লন্ডনে টাইগারদের রেকর্ড

Spread the love

বাংলা সাংলাপ ডেস্কঃসকাল থেকেই ওভালের মাঠে বাংলাদেশের সমর্থকদের দাপটে কোণঠাসা প্রোটিয়া দর্শকরা। টসে হারলেও ব্যাট করতে নেমে মাঠেও দাপট দেখাতে শুরু করলো বাংলাদেশ দল। ব্যাটে যত ঝড় উঠছে গ্যালারি ততোই ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে কেঁপে উঠছে। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপেই নিজেদের সর্বোচ্চ ওয়ানডে স্কোর ৩৩০ রান তুলতে খরচ হয়েছে মাত্র ৬ উইকেট। এমন ব্যাটিং দাপটে যেন কোনঠাসা দক্ষিণ আফ্রিকা। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান উপমহাদেশের তিন দল বিশ্বকাপ শুরু করেছে ব্যাটিং বিপর্যয়ে। তাই টাইগারভক্তদের মনে ছিল ভয় আর শঙ্কা। তবে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ, সৌম্য সরকাররা সেই ভয় উড়িয়ে সমর্থকদের দিয়েছেন দারুণ ব্যাটিংয়ে ঈদ উপহার।

মাঠে আসা লন্ডন প্রবাসী দর্শকরাও তেমনই বলছিলেন। ওহ! বলে রাখা ভালো আর একদিন পরেই হতে পারে ইংল্যান্ডে প্রবাসী মুসলিমদের জন্য ঈদের দিন। তবে যাই হোক ঈদের আগে টাইগাররা তাদের উপহার দিয়েছে বলেই জানালেন বেশ কয়েকজন ভক্ত। এর আগে বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ ৩২৯ রানের ইনিংসটি ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে।
সকালে টসে হেরে ব্যাট করতে নামার সময় বাউন্সারের ভয় ছড়িয়ে গিয়েছিল দর্শকদের মাঝেও।

শুরু থেকেই পাওয়ার প্লে দারুণ কাজে লাগিয়েছেন তামিম ও সৌম্য, দুজনের ওপেনিং জুটিতে এসেছে ৬০ রান ৫০ বলে। দু’জন এগিয়ে যাচ্ছিলেন অন্তত সতর্কতার সঙ্গে। যেমনটা এই উইকেটে ব্যাটিংয়ের প্রয়োজন সেটাই করছিলেন তারা। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাশরাফি বলেছিলেন ইংল্যান্ডের উইকেটে তিনশ করতে হলে হতে হবে ভীষণ সতর্ক। দুই ওপেনার যেন অধিনায়কের কথাই পালন করছিলেন। অবশ্য ম্যাচের পঞ্চম ওভারের শেষ বলে লুঙ্গি এনগিডির বলে স্লিপে কোনোভাবে বেঁচে যাওয়া সৌম্য এগোচ্ছিলেন ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে। কিন্তু হঠাৎ করেই ছন্দপতন। দলের ৬০ রানের সময় আউট হলেন ব্যাটিং ভরসা তামিম ইকবাল।

হঠাৎ ম্যাচের দু’দিন আগে ইনজুরিতে পড়েছিলেন হাতে বলের আঘাত লেগে। শঙ্কা ছিল, তবে শেষ পর্যন্ত তিনি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে একাদশে থাকায় স্বতি ফেরে সবার মাঝে। তবে এদিন ২৯ বলে ১৬ করে আউট হন তিনি। এই আঘাত সামাল দিতে সৌম্যকে সঙ্গ দিতে আসেন সহঅধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে প্রোটিয়ারা হয়তো জানতেন বাংলাদেশের পুরানো রোগটা। একজন আউট হলেই পরের জন সেই পথ ধরে। তাই দ্বিতীয় শিকার পেতে বেশি সময় লাগলো না তাদের। এবার আউট হলেন রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া সৌম্য সরকার। আগে থেকেই জানা ছিল, শর্ট বল হবে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। সেই অস্ত্রেই ক্রিস মরিসের বলে জীবন দিলেন ৩০ বলে ৪২ রান করা সৌম্য। তবে যাওয়ার আগে দলকে পাওয়ার প্লেতে বড় স্কোরের পথ করে দেন সৌম্য।

দলীয় ৭৫ রানে দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর মুশফিকুর রহীমকে নিয়ে দলের হাল ধরেন সাকিব। ২০১৫ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভীষণ চাপে ১১৪ রানে অসাধারণ এক জুটি গড়েছিলেন এ দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। অন্যদিকে সাকিব বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফিফটি করার রেকর্ড ধরে রেখেছেন এ ম্যাচেও। ২০০৭, ২০১১, ২০১৫ প্রতিটি আসরে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফিফটি এসেছে তার ব্যাট থেকে। দলের বিপদ সামলে তৃৃতীয় উইকেটে ১৪২ রানের জুটি গড়েছেন তারা। যেকোনো উইকেটে বিশ্বকাপে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এখানেই থামলেন তারা। স্কয়ার লেগ ফাঁকা দেখে সুইপ করতে গিয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু ইমরান তাহিরে বলের লেংথ সঠিকভাবে বুঝতে না পেরে হলেন বোল্ড। সেই সঙ্গে ৮৪ বলে ৭৫ রানের সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগানো ইনিংসটি থামে। এবারও যেন ফের সাকিবের জুড়ি বাধলেন মুশফিক। নিজের ৭৮ রানের সময় মুশফিক ক্যাচ তুলে দিলেন আন্দিলে ফিকোয়াওর শর্ট বল চালাতে গিয়ে। খুব দ্রুততম সময়ে অকাল মৃত্যু হয় জোড়া সেঞ্চুরির সম্ভাবনার। তাদের সঙ্গে সাজঘরের পথ ধরেন ২১ রান করা মোহাম্মদ মিঠুনও।

দারুণ খেলতে খেলতে ফের পথ হারায় টাইগাররা। দলীয় ২৪২ রানে হারায় ৫ম উইকেট।
সেখান থেকে দলের হাল ধরেন অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
তাদের দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আসে ৬৬ রান। এ জুটিটাই বাংলাদেশকে এনে দেয় ৩৩০ রানের স্কোর। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে যোগ হয় ৮৬ রান। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংসটি এত দিন ছিল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০১৫ বিশ্বকাপে নেলসনে ওই ম্যাচে বাংলাদেশ করেছিল ৩২২ রান।


Spread the love

Leave a Reply