বারক্লেস ব্যাংকের মাধ্যমে যেভাবে অর্থ পাচার করেন পুতিনঘনিষ্ঠ

Spread the love

বাংলা সংলাপ রিপোর্টঃরাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বন্ধু বিলিয়নিয়ার আরকাদি রোটেনবার্গের বিরুদ্ধে অবরোধ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেই অবরোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে লন্ডনের বারক্লেস ব্যাংকের মাধ্যমে ‘মিলিয়নস’ ডলার পাচার করেছেন। ফাঁস হওয়া ফিনসেন ফাইলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, আরকাদি রোটেনবার্গ হলেন পুতিনের বাল্যকালের বন্ধু। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন তার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। এর অর্থ হলো, পশ্চিমা কোনো ব্যাংক যদি তার সঙ্গে ব্যবসা করে তাহলে তাদেরকে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। কিন্তু বারক্লেস ব্যাংক সেই নিয়মকে উপেক্ষা করে তাকে লাখ লাখ ডলার পাচারে সহায়তা করেছে। জবাবে বারক্লেস ব্যাংক বলেছে, তারা আইন এবং নিয়ন্ত্রণমুলক দায়িত্ব বজায় রেখে কাজ করেছে।

ফিনসেন ফাইলস নামে যেসব গোপন ফাইল প্রকাশ হয়ে পড়েছে তাতে ব্যাংকগুলোর ‘সাসপিসিয়াস একটিভিটি রিপোর্টস’ সবার সামনে এখন। এতে আরো প্রকাশ হয়ে পড়েছে যে,  আরকাদি রোটেনবার্গ নিয়ন্ত্রিত কোম্পোনিগুলো তাদের একাউন্ট কিভাবে গোপন করে রেখেছিল। ইউক্রেনের ক্রাইমিয়াতে আগ্রাসন চালানোর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের মার্চে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট আরকাদি রোটেনবার্গ (৬৮) ও তার ভাই বোরিস (৬৩ )কে রাশিয়ার নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ মহলের সদস্য বলে আখ্যায়িত করে। তারা যখন যুবক ছিলেন তখন একই জুডো জিমে যেতেন এই দুই ভাই ও একই রকম প্রশিক্ষণ পেতেন। কয়েক বছরে আরকাদি রোটেনবার্গের কোম্পানি বিভিন্ন সড়ক, একটি গ্যাস পাইপলাইন এবং একটি বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এসব কাজ তাদেরকে উপহার হিসেবে দিয়েছে রাশিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বলেছে, এই দুই ভাই এই প্রকল্পগুলোর জন্য পুতিনকে সুবিধা দিয়েছেন। গ্যাজপ্রোম এবং সোশি উইন্টার অলিম্পিক তাদেরকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন পুতিন। এ থেকে তারা শত শত কোটি ডলার উপার্জন করেছেন। ২০১৮ সালে আরকাদি রোটেনবার্গের ছেলে ইগোরকে তাদের অবরোধের তালিকায় যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। এসব তালিকায় যাদের নাম আনা হয়, তাদেরকে পশ্চিমা অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নিষিদ্ধ করা হয়। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন থেকে অর্থ সরিয়ে নিতে সক্ষম হন রোটেনবার্গস।
Vladimir Putin with Arkady Rotenberg in 2009
অর্থ পাচার
২০০৮ সালে বারক্লেস ব্যাংক এডভানটেজ এলায়েন্স নামে একটি কোম্পানির নামে একাউন্ট খোলে। ফাঁস হওয়া দলিলে দেখা যায়, এই কোম্পানিটি ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সরিয়ে নিয়েছে ৬ কোটি পাউন্ড। রোটেনবার্গস ভাইদের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করার পরে এর মধ্যে অনেক ট্রানজ্যাকশন বা অর্থ স্থানান্তর হয়েছে। এ বছরের জুলাইয়ে মার্কিন সিনেট রোটেনবার্গসের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তারা অভিযোগ করে, অবরোধ এড়াতে তারা গোপনে অর্থ সরিয়ে নিচ্ছে। এসব কাজে জড়িতদের মধ্যে অন্যতম হলো এডভানটেজ এলায়েন্স কোম্পানি।

মার্কিন তদন্তে দেখা যায়, এই কোম্পানিটির মালিক আরকাদি রোটেনবার্গ। তার এই কোম্পানি লন্ডনে বারক্লেস ব্যাংকের একাউন্ট ব্যবহার করে তার জন্য ‘আর্ট’ কিনতে কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।  এসব আর্ট কেনার বিষয়ে মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের নিলামকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। অবরোধ সত্ত্বেও আরকাদি রেনে ম্যাগ্রিটের অঙ্কনচিত্র লা পোইট্রিনে কিনতে খরচ করেন ৭৫ লাখ ডলার। ২০১৪ সালের ১৭ই জুন আরকাদির সঙ্গে যুক্ত একটি কোম্পানি এই অর্থ মস্কো থেকে পাঠায় লন্ডনে বারক্লেস ব্যাংক একাউন্টে। পরের দিনই বারক্লেস ব্যাংক ওই অর্থ পাঠিয়ে দেয় নিউ ইয়র্কে পেইন্টিংটির বিক্রেতাদের কাছে।
Arkady Rotenberg and Vladimir Putin wearing judo kit in Sochi in February 2019
একাউন্ট ক্লোজড
২০১৬ সালে বারক্লেস ব্যাংকের সন্দেহ হয় রোটেনবার্গসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে। বিভিন্ন একাউন্ট নিয়ে তাদের সন্দেহ হয়। ফলে ওই বছর এপ্রিলে তারা আভ্যন্তরীণ পর্যায়ে একটি তদন্ত শুরু করে। এর ৬ মাস পরে সন্দেহজনক উপায়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের জন্য ওই ব্যাংকটি এডভানটেজ এলায়েন্টের একাউন্ট বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ফাঁস হওয়া সাসপিসিয়াস একটিভিটি রিপোর্টসে (এসএআর’স) দেখা যায়, রোটেনবার্গসদের সঙ্গে সন্দেহজনক সম্পর্ক আছে এমন বেশ কিছু একাউন্ট ২০১৭ সাল পর্যন্ত সচল ছিল। এমন একটি কোম্পানি হলো আইরটন ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। ফাঁস হওয়া ফাইল অনুযায়ী, এই কোম্পানির কর্মকান্ড নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে বারক্লেস। তারা দেখতে পায় যে, এর সত্যিকার মালিক আরকাদি রোটেনবার্গ। তবে রোটেনবার্গ ভাইদের মালিকানাধীন এমন সন্দেহজনক কতগুলো একাউন্ট ছিল সে বিষয়ে বিবিসি প্যানোরমার প্রশ্নের কোন উত্তর দেয়নি বারক্লেস। তবে তাদের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের যেসব কর্মকান্ড পরিচালিত হয় তা আইন ও নিয়ন্ত্রণমুলক বাধ্যবাধকতা মেনেই করা হয়।


Spread the love

Leave a Reply