তিন বাংলাদেশি জয়

Spread the love

09ea99aafc0c31ff8aeae1b8c01cb3c6-Untitled-1বাংলা সংলাপ রিপোর্টঃ
রুশনারা আলী, রূপা আশা হক ও টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক । বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন কন্যা। ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে এমপি পদে লেবার দলের হয়ে লড়ে জয় পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ৭ মে দেশটির সাধারণ নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ভোট নেওয়া হয়। এবারের নির্বাচনে যুক্তরাজ্যের প্রধান তিনটি দল থেকে মোট ১২ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী এমপি পদে লড়েছেন। তাঁদের মধ্যে লেবার দল থেকে সাতজন, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দল থেকে তিনজন ও কনজারভেটিভ দল থেকে একজন এবং ইউনাইটেড কমিউনিটি পার্টি থেকে একজন মনোনয়ন পেয়েছেন। এই ১২ জন প্রার্থীর মধ্যে বিশেষ করে রুশনারা, টিউলিপ ও রুপার দিকে ছিল সবার দৃষ্টি। লর্ড অ্যাশক্রফট পরিচালিত আসনভিত্তিক জরিপেও তাঁরা এগিয়ে ছিলেন।
সিলেটি কন্যা রুশনারা:
পূর্ব লন্ডনের ‘বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো’ আসনে লেবার পার্টির প্রার্থী রুশনারা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। ৩২ হাজার ৩৮৭ ভোট পেয়েছেন তিনি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী ম্যাথিও স্মিথ পেয়েছেন আট হাজার ৭০ ভোট। গ্রিন পার্টির অ্যালিস্টেয়ার পলসন চার হাজার ৯০৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
গতবারের নির্বাচনে (২০১০ সাল) বাংলাদেশি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের একই আসনে লেবার পার্টির এমপি নির্বাচিত হন রুশনারা। তাঁর এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশিদের অভিষেক ঘটে।
গতবার প্রায় ১২ হাজার ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হন অক্সফোর্ড-পড়ুয়া উদীয়মান রাজনীতিক রুশনারা। এবার ২৪ হাজারের বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন তিনি।
রুশনারা সিলেটি কন্যা। জন্ম বিশ্বনাথে। ১৯৭৫ সালে জন্ম নেওয়া রুশনারা প্রথমবার যুক্তরাজ্যের এমপি নির্বাচিত হয়ে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও শিক্ষা-বিষয়ক ছায়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি পার্লামেন্টারি ট্রেজারি সিলেক্ট কমিটির সদস্য হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করেন।
রুপার আদি বাড়ি পাবনা:
লন্ডনের অন্যতম আলোচিত ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে লেবার পার্টির প্রার্থী রুপা হক জয় পেয়েছেন। তিনি ২২ হাজার দুই ভোট পেয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী এঞ্জি ব্রে পেয়েছেন ২১ হাজার ৭২৮ ভোট।
এর মধ্য দিয়ে গতবার কনজারভেটিভ পার্টির কাছে হারানো ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনটি পুনরুদ্ধার করল লেবার পার্টি। আসনটি এবার লেবার পার্টির অন্যতম ‘টার্গেট সিট’ ছিল।
এবারের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ১০টি আসনের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল রুপার আসনটি। এ কারণে এই আসনের প্রতি গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টি ছিল ভিন্ন, সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জও ছিল অন্য রকম।
ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটনে গতবার তিন হাজার ৭১৬ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী এঞ্জি ব্রে। কনজারভেটিভ পার্টির বাজেট কাটছাঁটের কারণে এই এলাকার চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র (জিপি সার্জারি) বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। জনগণের এই ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে আসনটি দখলে নেন লেবার পার্টির রুপা।
কিংস্টন ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক রুপা হক। ১৯৭২ সালে লন্ডনের ইলিংয়ে জন্ম নেওয়া রুপার আদি বাড়ি পাবনায়।
বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ:
লন্ডনের সবচেয়ে আলোচিত হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে লেবার পার্টির প্রার্থী টিউলিপ জয়ী হয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ ২৩ হাজার ৯৭৭ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী সায়মন মার্কাস পেয়েছেন ২২ হাজার ৮৩৯ ভোট। লিবারেল ডেমোক্র্যাটস পার্টির মাজিদ নাওয়াজ তিন হাজার ৩৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
২৩ বছর ধরে লেবার পার্টির দখলে থাকা আসনটি ধরে রাখা টিউলিপের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কনজারভেটিভ পার্টি এবার এই আসনটিকে ‘টার্গেট সিট’ বানায়। এসব কারণে আসনটির প্রতি গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টি ছিল ভিন্ন, সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জও ছিল অন্য রকম।
হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে ১৯৯২ সাল থেকে লেবার পার্টির এমপি ছিলেন অস্কার জয়ী অভিনেত্রী গ্লেন্ডা জ্যাকসন। গত নির্বাচনে তিনি মাত্র ৪২ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। এবার এই ব্যবধান আরও বাড়িয়েছেন টিউলিপ। কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থীকে এক হাজার ১৩৮ ভোটের ব্যবধান হারিয়েছেন তিনি।
গ্লেন্ডা জ্যাকসন অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিলে লেবার পার্টির স্থানীয় সদস্যদের ভোটে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে এমপি পদে লড়াইয়ের মনোনয়ন পান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ। এবারই প্রথম এমপি পদে নির্বাচন করলেন তিনি। প্রথমবারই পেলেন জয়।
লন্ডনের মিচামে জন্ম নেওয়া টিউলিপ কিংস কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৫ বছর বয়স থেকে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নে বসবাস করছেন তিনি। পড়েছেন এই এলাকার স্কুলে। ২০১০ সালে স্থানীয় ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম বাঙালি নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি।


Spread the love

Leave a Reply