বাংলাদেশে স্বচ্ছ নির্বাচন চায় যুক্তরাজ্য

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ঢাকা সফররত বৃটিশ ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও)-এর দক্ষিণ এশিয়া, জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ অব উইম্বলডন বলেছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। সে কারণে বাংলাদেশেও স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচন প্রত্যাশা করে বৃটেন। সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দেয়া বক্তৃতা এবং পরবর্তী প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বৃটিশ মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশের নির্বাচনের স্বাচ্ছতা নিয়ে ‘সন্দেহ’ থেকে তিনি এটি বলছেন নাকি নিতান্তই এটা তার আশাবাদ? জবাবে মন্ত্রী মুচকি হেসে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে লর্ড তারিক আহমদ বলেন, নানান চর্চার মাধ্যমেই গণতন্ত্র স্থির হয়। বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে, সেটা এ দেশের জনগণই ঠিক করবে। তবে কোনো দেশের উন্নয়ন ধরে রাখতে হলে অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি আবশ্যক। এ সময় তিনি বিরোধী দল ও মতের স্থান করে দেয়া যে কোনো সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন।
বৃটিশ মন্ত্রীর ভাষ্যটি ছিল এমন- ‘মানবাধিকারকে শক্তিশালী করতে ঢাকা কিংবা লন্ডন কিংবা জাতিসংঘ যেখানেই প্রয়োজন আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে তা নিয়ে কাজ করবো। যারা সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে সম্মান এবং সহনশীলতাকে উৎসাহিত করে আমরা সব সময় তাদের পাশে আছি। এটি সুশীল সমাজের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক বিরোধীদলগুলোর জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা সরকারের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ পরবর্তী নির্বাচানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধান নির্বাচনের স্বচ্ছতা এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতের কথা বলেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ইনশাআল্লাহ্‌ বাংলাদেশের নাগরিকরা একটি উন্মুক্ত এবং কার্যকরী ভোটের মাধ্যমে পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচন করবে।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পরম বন্ধু এবং উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বৃটেনের বার্তা খুবই স্পষ্ট। তা হলো- আপনাদের এবং আমাদের প্রত্যেকের জন্য এই স্বতন্ত্র সম্পর্ক এবং বন্ধুত্ব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ নিয়ে এতটা আগ্রহের কারণ ব্যাখ্যা করে লর্ড তারিক বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল শুধু নয়, বিশ্বের মানচিত্রে এখন বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই নানান বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে বৃটেন। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের নেতৃত্বকে বৃটেন স্বাগত জানায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইন্ডিয়ান ওশান রিম এসোসিয়েশনের (আইওআরএ) চেয়ারের দায়িত্ব পেতে চলেছে বাংলাদেশ। আমরা আশা করি- খুব ভালোভাবে দেশটি এর নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে। বৃটিশ মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা করছে। এই সংকট সমাধানে বৃটেন সব সময় বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়নে তার দেশ সহায়তা দিয়ে আসছে। এই খাতে নতুন করে আরও ৫৪ মিলিয়ন ইউরো সহায়তার ঘোষণা দিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মিস্টার আহমেদ বলেন, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বকে গুরুত্ব দিই। আগেও আমরা বন্ধু ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছিলাম এবং এখনও দেশটির উন্নয়ন যাত্রায় সঙ্গে আছি। তিনি বলেন, গত ৫০ বছরে সম্পর্ক কেমন ছিল সেটি নয়, বরং আগামী ৫০ বছরে সম্পর্কে কী রূপান্তর হয় সেটি চিন্তা করতে হবে। যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ এশিয়া ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী ও সংঘাতে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রতিনিধি লর্ড (তারিক) আহমেদ অফ উইম্বলডন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তিনদিনের সফরে সোমবার সকালে ঢাকায় এসেছেন। বাংলাদেশে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হবে। তাছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে তার এরই মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সেই সব বৈঠকে আগামী ৫০ বছরের বন্ধুত্ব, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতা ঘনিষ্ঠকরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা প্রকল্পে বৃটেনের আর্থিক সহায়তার সুযোগ ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আলোচনা করছেন তিনি। বুধবার, লর্ড আহমেদ ইন্ডিয়ান ওশান রিম এসোসিয়েশন কাউন্সিল অফ মিনিস্টারস-এ বৃটেনের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাছাড়া আজ তিনি কক্সবাজার পরিদর্শন করবেন এবং মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার বিষয়ে আলোচনা করবেন।

বৃটেনের সঙ্গে সম্পর্ক ঢেলে সাজাতে চায় বাংলাদেশ:
এদিকে লর্ড আহমেদের বক্তৃতা শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বৃটেনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ককে ঢেলে সাজাতে চায় বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমপ্রতি লন্ডন সফরে এ বার্তা দিয়েছেন। ‘বাংলাদেশ-বৃটেন ৫০ বছর’- শীর্ষক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী যা বোঝাতে চেয়েছেন, তা হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো হলেও প্রথাগত লেন্স বা প্রিজম দিয়ে দেখার বিষয়টি পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা আছে। সামগ্রিকভাবে সম্পর্কোন্নয়নে ‘আউট অফ দ্য বক্স’ চিন্তা করলে দু’দেশের জন্য ভালো হবে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার কাহিনী পরিবর্তন করেছিল বাংলাদেশ। ৫০ বছর পর একই কাজ আবার করছে দেশটি। এই অঞ্চলে জরুরি স্থিতিশীলতা ও কানেক্টিভিটি সেবা প্রদানে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন গল্পের সূচনা করছে বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৃটেন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে দুই দেশের সম্পর্কে আরও অগ্রগতি হবে। যুক্তরাজ্য ভ্রমণের রেড লিস্ট থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেওয়ায় দেশটিকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রসচিব। দক্ষিণ এশিয়া ও ইন্দো-প্যাসিফিকে ভূ-অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, বাংলাদেশ কোনো ধরনের আগ্রাসী মনোভাব প্রদর্শন করছে না। আমরা আশা করি বাংলাদেশের এই মনোভাবকে আন্তর্জাতিক অংশীদাররা প্রশংসা করবে। আমরা এও আশা করি, পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে অংশীদাররা সম্পর্ক ঢেলে সাজাবেন।


Spread the love

Leave a Reply