রাজনৈতিক অস্থিরতা স্বত্তেও বিশ্ব এজতেমা শুরু টঙ্গীতে
নাজমিন রিয়া, বাংলাদেশ
বাংলাদেশের ঢাকায় চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা চললেও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা তাদের অন্যতম বৃহৎ সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমাই অংশগ্রহণ করেছেন। বিএনপির লাগাতার অবরোধের মধ্যেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো তৎপরতার মধ্যে টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা। দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে গতকাল শুক্রবার ভোরে ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয় তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে ইজতেমার মাঠ। টঙ্গী এখন পরিণত হয়েছে ধর্মীয় উৎসবের নগরীতে।
পাকিস্তানের মাওলানা মো. এহসানের আম বয়ানের মাধ্যমে এবারের ইজতেমার মূল কাজ শুরু হয়। বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মো. আব্দুল মতিন। পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষায় এই বয়ান তরজমা করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার আছরের পর থেকেই ভারতের মাওলানা আহম্মদ লাট ময়দানে আগত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ঈমান, আমল ও আখলাকের প্রাক বয়ান শুরু করেন। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বিক মঙ্গল কামনা করে শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন। আগামী রোববার যোহরের নামাজের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব।
এর ৪ দিন পর ১৬ জানুয়াারি থেকে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ১৮ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে ওই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে। লাগাতার অবরোধের মধ্যেও গত কয়েক দিনে দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ মুসল্লি টঙ্গীর ময়দানে এসে ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার মুসল্লিও এসেছেন। ইজতেমা ময়দানে বেলা শুক্রবার দেড়টার দিকে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ পড়েন মুসল্লিরা। ইজতেমায় বিদেশি ও সাধারণ মুসল্লিদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ, আনসার ও র্যাব সদস্যসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. হারুন উর রশিদ বলেন, এবারের ইজতেমা উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র্যাব পুলিশসহ এবার ১২ হাজারের মতো নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন রয়েছে।
দুই পর্বের ইজতেমার মূল ৬ দিনই র্যাবের (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন) হেলিকপ্টার টহল থাকবে। খিত্তায় খিত্তায় সাদা পোশাকে র্যাব সদস্যরা অবস্থান করবেন। থাকবে র্যাবের কন্ট্রোল রুম ও পেট্রোল ডিউটিও। র্যাব সদস্যরা ৫ স্তরে নিরাপত্তা দেবে। মাঠে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ এবং মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে বিনামূল্যে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্প স্থাপনসহ টঙ্গী সরকারি হাসপাতালেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে রোগী নেওয়ার জন্য রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স। এদিকে সম্পূর্ণ অনানুষ্ঠানিক ও সভাপতিত্বহীন এ সম্মেলনে যোগ দিতে দেশ-বিদেশের লাখো মানুষ এখনও টঙ্গীর পথে। ইজতেমা শুরু হয়ে যাওয়ার পরও অন্যান্য দিনগুলোর কর্মসূচিতে থাকতে দেশের বিভিন্ন জেলার মুসল্লিদের ¯্রােত এখন টঙ্গীমুখী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও মুসল্লিদের আগমন অব্যাহত রয়েছে। মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকেই দুই দফায় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।