রাশিয়ায় ফরাসি বিপ্লব

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃলুঝনিকিতে ক্রোয়েশিয়ানদের ইতিহাস গড়তে দিলো না ফ্রান্স। ফাইনালের মঞ্চে তাদের ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটা আবারো নিজেদের করে নিলো ফরাসিরা। ছয় গোলের ফাইনালে ফ্রান্সের হয়ে একটি করে গোল করেন আন্তোইন গ্রিজম্যান, পল পগবা ও কিলিয়ান এমবাপ্পে। একটি হয়েছে আত্মঘাতী। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে ইভান পেরিসিচ ও মারিও মানজুকিচ দুটি গোল শোধ করেন। ১৯৯৮ সালে দিদিয়ের দেশমের হাত ধরেই বিশ্বকাপ জিতেছিলো ফ্রান্স।
২০ বছর পর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ৭৮ হাজার দর্শকের সামনে সেই সোনালি ট্রফি তার হাতে তুলে দিলেন গ্রিজম্যান-পল পগবারা।

এদিন সময় যতো ঘনিয়ে আসছিলো লুঝনিকির গ্যালারি ততোটাই উত্তাপ হারাচ্ছিলো। ক্রোয়েশিয়ানদের এই হার মেনে নিতে পারছিলেন না মাঠে উপস্থিত দর্শক অধিকাংশ। তাইতো ম্যাচ শেষেও গ্যালারিতে ছিলো গগনবিদারী চিৎকার, কিংবা ভুভুজেলার শব্দ। তবে গ্যালারি ফেটে না পরলেও দেশমকে নিয়ে মাঠে ঠিকই উৎসব হয়েছে। ফ্রান্সের জয়ের নায়ক আন্তোইনি গ্রিজম্যান, গপল গপবা ও এমবাপ্পে ছিলেন উৎসবের কেন্দ্র বিন্দুতে। পতাকা হাতেও মাঠে এদের দৌড়াতে দেখা গেছে। তবে হেরেও দর্শকদের মন জয় করেছেন ক্রোয়েশিয়ান কোচ দালিচ। মাঠে গিয়ে শিষ্যদের সান্তনা দিয়ে দর্শকদের অভিবাদন জানান এই কোচ। শুভেচ্ছা জানান প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দেরও।

ফাইনালের আগে ১৫ মিনিটের সমাপনী অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলো হলিউড সুপারস্টার উইল স্মিথের সঙ্গে কসোভোর গায়িকা ইরা ইস্ত্রেফির সঙ্গীত। জার্মানির সাবেক অধিনায়ক ফিলিপ লামের বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে মাঠে প্রবেশ। ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনালদিনহোর ড্রামের সঙ্গে স্থানীয় শিল্পীদের সুরের মূর্ছনাও ভালো লাগেনি লুঝনিকির দর্শকদের! তাইতো মনোমুদ্ধকর এক সমাপনী অনুষ্ঠানে উচ্ছ্বাস ছিলো না। এরাই আবার দু’দল মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছ্বাসে ফেটে পরে। লুঝনিকির গ্যালারির এদিন অর্ধেকের বেশী ছিলো সাদা লালের সমাহার। ফ্রান্সের নীল সাদার উপস্থিতি ছিলো সে তুলনায় কম। গ্যালারির লড়াইয়ের মতো শুরুর দিকে মাঠও দখলে রেখেছিলো ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু গোল করার মতো কোনো সুযোগ তৈরী করতে পারছিলো না ক্রোয়াটরা। উল্টো ম্যাচের ১৮ মিনিটে আন্তোইন গ্রিজম্যানের ফ্রি-কিকে আত্মঘাতী গোল খেয়ে বসে প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা দলটি (১-০)। বক্সের বাইরে থেকে গ্রিজম্যানের করা ফ্রি-কিক মারিও মানজুকিচের মাথা ছুঁইয়ে আশ্রয় নেয় জালে।

তবে গোল হজমের পরই ঘুরে দাঁড়ায় ক্রোয়েশিয়া। তার নজির এবার বিশ্বকাপে দেখিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। নকআউট পর্বের তিন ম্যাচের তিনটিতেই আগে গোল হজম করে পরে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। ডেনর্মাকের বিপক্ষে রাউন্ড অব সিক্সটিনে প্রথম মিনিটেই গোল খায় ক্রোয়েশিয়া। চার মিনিটেই সেই গোল শোধ করেন মারিও মানজুচিক। পরে টাইব্রেকারে জিতে মাঠ ছাড়ে ক্রোয়াটরা। কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে আগে গোল খেয়ে দুই গোল দেয় ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া দলটি। এই ম্যাচের নিস্পত্তিও হয় টাইব্রেকারে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালেও পিছিয়ে পড়েও শেষে ২-১ গোলে জয় দেখে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ২০ নাম্বারে থাকা দলটি। গতকাল লুঝনিকিতে এক গোল হজমের পর দশ মিনিটের ব্যবধানে তা শোধও করে তারা। ম্যাচের ২৮ মিনিটে বিপদজনক অবস্থায় ফ্রি কিক পায় ক্রোয়েশিয়া। ইভান রাকিটিচের শট বক্সের মধ্যে কয়েক পাক ঘুরে পেরিসিচের পায়ে পরলে ব্যথা পাওয়া পায়ে জাদু দেখান এই মিডফিল্ডার। দুর্দান্তভাবে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একজনকে কাটিয়ে বা পায়ের কোনাকুনি শটে নিশানা খুঁজে পেলে সমতায় ফেরে ক্রোয়েশিয়া (১-১)। সমতা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি ইভান রাকিটিচ পেরিচিসরা। ম্যাচের ৩৪ মিনিটে আবারও দূর্ভাগ্য ভর করে ক্রোয়েশিয়ানদের কপালে। ৩৪ মিনিট ফ্রান্সের এক ফ্রি-কিক লাফিয়ে উঠে হেড করতে ব্যর্থ হন ব্লেইস মাতুইদি। এতেই তার পেছনে থাকা পেরিসিচের হাতে লাগে। রেফারি প্রথমে এড়িয়ে গেলেও ফ্রান্সের দাবির প্রেক্ষিতে ভিএআর নেয়। আর্জেন্টাইন রেফারি ভিএআর দেখে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। গ্রিজম্যান সেই পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি (২-১)।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে এই লুঝনিকি স্টেডিয়ামেই সমতা সূচক গোলটি করেছিলেন ইভান পেরিসিচ। তার সহযোগিতায় মারিও মানজুকিচের গোলে জয় পায় ক্রোয়েশিয়া। ফাইনালে ওঠার ওই ম্যাচে পায়ের মাংস পেশীতে টান পরে পেরিসিচের। আঘাত এতোটাই গুরুতর ছিলো যে মস্কোর একটি হাসপতালে চিকিৎসাও নিতে হয় এই মিডফিল্ডারকে। ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালের আগে তাকে নিয়ে দোটানায় ছিলেন ক্রোয়াট কোচ জøাতকো দালিচ। তাইতো দু’দিন বিশ্রাম দিয়েছিলেন এই তারকা ফুটবলারকে। ইনজুরি আক্রান্ত ইভান পেরিসিচকে নিয়েই একাদশ সাজান দালিচ। ফ্রান্সের একাদশও ছিলো অপরবর্তিত। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে রাবিচের শট কর্ণারের বিনিময়ে রক্ষা করেন ফ্রান্সের গোলরক্ষ হুগো লরিস। এরপরেও কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদকরে পাঠে প্রবেশ করে চার দর্শক। যাদের পেছন পেছনে ছুটে যায় নিরাপত্তারক্ষীরা। নিরাপত্তা রক্ষীদের আগে ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলারদের আঘাত করে এরা। পরে টেনে হেছড়ে এদের মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের মধ্যে একজন নারীও ছিলো। সবাই যখন কি হলো হলো রব তুলেছে এই ফাঁকে আরও এক গোল দিয়ে বসেছে ফ্রান্স। কাউন্টার অ্যাট্যাক থেকে কিলিয়ান এমবাপ্পের ফিরতি বলে গ্রিজম্যান বল বাড়ান পগবাকে। পগবার বুদ্ধিদীপ্ত শট সুবাসিচকে ফাঁকি দিলে ৩-১ গোলের লিড পায় ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়নরা। দুই মিনিট পরেই একক প্রচেষ্টায় গোল করেন এমবাপ্পে (৪-১)। তিন গোলে পিছিয়ে পরেও হাতাশা ভেঙে পরেননি ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলাররা। তার প্রমাণ মিলিছে চার মিনিট পরেই। একটি ব্যাক পাস থেকে বল ক্লিয়ার করতে গিয়েছিলেন ফ্রান্সের গোলরক্ষক লরিস, ওই বলই নিজের আয়ত্তে নিয়ে জালে জড়ান মানজুকিচ (৪-২)। শেষের দশ মিনিটও বল ক্রোয়াটদের নিয়ন্ত্রণেই ছিলো। কিন্তু ফ্রান্সের জমাট রক্ষণে ফাটল ধরানো যায়নি। আর এতেই সম্ভব হয়নি বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি উচিয়ে ধরার। বিশ্ব খুঁজে পায়নি নতুন চ্যাম্পিয়ন।

সেমিফাইনালে ফ্রান্স ২-০ গোলে বেলজিয়ামকে এবং ২-১ গোলে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ক্রোয়েশিয়া।

ফ্রান্স একাদশ : হুগো লরিস (গোলরক্ষক, অধিনায়ক), স্যামুয়েল উমতিতি, রাফায়েল ভারান, লুকাস হার্নান্দেজ, বেনজামিন পাভার্দ, আন্তোইন গ্রিজম্যান, এনগোলা কন্তে (স্টিফেন জনঞ্জি), পল পগবা, অলিভিয়ের জিরু, ব্লেইস মাতুইদি এবং কাইলিয়ান এমবাপ্পে।

ক্রোয়েশিয়া একাদশ : ড্যানিয়েল সুবাসিচ, সিমে ভারসালইকো, ইভান স্ট্রিনিচ, ডেজান লভরেন, ডোমাগজ ভিদা, ইভান রাকিটিচ, লুকা মদ্রিচ (অধিনায়ক), ইভান পেরেসিচ, ব্রোজোভিচ, মারিও মানজুকিচ, আনতে রাবিচ


Spread the love

Leave a Reply