অফশোর তহবিল বিষয়ে ক্যামরনের স্বীকারোক্তি : পদত্যাগ দাবি

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্ক:

অবশেষে অফশোর তহবিল থেকে লাভবান হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। পানামা পেপার্স ফাঁসের পর থেকে এ বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেন, তার বাবা অফশোর ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখান থেকে তিনি লাভবান হয়েছেন।

শুক্রবার প্রধান শিরোনামে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানায়, এই প্রথম যুক্তরাজ্যের কর ফাঁকি দিয়ে অফশোর অ্যাকাউন্ট করা এবং সেখান থেকে লাভ পাওয়ার কথা স্বীকার করলেন ডেভিড ক্যামেরন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়ার পরপরই বিরোধীদল থেকে তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। তবে এখন পর্যন্ত ক্যামেরন অবৈধ বা নিয়মের বাইরে কিছু করেছেন, এমন নথি পাওয়া যায়নি।

কর ফাঁকি দেওয়ার বিষয়ে বরাবরই সরব ছিলেন ডেভিড ক্যামেরন। তবে যুক্তরাজ্যের কর ফাঁকির সঙ্গে পরিবারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তাকে লজ্জায় ফেলে। পানামা পেপার্সের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, ক্যামেরনের শেয়ার ব্যবসায়ী বাবা অফশোর ট্রাস্টে অর্থ রেখেছিলেন।

পানামা পেপারস ফাঁস হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিভিন্ন তথ্য জানানো হয়। একবার বলা হয়, এটি সম্পূর্ণ ‘ব্যক্তিগত ব্যাপার’। পরে বলা হয়, এ মুহূর্তে ট্রাস্টে প্রধানমন্ত্রীর কোনো সংযোগ নেই। আবার এ কথাও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের কেউ ট্রাস্ট থেকে লাভবান হতে পারবেন না। তবে বৃহস্পতিবার নিজেই সব বিস্তারিত জানালেন ক্যামেরন।

ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম আইটিভিকে ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ২০১০ সালে ট্রাস্টে থাকা নিজের অংশ তিনি বিক্রি করে দেন। এর কয়েক মাস পর তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হন। ট্রাস্টে ক্যামেরনের অংশের মূল্য ছিল প্রায় ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। পানামাভিত্তিক ট্রাস্টের ব্রিটিশ কর দেওয়ার কথা নয়। এরপরও প্রধানমন্ত্রী ও তার বাবা ব্রিটিশ কর পরিশোধ করেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, আমার কোনো কিছু লুকানোর নেই। এসময় তিনি জানান, তিনি তার বাবাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন। একইসঙ্গে বাবার কাজ ও ব্যবসা সমর্থন করেন তিনি।

আগামী ১২ মে বড় পরিসরে একটি দুর্নীতিবিরোধী সম্মেলনের আয়োজন করবে লন্ডন। ওই অনুষ্ঠানের এক মাস আগে পরিবারের সদস্যদের কর ফাঁকির তথ্য ফাঁস হওয়াতে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন। কারণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি সচরাচর জোরালো বক্তৃতা দিয়ে থাকেন।

বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, দূরবর্তী যেসব ভূখণ্ড আছে সেখানকার জন্য ‘প্রত্যক্ষ আইন’ প্রণয়ন এবং যুক্তরাজ্যের কর আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা আরোপের বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিত। এ বিষয়ে ব্রিটেনের জনগণের ‘ক্ষোভের’ বিষয়টিকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলেছে, যুক্তরাজ্য বরাবরই করের ব্যাপারে স্বচ্ছতার ‘শিখরে’ ছিল।

কর ফাঁকির বিষয়ে আরও কঠোর হতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে করবিন বলেন, বিত্তবানদের জন্য এক রকম কর আইন আর জনসাধারণের জন্য অন্য রকম হতে পারে না। এই পক্ষপাত এবং অন্যায় অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। শুধু কথায় নয়, বিত্তশালীদের অবশ্যই ন্যায্য কর পরিশোধ করতে হবে।

পানামাভিত্তিক আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার ১ কোটি ১৫ লাখ গোপন নথিপত্র সম্প্রতি ফাঁস হওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কর ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে।

অর্থ পাচার বিষয়ে আলোচিত ‘পানামা পেপারস’ ফাঁস হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে একরকম তোলপাড় শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট দেশের কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে তহবিল রাখার একটি পন্থা হলো অফশোর ট্রাস্ট। এমন ট্রাস্টের মাধ্যমে বিশ্ব রাজনীতি থেকে খেলাধুলা—সব জগতেরই অনেক রাঘববোয়াল অর্থ পাচারে জড়িত বলে জানা গেছে।

তবে এঁদের অনেকেই এটি অস্বীকার করেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একে পশ্চিমা ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন। তার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন আরো অনেকে। তবে অর্থ পাচারের অভিযোগে এরই মধ্যে সরে গেছেন আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।


Spread the love

Leave a Reply