বিজ্ঞানীরা বলছেন কোভিড-১৯ ভাইরাসের ‌’শত শত’ রূপান্তর হয়েছে

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃযে ভাইরাসটি মানবদেহে কোভিড-১৯ সংক্রমণ তৈরি করে – তার ‘শত শত’ রূপান্তর চিহ্নিত করেছেন ব্রিটেন ও আমেরিকার বিজ্ঞানীরা।

কিন্তু মানুষের মধ্যে এ ভাইরাস ছড়ানো বা এর টিকা আবিষ্কারের ওপর এ রূপান্তর কী প্রভাব পড়বে – তা এখনো কোন গবেষণাতেই বের করা যায় নি।

ভাইরাসের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে সে এক দেহ থেকে আরেক দেহে ছড়াতে থাকার মধ্যেই নিয়মিত নিজে নিজে তার জেনোমের প্রকৃতি পরিবর্তন করতে থাকে – যাকে বলে মিউটেশন বা রূপান্তর।

সব ভাইরাসেরই রূপান্তর হয়।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে: এসব মিউটেশনের ফলে কি এই নতুন করোনাভাইরাস আরো বেশি সংক্রামক বা শক্তিশালী হয়ে উঠছে?

যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় আভাস দেয়া হয়েছে যে একটি বিশেষ মিউটেশন – যার নাম হলো ডি সিক্স ওয়ান ফোর জি – প্রভাবশালী হয়ে উঠছে এবং তা এই রোগটিকে “আরো বেশি সংক্রামক” করে তুলতে পারে।

এই মিউটেশনটি অধিকতর দ্রুতগতিতে সংখ্যাবৃদ্ধি পারে কিন্তু তার ফল কী হয় তা অস্পষ্ট।

গবেষকরা কোভিড-১৯ এর ১৮৯টি মিউটেশন চিহ্নিত করেছেন
গবেষকরা কোভিড-১৯ এর ১৮৯টি মিউটেশন চিহ্নিত করেছেন

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের আরেকটি জরিপে গবেষকরা ১৯৮টি মিউটেশন চিহ্নিত করেছেন।

এ গবেষণার অন্যতম নেতা অধ্যাপক ফ্রাঁসোয়া ব্যালো বলছেন, “মিউটেশন মানেই যে খারাপ কিছু তা নয়, এবং সার্স-কোভ-টু যে আরো মারাত্মক বা আরো বেশি সংক্রামক হয়ে উঠছে – তা আমরা বলতে পারছি না। “

টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন

টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে ভাইরাসের গঠনে সামান্য পরিবর্তনগুলোর ওপরও নজর রাখা দরকার ।

যেমন ফ্লু ভাইরাসে এত দ্রুত মিউটেশন হয় যে প্রতি বছরই ভাইরাসের নতুন প্রকৃতি অনুযায়ী টিকায় কিছু পরিবর্তন করা হয়।

বর্তমানে কোভিড-১৯ এর যে টিকাগুলো তৈরি হচ্ছে তাতে ভাইরাসের গায়ের কাঁটাগুলোকে টার্গেট করা হচ্ছে। এই ভ্যাকসিনটি মানুষের দেহকে এই কাঁটাগুলোর একটা অংশ চিনিয়ে দেবে – যাতে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা তাকে আক্রমণ করে ধ্বংস করতে পারে।

কিন্তু এই কাঁটাগুলো যদি বদলে যায়, তাহলে টিকার কার্যকারিতাও কমে যেতে পারে।

চীনের একটি ল্যাবরেটরিতে টিকা তৈরির গবেষণা চলছে
চীনের একটি ল্যাবরেটরিতে টিকা তৈরির গবেষণা চলছে

অনেক কিছুই এখনো অজানা

তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন পর্যন্ত এগুলো হচ্ছে তাত্ত্বিক কথা। আসলে ভাইরাসের জেনোমের পরিবর্তনগুলোর মানে কী – তা বলার মতো যথেষ্ট তথ্য এখনো তাদের হাতে নেই।

গবেষকরা আরো দেখেছেন যে যুক্তরাজ্যের শেফিল্ডে যারা এই বিশেষ মিউটেশনে আক্রান্ত হয়েছেন – তাদের নমুনায় বেশি পরিমাণে ভাইরাস দেখা যাচ্ছে কিন্তু তাতে যে তারা বেশি অসুস্থ হয়েছেন বা হাসপাতালে বেশি দিন ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের লস আলামোস ল্যাবরেটরির গবেষক দলটি ভাইরাসের গায়ে যে কাঁটার মতো জিনিসগুলো থাকে তাতে কিছু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করছেন। এ জন্য তারা ব্যবহার করছেন একটি ডাটাবেজ – যার নাম জি আই এস এ আই ডি – সব ধরণের ইনফ্লুয়েঞ্জার উপাত্ত বিনিময়ের একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ।

গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়েও একটি জরিপে মিউটেশনগুলোর বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এই গবেষকরা বলছেন, এসব পরিবর্তনের ফলে এটা বলা যায় না যে এতে একটা নতুন ধরণের ভাইরাস সৃষ্টি হচ্ছে। তারা বলছেন, এখন পৃথিবী জুড়ে যা ছড়াচ্ছে তা একই ভাইরাস।

মনে রাখতে হবে এই গবেষণাটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয় নি এবং অন্য বিজ্ঞানীরা এর পর্যালোচনাো করেননি।


Spread the love

Leave a Reply