প্রবাসেও কেন বাংলাদেশের রাজনীতি, দলাদলি

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্ক: পর্তুগালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দু’টি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্রবাসীদের মাঝে এক ধরনের ভয় তৈরি হয়েছে বলে তাদের অনেকে জানিয়েছেন।

বিভিন্ন সময় ইউরোপ, আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দলাদলি এবং সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার অনেকে অভিযোগ ওঠে।

প্রবাসীদের অনেকে বলেছেন, বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীদের একটা বড় অংশ সেই সব দেশে মূলস্রোতে অংশ নেন না এবং তারা বাংলাদেশের বড় দুই দলের নামে এবং জেলা-উপজেলার সমিতি গঠন করে দলাদলি, কোন্দল বা সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন।

এই বিষয়গুলো বাংলাদেশিদের বিদেশে অভিবাসনের ক্ষেত্রে অনেক সময় সমস্যা তৈরি করে বলে তারা মনে করেন।

পর্তুগাল আওয়ামী লীগের একটি কর্মসূচি (ফাইল ফটো)।
পর্তুগাল আওয়ামী লীগের একটি কর্মসূচি (ফাইল ফটো)।

পর্তুগালে থাকা বাংলাদেশিদের বড় অংশ দেশটির রাজধানী লিসবনের যে এলাকায় থাকেন, সেখানে গত শনিবার দিনের বেলা রাস্তার ওপর প্রবাসীদের দু’টি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

তাদের মধ্যে এর আগে সংঘর্ষ হলেও এবার সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনা পর্তুগালের পুলিশ এবং সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

লিসবন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি নাঈম হাসান বলছিলেন, সেখানে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অনেক অনিয়মিত অভিবাসী আছেন, এই সংঘর্ষের ফলে তাদের মাঝে কঠোর নিয়মের মুখোমুখি হওয়ার একটা আশংকা তৈরি হয়েছে।

মি. হাসান উল্লেখ করেছেন, পর্তুগিজ কিছু গণমাধ্যমে এই খবরটির সাথে উগ্রতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে সেখানে বৈধভাবে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝেও ভয় তৈরি হয়েছে বলে তিনি মনে করছেন।

তিনি আরও জানিয়েছেন, এবার সংঘর্ষ হয়েছে নেতাদের ব্যবসায়িক এবং বাংলাদেশের একটি এলাকার সমিতির নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ থেকে।

ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের দলাদলির অভিযোগ বিভিন্ন সময় উঠেছে। প্রবাসীদের অনেকে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, প্রথমে বাংলাদেশের কোনো জেলা বা উপজেলার নামে কয়েকজন মিলে সমিতি করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই সেই সমিতি বিভক্ত হতে থাকে।

বাংলাদেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির রাজনীতি নিয়েও প্রবাসীরা ব্যাপক তৎপর। তারা এসব দলের ব্যানারে সেখানে কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন।

কুমিল্লার পলিন নার্গিস লন্ডনে দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস করছেন। তিনি ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের সাথে জড়িত।

তিনি বলছিলেন, প্রবাসীদের বেশিরভাগ সংগঠনে সমন্বিত কোনো টার্গেট থাকে না।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ক'জন কেন্দ্রীয় নেতা।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা।

তিনি বলেছেন, “ব্রিটেনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠনগুলোতে যেহেতু সমন্বিত টার্গেট থাকে না, সেকারণে কোন্দল বা বিভক্তি একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

ইউরোপ, আমেরিকা এবং এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশসহ যেসব দেশে বাংলাদেশি রয়েছেন, তারা নিজেদের জেলা উপজেলার নামে সমিতি যেমন করেন, একইসাথে আওয়ামী লীগ, বিএনপির শাখা গঠন করে দেশের রাজনীতিও সেখানে করেন। ফলে সেখানেও দলাদলি ও বিরোধ লেগে থাকে।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দলগুলো বিদেশে কোনো শাখা রাখতে পারে না। কিন্তু এরপরও বিদেশে কমিটি গঠন থেকে শুরু করে তাদের প্রশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে দলগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।

তিনি বলেন, “বিদেশে আওয়ামী লীগের কোনো শাখা নেই। বিদেশে আওয়ামী লীগের সমর্থিত কর্মী বা নেতারা যারা আছেন, তারা অনেক সময় হয়তো সেখানে সংগঠন করেন তাদের সেই দেশের আইন মেনে। এর সাথে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা নেই।”

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভিও বলেছেন বিদেশে তাদের কোন শাখা নেই।

তিনি বলেন, “যারা জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, এমন অনেক লোক বিদেশে আছে, তারা একটা ক্লাবের মতো করে।”

“আরেকটা দিক হচ্ছে, বাংলাদেশ এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে আছে, দেশের মধ্যে তো কোনো মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই, সেজন্য দলের অনেকে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে, বিশেষ করে বিরোধী দল ও মতের যারা আছে তারা। সেখানে তারা ভয়েজ রেইজ করে- এটা হতে পারে।”

আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির এই নেতারা অবশ্য মনে করেন, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশে এখন দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের প্রাবসীরা মূলস্রোতে অংশ নেয়ার বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবাসে যারা দেশের রাজনীতি নিয়ে তৎপর থাকেন, তাদের অনেকেই নানা রকম স্বার্থ বা দেশে ভবিষ্যতে নির্বাচন করার আকাঙ্খা থেকে তা করে থাকেন।

যদিও প্রবাসীদের অনেকে বলে থাকেন যে, তারা দেশের প্রতি প্রেম থেকে বিদেশে গিয়েও এর বাইরে যেতে পারেন না।


Spread the love

Leave a Reply