বাংলাদেশ বলছে কোয়ারেন্টিন না মানলে ঘরে তালাবন্ধ করে রাখা হবে

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের টানা ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা এর সংক্রমণ ঠেকানোর একমাত্র উপায় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার সতর্ক করলেও, বাংলাদেশ শুরুতে এই প্রয়োজনীয়তাকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পরও দেখা গেছে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে আসা প্রবাসীরা খেয়াল খুশি মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার সরকারি নির্দেশনা মানছেন না।

এ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আজ (শনিবার) জানিয়েছেন, চলতি মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যতো মানুষ বিদেশ থেকে এসেছেন তাদের তালিকা তৈরি করে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, প্রয়োজনে তালাবদ্ধ করে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশকে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশের অনেক মানুষ এতো দায়িত্বজ্ঞানহীন যে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হলেও তারা জানালা দিয়ে লাফিয়ে, গেটের দরজা দিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য আমরা পুলিশকে বলেছি প্রয়োজনে তাদেরকে তালাবদ্ধ করে রাখতে। তাদের অনেককে তালাবদ্ধ করেই রাখা হচ্ছে।”

“এটা করা হচ্ছে তার ভালোর জন্য, তার পরিবারের ভালোর জন্য। আর মানুষ ভাবছে তাদেরকে জেলে বন্দি করে রাখা হচ্ছে।”

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছে ৫০ জন। এবং হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন প্রায় ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ।

যদি ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে কোয়ারেন্টিন করার প্রয়োজন হয় সেজন্য ঢাকার দুটি স্থান প্রস্তুত করতে সশস্ত্র বাহিনীকে বলা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

শক্ত হচ্ছে জেলা প্রশাসন

তবে এই ভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনা এবং স্থানীয় প্রশাসনের কড়া অবস্থানের ভয়ে কোয়ারেন্টিন নিয়ে সচেতনতা আগের চাইতে কিছুটা হলেও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা।

শিবচরের গোয়ালকান্দা গ্রামের বাসিন্দা ভলু শিকদারও কোয়ারেন্টিন নিয়ে মানুষের চিন্তা ভাবনায় কিছুটা পরিবর্তনের আভাস পেয়েছেন।

চলতি মাসে তার গ্রামে ইতালি ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে বেশ কয়েকজন প্রবাসী বেড়াতে আসেন।

বিদেশ থেকে ফেরার পর সবাইকে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে সরকারি নির্দেশনা দেয়া হলেও সেই প্রবাসীদের কাউকেই তিনি সেটা মেনে চলতে দেখেননি।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি হলেও অনেকে নিয়ম মানছেন না।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি হলেও অনেকে নিয়ম মানছেন না।

বরং ওই প্রবাসীদের তিনি দেখেছেন পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটানোর পাশাপাশি হাটে, বাজারে, মসজিদে, খেয়াল খুশিমতো ঘুরি বেড়াতে।

তবে ৮ই মার্চ যখন করোনাভাইরাসে প্রথম কারও মৃত্যুর খবর প্রচার হয় এবং স্থানীয় প্রশাসন শক্ত অবস্থানে যায় তখন থেকে তিনি দেখতে পান যে এই প্রবাসীদের বেশিরভাগ সতর্ক হয়েছেন।

“বিদেশ থেকে ফেরার পর তারা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতো, বাজারে যাইত, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাইত। কেউ মানা করে নাই। তারা তখন বুঝে নাই আবার আমরাও বুঝি নাই যে এটা এতো ভয়ংকর। এখন এটা সিরিয়াস দেখে আর কেউ ওভাবে চলাফেরা করে না। আমরাও মানা করি।” বলেন মি. শিকদার।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার সতর্ক করা হলেও অনেক প্রবাসী সুযোগ বুঝেই পালিয়ে যান নাহলে বাইরে ঘুরে বেড়ান বলে অভিযোগ করেছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম।

কোয়ারেন্টিন সম্পর্কে জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন:

কোয়ারেন্টিন কী , কেন, কীভাবে করা হয়?

এমন পরিস্থিতিতে তারা এলাকায় মাইকিং করে প্রচার করার চেষ্টা করছেন যে কেউ যদি কোয়ারেন্টিনের নিয়ম লঙ্ঘন করেন তাহলে তাদেরকে সংক্রমণ ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ আইনানুযায়ী জরিমানা করা হবে, ফৌজদারি মামলা করা হবে।

প্রয়োজনে তার বিদেশ যাওয়ার কাগজপত্র জব্দ করা হবে বলেও সতর্ক করা হচ্ছে।

কোয়ারেন্টিনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যদি মানুষ সজাগ না হন তাহলে শুধুমাত্র আইন দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা রীতিমত অসম্ভব বলে জানান মি. ইসলাম।

“মানুষের গায়ে তো লেখা থাকে না যে সে বিদেশ থেকে আসছে। এখন তারা যদি এই সুযোগে ঘুরে বেড়ায় সেটা তো সবার জন্য বিপদজনক। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তো সবাইকে গার্ড দেয়া সম্ভব না। এজন্য ওই মানুষগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় মানুষদের নিজের স্বার্থে হলেও সচেতন হতে হবে। না হলে একদিন তারাও আক্রান্ত হতে পারেন। সচেতনতা ছাড়া শুধু আইন দিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে শুরু থেকেই বলা হচ্ছে যে হোম কোয়ারেন্টিন ছাড়া কোন সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।


Spread the love

Leave a Reply