কেন মারা গেল বুনো হাতিটি?

Spread the love

160811095710_bangla_elephant_2_640x360_azizurrahmanchowdhuryবাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ভারতের আসাম রাজ্যে অরণ্য থেকে বাংলাদেশের সীমানায় ঢোকার ৪৯ দিন পর বুনো হাতিটি কেন মারা গেল?

বিবিসি বাংলার এই প্রশ্নে জবাবে এই হাতিটির উদ্ধারের সঙ্গে জড়িত দুজন বন কর্মকর্তা তপন কুমার দে এবং অসীম মল্লিক বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন।

নীচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো:

* দীর্ঘ পথ পরিক্রমার শ্রান্তি: বন কর্মকর্তারা বলছেন, হাতিটিকে শত শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়েছিল। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঢোকার পর বেশিরভাগ সময় হাতিটিকে কাটাতে হয় চরে। হাতিরা সাধারণত তাদের পরিচিত পথ ধরেই চলাফেরা করে। কিন্তু বাংলাদেশের ভেতরে সে অনবরত পথ চলছিল। পথঘাট ছিল অচেনা। সে বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পায়নি। ফলে হাতিটি বেশ পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছিল।

* উপযুক্ত খাদ্যের অভাব: এই ৪৯ দিনে হাতিটি তার প্রয়োজনীয় খাবার তেমন একটা পায়নি। কর্মকর্তারা বলছেন, আসামের জঙ্গলের হাতি যে ধরনের খাবার — গাছের পাতা, গুল্ম, ফল-পাকুড় ইত্যাদি খায় — সেগুলো সে বাংলাদেশে এসে পায়নি। চরাঞ্চলে তাকে নির্ভর করতে হয়েছিল মূলত ঘাস এবং ধানী ফসলের ওপর। ফলে তার দেহে পুষ্টির অভাব দেখা দিয়েছিল। এক পর্যায়ে পানিশূণ্যতা দেখা দেয়। বন কর্মকর্তারা জানান, হাতিটির পানিশূন্যতা মোকাবেলা করতে তারা মোট ১২ লিটার স্যালাইন ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু কোন ফল হয়নি।

160731085642_bd_bangla_elephant_640x360_bbc_nocredit* মানসিক চাপ: বাংলাদেশের জনবসতির কাছাকাছি আসার পর থেকেই হাতিটি মানসিক চাপের মধ্যে ছিল। বন কর্মকর্তারা বলছেন, পুরোপুরিভাবে বুনো বলে মানুষের সঙ্গে তার আগে কোন পরিচয় ছিল না। মানুষের প্রবল আগ্রহ ছিল হাতিটির জন্য ক্ষতিকর। সে সব সময় উত্তেজিত থাকতো। গ্রামের কোন বাড়িতে ঢোকার পর গ্রামবাসীরা তাকে তাড়াতে চাইতো। হাজার হাজার মানুষ তাকে সব সময় ঘিরে থাকতো। তার চারপাশে দিনের বেশিরভাগ সময় হৈচৈ চলতো।

* জলজ পরিবেশ: আসামের অরণ্যের ভূমি-প্রকৃতি সিরাজগঞ্জ বা জামালপুরের ভূমি-প্রকৃতি থেকে ভিন্ন। আসামের ভূমি উঁচু এবং শুকনো। কিন্তু যমুনা নদীর দু`পাশে জমি নিচু। এখন সেখানে বন্যা চলছে। ফলে প্রায় ৪৫ দিন হাতিটিকে কাটাতে হয়েছে, পানি আর কাদাময় এক পরিবেশে, যা ছিল তার জন্য ক্ষতিকর।

* চেতনা-নাশক ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার হাতিটির মৃত্যুর পেছনে একটা বড় কারণ ছিল কি না? বিবিসি বাংলার এই প্রশ্নের জবাবে বন বিভাগের দুজন কর্মকর্তাই তা নাকচ করেন। তারা জানান, প্রয়োজনের চেয়ে কম ডোজের ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছিল। আর কী পরিমাণ চেতনা–নাশক ব্যবহার করতে হবে, এ বিষয়ে তারা ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের সাথে সার্বক্ষণিকভাবে যোগাযোগ রাখছিলেন। তবে তারা দু`জনেই স্বীকার করেন যে হাতি উদ্ধারের ক্ষেত্রে হয়তো বন বিভাগের অভিজ্ঞতার অভাব ছিল, কিন্তু আন্তরিকতার কোন কমতি ছিল না বলে তারা জানান।


Spread the love

Leave a Reply