ইউকে-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি আরো জোরদার: মন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ
যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ এশিয়া ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী ও সংঘাতে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে যুক্তরাজ্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রতিনিধি লর্ড (তারিক) আহমেদ অফ উইম্বলডন, তিন দিনের সফর শেষে আজ ঢাকা ছেড়েছেন। এই সফরে লর্ড আহমেদ যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতা ঘনিষ্ঠকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা প্রকল্পে যুক্তরাজ্যের আর্থিক সহায়তার সুযোগ ও রোহিঙ্গ্যা সংকট নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বাংলাদেশে সফরকালে লর্ড আহমেদ, যিনি সংঘাতে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে যুক্তরাজ্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রতিনিধি, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশের সুশীল সমাজের ও মানবিক সহায়তা খাতের প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।

এই সফরের বিভিন্ন আলোচনায় লর্ড আহমেদ ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার মর্যাদায় ভূষিত হওয়ার অগ্রযাত্রা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি মনে করেন, যুক্তরাজ্য অর্থ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিষেবায় বিশ্বে নেতৃস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে – এই পরিষেবাগুলো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের সেবা প্রদানের অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক নিয়ম বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান লর্ড আহমেদ। উচ্চ শিক্ষার কার্যকারিতা ও প্রাসঙ্গিকতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের অংশ হিসেবে এমন সুবিধা তরুণ বাংলাদেশীদের আরও নতুন নতুন সুযোগ এনে দিবে এবং সমগ্র শিক্ষা খাতের মান উন্নয়নে সহায়তা করবে।

লর্ড আহমেদ যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে অংশীদারিত্বে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও শিক্ষকবৃন্দের মূল্যবান অবদান নিয়ে আলোচনা করেন। এই কয়েকটি গোষ্ঠী যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সে সম্পর্কে অবগত হয়েছেন এবং মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সমর্থন করার জন্য যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছেন। তিনি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের আগে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি তাঁদের অঙ্গীকারকেও সমর্থন করেন।

ধর্মীয় নেতাদের সাথে তাঁর বৈঠকে লর্ড আহমেদ যুক্তরাজ্য যে ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেয় তা তুলে ধরেন। তিনি ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং লিঙ্গ সমতার মধ্যে সংযোগের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ আয়োজনে উত্সাহিত করেন।

লর্ড আহমেদ কপ২৬ এর ফলাফল নিয়েও আলোচনা করেছেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশের অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার জন্য গুরুত্বারোপ করেছেন। উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ১২০ মিলিয়ন পাউন্ড সহায়তা ঘোষণা করেছে।

১৭ নভেম্বর, লর্ড আহমেদ ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন কাউন্সিল অফ মিনিস্টারে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন। ডায়লগ পার্টনার হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি লর্ড আহমেদ বলেন যে মহামারী, জলবায়ু পরিবর্তন ও ভারত মহাসাগরের সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারের জন্য আইওরার যে ধরনের সহযোগিতা করেছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১৬ নভেম্বর, লর্ড আহমদ কক্সবাজার সফর করেন, যেখানে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী জনাকীর্ণ শরণার্থী শিবিরে কঠিন পরিস্থিতিতে বাস করে। মন্ত্রী একাধিক রোহিঙ্গা পরিবার ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করেন, শরণার্থী শিবিরের জীবনের চ্যালেঞ্জ এবং তাঁরা যে নিপীড়ন সহ্য করেছেন বাংলাদেশে এসেছিলেন সে সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন। শরণার্থীরা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী এবং তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় ও সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তারা আরও ব্যাখ্যা করে যে তারা বাংলাদেশে থাকাকালীন শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

মন্ত্রী শরণার্থী শিবিরে জাতিসংঘের সুসংগঠিত ও সু-সমন্বিত মানবিক সহায়তা কার্যক্রম দেখে প্রশংসা করেন। বিশেষ করে, তিনি সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সঠিকভাবে নিবন্ধনের গুরুত্ব এবং এই প্রক্রিয়া যে খাদ্য ও রান্নার গ্যাসের সু-সমন্বিত বন্টন সম্ভব করেছে তা অনুধাবন করেন। শরণার্থী শিবিরের অবকাঠামো দ্রুত মেরামতের মাধ্যমে একটি ভালো মান বজায় রাখা হচ্ছে যেখানে আবহাওয়ার কারণে জীবন বিপন্ন হতে পারে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ইতিবাচক ভাবে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার বিষয়টি লক্ষণীয় ছিল।

নিরাপত্তার অবনতি, বিশেষ করে নারী এবং কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা হুমকি সহ, শরণার্থী শিবিরে রাতের অন্ধকারের সময় যে সমস্যা দেখা দেয় তা শুনে মন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি এবং নিরাপত্তার বৃদ্ধিতে সরকারের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জানতে পেরে সন্তষ প্রকাশ করেন।

লর্ড আহমদ বললেন:

“রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসকারীদের প্রতি সম্প্রতি সহিংসতার ঘটনা আমি খুবই দুঃখজনক মনে করি। সেখানে বসবাসকারী শরণার্থীদের মধ্যে আমি যে আত্নমর্যাদা ও দৃঢ়তা দেখেছি তাতে আমি অনুপ্রাণিত। এই মানবিক সঙ্কট মোকাবেলার জন্য যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে ৩২০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে। রোহিঙ্গারা তাঁদের নিজ দেশে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সাথে যতদিন ফিরে যেতে না পারে ততদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে আমাদের কাজ চালিয়ে যাব।“

১৫ নভেম্বর, লর্ড আহমেদ বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের ৫০ বছর উদযাপন করতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। লর্ড আহমেদ বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের অর্থ সহায়তায় ৫৪ মিলিয়ন পাউন্ডের নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করেন। এই অর্থ সহায়তা বাংলাদেশের সব শিশুর, বিশেষ করে কন্যাশিশুদের জন্য, শিক্ষায় ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে, এতে শিশুরা ও তাদের পরিবার উপকৃত হবে।

এবারের বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে লর্ড আহমেদ বলেন,

“এই সপ্তাহের সফরে উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য আমি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ। গত তিন দিনে আমি যাদের সাথে দেখা করেছি ও আলোচনায় যুক্ত হয়েছি তাতে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমাদের গভীর সম্পর্ক ও ভবিষৎ সমৃদ্ধির সংযোগ উদযাপন করতে পেরে আনন্দিত। পরিশেষে, আমি বাংলাদেশের সকলকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনেক অভিনন্দন জানাই। আমি আশা করি, আপনারা সবাই ব্রিট বাংলা বন্ধনের দীর্ঘায়ুর জন্য আন্তরিক শুভকামনা জানাবেন।“


Spread the love

Leave a Reply