মীর কাসেম আলীর মৃত্যুুদণ্ড বহাল, হরতালের ডাক জামায়াতের

Spread the love

নিজস্ব প্রতিবেদক:

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার সকালে এ রায় ঘোষণা করেন।

এদিকে, আপিল বিভাগেও মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় বুধবার সারা দেশে হরতালের ডাক দিয়েছে তার দল জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে দলীয় ওয়েবসাইটে বলেন, সরকার মীর কাসেম আলীকে ‘হত্যার ষড়যন্ত্র’ করছে এমন অভিযোগে এনে এর প্রতিবাদে ও কাসেম আলীসহ আটক শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে বুধবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করছি।

মীর কাসেমের আপিলের রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধের সপ্তম মামলার চূড়ান্ত নিষ্পন্ন হলো। মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে হত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ ও নির্যাতনের দায়ে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আলবদর কমান্ডার শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। হত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ, দেশত্যাগে বাধ্য করা, নির্যাতনসহ ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এ রায় ঘোষণা করা হয়।

রায়ে দুটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৬৪ বছর বয়সী মীর কাসেমকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। চারটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হয়। ১১ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল-২-এর তিন বিচারপতি সর্বসম্মত মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলেও ১২ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেমের ফাঁসির সিদ্ধান্ত হয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। ১১ নম্বর অভিযোগে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে এবং ১২ নম্বর অভিযোগে রঞ্জিত দাস লাতু ও টুন্টু সেন রাজুকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।

সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত আটটি অভিযোগে অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের দায়ে মীর কাসেমকে সব মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। মীর কাসেমের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে শহরের যে হোটেলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হতো, সেই ডালিম হোটেলকে ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয় ‘ডেথ ফ্যাক্টরি’।

আপিলে সাতটি অভিযোগে (২, ৩, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১৪ নম্বর) মীর কাসেমের সাজা বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত। এর মধ্যে ১১ নম্বর অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে। আর তিনটি অভিযোগ (৪, ৬, ১২ নম্বর) থেকে তাকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর মধ্যে ১২ নম্বর অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য মীর কাসেম। দেড়শ’ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ এক হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠার আপিলে ১৬৮টি কারণ দেখিয়ে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চান তিনি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মীর কাসেমের আপিলের শুনানি শুরু হয়। পরে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানির সপ্তম দিনে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। এরপর মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য সর্বোচ্চ আদালত মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন রাজধানীর মতিঝিলে ‘নয়া দিগন্ত’ কার্যালয় থেকে মীর কাসেমকে গ্রেফতার করা হয়। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়।


Spread the love

Leave a Reply