংমল, যমুনা ফিউচার পার্ক, নিউ মার্কেট ও গুলশানের বিভিন্ন অভিজাত বিপণিবিতানে কাতান সিল্ক, ধুপিয়ান সিল্ক, লিলেন ফেব্রিক্সের পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হচ্ছে। একেকটির দাম পড়ছে ২ হাজার ৭৫০ থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া রাজধানীর প্রতিটি মার্কেট, শপিংমল, ফ্যাশ্যন হাউস, ফুটপাত আর বিপণিবিতানেও বিক্রি হচ্ছে পাঞ্জাবি। এদিকে এবারের ঈদে মনমাতানো রঙ আর ডিজাইনের পাঞ্জাবির সঙ্গে হাল ফ্যাশন হিসেবে যুক্ত হয়েছে ‘মোদি কোট’। এটির প্রতি তরুণদের আগ্রহ লক্ষণীয়। দোকানিরা জানান, প্রায় সব বয়সী পুরুষই পাঞ্জাবির সঙ্গে এটিকে বিশেষ ট্রেন্ড মনে করছেন। পছন্দের রংয়ের পাঞ্জাবির সঙ্গে মিলিয়ে কিনে নিচ্ছেন। বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানে এটির দাম ১২০০ থেকে ক ৪ হাজার ৫৫০ টাকার মধ্যে। তবে অভিজাত শপিংমলগুলোতে এর দাম পড়বে ২ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা।