১৪ই ফেব্রুয়ারী নয়, ৩৬৫দিনই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

Spread the love

ভালোবাসা এক পবিত্র ও স্বর্গীয় অনুভূতি যার উৎপত্তি মনের গহীন থেকে এবং এর ব্যাপ্তিও অনেক, সীমান্ত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে, দিগন্ত থেকে আকাশচুম্বী।যেমনটি আমরা দেখতে পাই মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ভালোবাসা, ভাইবোনদের প্রতি পারস্পরিক ভালোবাসা, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, আত্মীয়ের প্রতি ভালোবাসা, দরিদ্রের প্রতি ধনীর ভালোবাসা, ভৃত্যের প্রতি মনিবের ভালোবাসা যেন এক স্বর্গীয় সূধা, এই ভালোবাসাকে সাধারণ কোনো কথা দিয়ে সংজ্ঞায়িত যেমন করা যাবেনা ঠিক তেমনি এর ব্যপ্তিও বোঝানো যাবে না। ভালোবাসা যুগান্তকারী উদাহরন দেখিয়েছেন ছোট্র বায়েজীদ বোস্তামী, মায়ের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ পানি হাতে সারারাত মায়ের শিয়রে দাঁড়িয়েছিলেন, আবার নবী ইয়াকুব (আ:) তারই পুত্র ইউসুফ (আ:) এর চিন্তায় কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, অন্যদিকে ইউসুফ (আ:) তার ভাইদের প্রতি ভালোবাসার এক অনন্ত উদাহরণ দেখিয়েছেন তাদেরকে মাফ করে দিয়ে যারা কিনা তাকে খুন করতে চেয়েছিল। আমরা ইতিহাস থেকে এটিও দেখতে পাই নবী আইয়ুব (আ:) এর প্রতি তার স্ত্রী রহিমার অগাধ ভালোবাসা, আবার অন্যান্য স্ত্রীসহ আয়েশার (রাঃ) প্রতি মুহাম্মদ (সঃ) নিখাদ ভালোবাসা।সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে রাসূল (সঃ) অনেক সময়ে আয়শা (রাঃ) কে হুমায়রা (ছোট্র লাল পাখী) বলেও ডাকতেন। এই ভালোবাসা হলো স্বর্গীয় ভালোবাসা যেখানে নেই কোনো স্বার্থ, নেই কোনো ভেজাল, নেই কোনো কুটিলতা ও জটিলতা বরং রয়েছে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, স্বস্তি, আন্তরিকতা, সহমর্মিতা, দয়া ও প্রশান্তি।

আর এই ভালোবাসার মানদন্ডও হবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি, যেমনটি হাদিসে বলা হয়েছে – ‘‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা এবং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারো সাথে শত্রুতা রাখা।’’(আহমদ, মুসনাদুল আনসার, হাদিস নং২০৩৪১)। অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে – ‘‘তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে সে ঈমানের স্বাদ পায়। ১. আল্লাহ ও রাসূল (সঃ) তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে প্রিয় হওয়া। ২. শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা। ৩. কুফুরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা।’’(বুখারী, কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং:১৫)

পবিত্র কুরআনে বলাহয়েছে – ‘‘এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো না। তোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ মুহসিনদের ভালবাসেন।’’(বাকারা-১৯৫)।অন্যত্র বলাহয়েছে-‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন।’’(বাকারা-২২২)এবং ‘‘আর নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।’’(ইমরান-৭৬)। সৎকর্ম করা, পবিত্রতা অবলম্বন করা, এবং তাকওয়া অবলম্বন করা একে অন্যের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে আকড়িয়ে ধরার কোনো সুযোগ নেই।মানুষের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো মহান আল্লাহর কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়া।আল্লাহ কাদেরকে ভালোবাসেন তাদের কিছু চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্যের কথাও বলে দিয়েছেন।

২৬৯ সালের দিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স নামে একজন খৃষ্টান ধর্ম প্রচারক বা পাদ্রী ও চিকিৎসক ইতালির রোম শহরে বসবাস করতেন।এই ধর্ম প্রচারক একদিকে যেমন ধর্ম প্রচার করতেন, অন্যদিকে তরুণ, যুবক-যুবতীদের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা ও পরিণয় সূত্রের দীক্ষাও দিতেন। তাই তরুণদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু ইতালিতে তখনও খ্রিস্টীয় ধর্ম প্রচার ছিল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তাই খ্রিস্টীয় ধর্ম প্রচারের অভিযোগে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি যখন জেল খানায় বন্দি তখন জনৈক এক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন এতেকরে তার জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায়। কারারক্ষীর সেই মেয়ে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ভালোবাসতে থাকে বা তার প্রেমে পরে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ইতালির তৎকালীন রাজা রাষ্ট্রীয় এক ফরমানের মাধ্যমে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন এবং ১৪ই ফেব্রুয়ারী তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।পরবর্তীতে ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন স্মরণে “ভ্যালেন্টাইন ডে” বা ভালোবাসা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।তখন থেকেই মূলত এই ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস হিসেবে বিশ্বের কিছু কিছু দেশে পালিত হয়ে আসছে। তবে এই দিবসকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে অতিমাত্রায় মদ্যপান ও যৌনতা (যা খ্রিস্টীয় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিরোধী) বৃদ্ধির অভিযোগে ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার ভ্যালেন্টাইন দিবসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।ইংল্যান্ডের প্যুরিটিয়ানরা (প্রোটেস্টান খ্রিস্টিয়ান যারা চার্চ অফ ইংল্যান্ডকে রোমান ক্যাথলিক অনুশীলন থেকে বিশুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন) একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এছাড়াও ইউরোপের অনেক দেশ যেমন অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে ভ্যালেন্টাইন দিবস নিষিদ্ধ হয়েছে।এশিয়ার অনেক দেশ যেমন সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ও ইরানসহ অনেক দেশেই ভ্যালেনটাইন দিবস পালন নিষিদ্ধ।পার্শবর্তী দেশ ইন্ডিয়ার অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ভ্যালেনটাইন দিবসের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। যেমন চন্দ্র প্রকাশ কৌশিক (Chandra Prakash Kaushik)টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেছেন “আমরা প্রেমের বিরোধী নই, তবে যদি কোনও দম্পতি প্রেমে থাকে তবে তাদের অবশ্যই বিয়ে করা উচিত”।তিনি আরোও বলেছেন-“দম্পতিরা যদি দাবি করেন যে তাদের বিয়ের কথা চিন্তা করার জন্য সময় প্রয়োজন, তবে আমরা তাদের বলব যে তারা যদি নিশ্চিত না হয় তবে প্রকাশ্যে একসাথে ঘুরে বেড়িয়ে তাদের প্রেমকে ঘৃণার পাত্র করা উচিত নয়।আর যদি তাই করে, তবে আমরা তাদের বাবা-মাকেও জানিয়ে দেব”।ইন্ডিয়ার আরেকটি রাজনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠী বলেছেন-“রোম্যান্স উদযাপন কিশোর গর্ভাবস্থাকে উৎসাহিত করবে এবং ভারতীয়দের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে রোম্যান্সের ধারণাটি নষ্ট করার পরিবর্তে বরং বাবা-মা এবং সন্তানের মধ্যে ভ্যালেনটাইন দিবসের পরিবর্তে ‘পিতামাতার পূজা দিবস’ করা দরকার”। যে যুক্তিতে আজকালকার তরুণ তরুণীরা এই প্রেমকে জরুরি মনে করে তা হল যে একটু চেনাজানা না হলে, যাচাই না করে তার সাথে কি সংসার করা যায়? প্রশ্ন হল যাচাই করে ভালো না লাগলে তাহলে সরে যাবেন? পরে সমস্যা হবার চেয়ে আগেই কেটে পড়া ভালো!সত্যি কি তাই? যারা প্রেম করে নানা ঘাটের পানি খেয়ে, যাচাই করে নিয়ে সংসার করেন তাঁদের কি ভাঙ্গন নেই?তাহলে কি কারনে এই ভালবাসার মতো একটা শান্তিময় বিষয়কে আমরা উন্মাদনার দিকে কেন ঠেলে দিচ্ছি?

৯০র দশক থেকে বিশেষ করে কিছু অসাধূ ব্যবসায়ীদের কূট চক্রান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে ১৯৯৩ সাল থেকে শুরু হয় ভ্যালেনটাইন দিবস পালন। একই বছর এই দিবস পালনকে বিশেষ ভাবে মিডিয়া কাভারেজে দেয় কিছূ অপরিণামদর্শী মিডিয়াকর্মী। উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা এই দিবসকে লুফে নেয় এক থাবায়, সেই থেকে শুরু হলো বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন দিবস পালন।আর এই দিবসকে কেন্দ্র করে শুরু হয় নানা ধরণের প্ল্যান-প্রোগ্রাম, বিপিনন বাণিজ্য, অশ্লীলতা আরো কত কিছু।

ধীরে ধীরে এই দিবসকে কেন্দ্র করে শুরু হয় নানাবিধ উনুষ্ঠান, কর্মসূচি, কেনাকাটাসহ বিভিন্ন রকমের প্রস্তুতি যেমন-তরুণ-তরুণী, যুগল-যুগলী, কপত-কপোতী ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে মিলিত হয় কোনো এক জায়গায়, তারপর হাতে, গালে, কপালে, থুতনির নিচে উল্কি আঁকা, নিজর্নে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে প্রেম বিনিময় করা, এক সাথে লাঞ্চ, পরে ডিনার করা, পূর্ব নির্ধারিত কোনো হোটেলে যাওয়া, কারো ফ্ল্যাটে যাওয়া সেখানে ভালোবাসার আদান-প্রদান করা, এমনকি শারীরিক সম্পর্ক করা, সবকিছু ঠিক থাকলে এক সাথে রাত্রি যাপন করা ইত্যাদি ইত্যাদি।তরুণ-তরুণীরা তেমন চিন্তা না করে, পরিস্থিতির মধ্যে পরে বা শয়তানের প্ররোচনায় পরে এবং ১৪ই ফেব্রুয়ারির আবেদনে সাড়া দিয়ে পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পরে, যা ভালোবাসার নামে নোংরামি, ভ্রষ্টতা, ও অশ্লীলতা ছাড়া আরকিছু কি? অথচ আমাদের সামনে রয়েছে সেই ঐতিহাসিক হাদিস যেখানে নারী ও পুরুষকে সাবধান করা হইয়েছে এই ভাবে-“যখন কোনো পুরুষ নিজর্নে একাকী কোনো নারীর সাথে মিলিত হয়, সেখানে তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান” (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবী -৩১৮৮)।

বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত, ও গবেষণার ভাষ্যমতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপনের ফলে বিভিন্ন সামাজিক ও শারীরিক সমস্যা সমূহ পরিলক্ষিত হয়।সামাজিক ক্ষতিকর দিক সমূহের মধ্যে রয়েছে-

সমাজ বিজ্ঞানী ও মনস্তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা সর্বাগ্রে অর্থের ও সময়ের অপচয় কথা বলেছেন। ভালোবাসা দিবস পালন করতে তরুণ-তরুণীকে যথেষ্ট রকমের সময়ের অপচয় করতে হয় এই দিবস উদযাপনকে ঘিরে, এই দিনে তারা কি করবে, কোথায় যাবে, কিভাবে উৎযাপন করবে এগুলো ভেবে তারা প্রায়ই হন্ত-দন্তহীন হয়ে পরে। পাশাপাশি, বয়ফ্রেন্ড তার গার্লফ্রেন্ডকে কি উপহার দিবে, কোথায় তারা লাঞ্চ করবে, কোন হোটেলে বুকিং দিবে, কোন রঙের শাড়ী-পাঞ্জাবী কিনবে, কেমন হবে তাদের Identical কেক ও কার্ড, perfect gifts and the fanciest dinner অর্ডার দেয়া ইত্যাদি। এই দিবসকে প্রমোট করার জন্য কিছু সাংবাদিক ও ব্যাবসায়ীতো রেডিই আছে। ১৪ই ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রিক জিনিসপত্রের দাম থাকে অনেক বেশি। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে-২০১৭ সালে শুধু আমেরিকায় এই দিবস পালন করতে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সাবধান করে বলেছেন-“নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই, আর শয়তান হলো তার প্রভুর প্রতি বড়ো অকৃতজ্ঞ(বাণী ইসরাইল-২৭ “)। বাংলাদেশে এইরকম কোন পরিসংখ্যান ও গবেষণা না থাকলেও তরুন-তরুণীদের আর মিডিয়ার হুলুস্থুল দেখে সহজেই অনুমেয় যে কি পরিমান খরচ হতে পারে। একটি বিজাতীয় অপসংস্কৃত পালন করতে যে পরিমান সময় ও অর্থের অপচয় হয়, তা যদি দেশ ও জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য ব্যায় করা যেত, তাহলে নিঃসন্দেহে দেশের কল্যাণ হতো বৈকি।

১৪ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপনের আরেকটি সাংঘাতিক দিক হলো অল্প বয়সে তরুণীর গর্ভধারণ ও গর্ভপাত বৃদ্ধি পাওয়া(Early Pregnancy and abortion increase)।বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে তরুণ-তরুণীর মধ্যে বাঁধ ভাঙা উচ্ছাস, উত্তেজনা অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়।যার ফলে তারা শারীরিক সম্পর্কেও লিপ্ত হয় এবং অনেক সময়ে অতি অল্প বয়সেই তরুণীটি গর্ভধারণ করে থাকে।England’s National Health Service এর ২০১৫ সালের তথ্য অনুসারে, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের সপ্তাহে প্রায় ১৬২৬৩ জন শিশু গর্ভধারণ করেছিলেন।অন্যান্য সপ্তাহের মধ্যে এটি ৬% বেশি। তবে খ্রীষ্টমাস ও থার্টি ফাস্ট নাইটে এই গর্ভধরণের মাত্রা আরো বেশি। এই অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণের ফলে তরুণ-তরুণীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে, তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে ও নানা মানসিক সমস্যা শুরু হয়। CNN এর ভাষ্যমতে ২০১৬ সালে আমেরিকার জনসংখ্যার প্রায় ৪৭.৩% যাদের বয়স ১৮ অথবা উপরে তারা তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা, এবং বিচ্ছেদপ্রাপ্ত অবস্থায় পতিত হয়, যা কিনা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১৫.৭৮ মিলিয়ন। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের নামে বিবাহ বহিঃর্ভুত শারীরিক সম্পর্কের মাত্রা ও কুফল।বাংলাদেশে এই রকম পরিসংখ্যান না থাকলেও অপ্রাপ্ত বয়সে মা হওয়া এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে গর্ভপাতের মাত্রা বেড়েই চলছে। অথচ বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ককে কোন ধর্মই সাপোর্ট করে না।আল্লাহ তায়ালা সাবধান করে নিষেধ করেছেন যে – তোমরা কোনোরকম অশ্লীলতার কাছেও যেয়োনা তা প্রকাশ্যে বা গোপনেই হউক না কেন (আনাম-১৫১)। এথেকে ক্লিয়ার মেসেজ পাওয়া যায় যে বিবাহ বহিঃর্ভুত শারীরিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে হারাম।

এই সময়ে মদ্যপান, উম্মত্ত নৃত্য, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা বৃদ্ধি পায় অনেকাংশে।১৪ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে উদযাপনের জন্য কপোত-কপোতী অধিকাংশ সময়ে রাত্রকে অথবা নিজর্ন এলাকাকে বেছে নেয়। অনেকে আবার এক সাথে জড়ো হয়ে যৌন কাজে লিপ্ত, মদ পান, উম্মত্ত নৃত্য পরিবেশন করে সাময়িক আনন্দ উপভোগ করলেও পরবর্তীতে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে কেননা তাদের মধ্যে থাকে উচ্চাকাঙ্খা ও ক্ষণিক সুখপ্রাপ্তির আশা। আর সেই উচ্চাকাঙ্খা যখন আর মেটানো সম্ভব হয় না তখনই শুরু হয় সম্পর্কের অবনতি। Jonathon Fader Ph.D. writes for Psychology Today তে বলেছেন-“উচ্চ উচ্চাকাঙ্খা আমাদের হতাশার জন্য বহুলাংশে দায়ী, বিশেষত যদি সেই প্রত্যাশাগুলি এক দিনের জন্য বা একদিনকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে”। অনেক সময়ে গড়ে উঠে পরকীয়ার মতো জঘন্য অপরাধ। মদ, অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ তায়ালা সুন্দর উপদেশ দিয়েছেন-“হে মুমিনগণ, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক সরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কাজ, এগুলো থেকে তোমরা বেঁচে থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও” (মায়েদা-৯০)।

১৪ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে তরুণ-তরুণীরা এক অসম ও পারস্পরিক শো-অফ (Show off)প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। নিজেদের মধ্যে দেখা দেয় অবিশ্বাস, jealousy, আরো বেশি বেশি পাওয়ার ও দেখাবার আকাঙ্খা।কে তার বয়ফ্রেন্ড অথবা গার্লফ্রেন্ডকে কত বেশি দামি গিফট দিয়েছে, কত দামি হোটেল বুকিং দিয়েছে, কত দামি গিফট কিনে দিয়েছে, কত দামি কেক ও কার্ড অর্ডার দিয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এই অবস্থা থেকে শুরু হয় নিজেদের মধ্যে টানাপোরোন যা পরবর্তীতে তাদের মধুর সম্পর্কের এক করুন সমাপ্তি ঘটায় যেমনটি Marie Hartwell-Walker, Ed.D বলেছিলেন-“যেহেতু আপনি সত্যিই কখনই জানতে পারবেন না যে কারো সম্পর্কের মধ্যে কী চলছে, তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যের সম্পর্ক দেখে নিজেকে সে ভাবে গড়ে তোলা অসম্ভব, আর সেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে তাদের সম্পর্কের করুন পরিণতি হয়”। আজকে আমাদের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে দেখা যায় এক অসম প্রতিযোগিতা যা কিনা তাদের উন্নত ও মহৎ জীবনকে শুধু ধ্বংসই করে না বরং তাদের ভবিষ্যত হয়ে উঠে বিষাদগ্রস্থ। এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে যুব সমাজ নানা ধরণের ঝগড়া, বিবাদ, বিশৃঙ্খলা, খুন-খারাপি ও ফ্যাসাদে জড়িয়ে পরে। যেখানে আল্লাহ ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীকে মোটেও ভালোবাসেন না, ‘‘আর তারা তো পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়। আর আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না।(মায়েদাহ-৬৪)

বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের কারণে তরুণ-তরুণীর নৈতিক অবক্ষয়, নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার ক্রমাগত বৃদ্ধি সমাজ ও মনস্তাত্বিক বিজ্ঞানীদের মাথায় চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। অশ্লীলতা সমাজে চরম আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব ভালোবাসা নামক অশ্লীল দিবসের সামাজিক ব্যাপ্তির কারণে তরুণ-তরুণীরা বেপরোয়া জীবন যাপন করে, বিবাহ বহির্ভুত দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়, পরকীয়াতে জড়িয়ে পরে। এইতো কয়েকদিন আগে আমরা দেখলাম বিবাহ বহিঃর্ভুত দৈহিক মেলামেশা করতে গিয়ে দিহান কর্তৃক আনুশকার মৃত্যু, আবার পরকীয়ার কারণে মিন্নির বয়ফ্রেন্ড কর্তৃক তার স্বামীকে হত্যা। পত্রিকার পাতা খুললেই এই রকম খুন, ধর্ষণ, যেনা-ব্যভিচার ও পরকীয়ার খবর অহরহ দেখা যায়। সমাজের আজকের এই অবস্থার জন্য কিছু মিডিয়া ও তাদের পেইড এজেন্টরা বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদেরকে এক উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যের দিকে ধাবিত করছে।আল্লাহ তায়ালা অশ্লীলতা প্রমোটকারীদের জন্য রেখেছেন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি-‘‘যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি” (আন-নূর :১৯)। আবার নবী (সঃ) বলেছেন অশ্লীল জনগোষ্ঠী কল্যান বিবর্জিত হবে-‘‘যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা প্রকাশমান, আবার তারাই এর ব্যাপক প্রচারেরও ব্যবস্থা করে, যার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ মহামারি, সংক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট হয়ে দেখা দিবে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনই দেখা যায়নি” (ইবনে মাজাহ, কিতাবুল ফিতান, হাদিস নং-৪০০৯)।গোটা বিশ্ববাসি আজ কভিড-১৯ কে দেখছে।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপনের আরেকটি সামাজিক ক্ষতিকর দিক হলো-এই দিবসকে স্মরণীয়, বরণীয় করে রাখার জন্য অনেক সময়ে তরুণ-তরুণীরা লং ড্রাইভে (long drive) যায় ও বেপরোয়া গাড়ী চালায়।নিজের গাড়ী না থাকলেও দামি ব্র্যান্ডের মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, ওডি গাড়ী হায়ার করে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে বেপরোয়া গাড়ী চালানোর কারণে প্রায়ই তারা দুর্ঘটনার কবলে পরে, এবং মৃত্যুবরন করে, আবার অনেক সময় পঙ্গুত্ব বরণ করে, থমকে যায় তারুণ্য, ভেঙে যায় রঙিন স্বপ্ন আর সঙ্গী হয় সারাজীবনের কান্না। অনেক সময় চিকিৎসার ব্যায়ভার বহন করতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় আবার অনেক সময়ে চিকিৎসার অর্থ যোগান দিতে গিয়ে গোটা পরিবার পথে বসে যায়, হয়ে পরে নিঃস্ব।

আরেকটি সামাজিক সমস্যা তরুণ-তরুণীর মধ্যে অধিকমাত্রায় লক্ষ্য করা যায় এই ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে, আর তাহলো মিথ্যা বলা।তারা স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির টিউশন ফি, এক্সাম ফি, সেমিস্টার ফির কথা বলে ও নানা অজুহাত দেখিয়ে পিতা-মাতার কাছ থেকে পয়সা হাতিয়ে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ফুর্তি করে। যেখানে হাদিসে বলা হয়েছে–‘‘আর নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদিতা নির্লজ্জতা ও পাপাচারের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপাচার জাহান্নামের দিক নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা বলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তাকে “মহা মিথ্যাবাদী” রূপে লিপিবদ্ধ করা হয়” (বুখারি, মুসলিম)।

আরো একটি ভয়ানক সামাজিক ব্যাধির দিকে তরুণ-সমাজ ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে, আর তা হলো সমকামিতা। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস একটি মোক্ষম উপলক্ষ যেখানে সম লিঙ্গের (same sex) মনোভাবাপন্ন মানুষেরা একসাথে জড়ো হয় এবং নিজেরদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান, ভালোবাসা ও প্রেম বিনিময় করে থাকে।এক্ষেত্রে একদিকে যেমন স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির ছাত্র/ছাত্রী রয়েছে ঠিক তেমনি বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর লোক রয়েছে। কিছু সংস্থা, কিছু নাট্য কর্মীরা দেশের মধ্যে সমকামিতাকে (LGBT rights) প্রমোট করার জন্য মাঠে নেমেছে। সমকামিতা এমনি এক ভয়ানক অপরাধ যার জন্য আল্লাহ লুত (আ:) জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আর এই জন্য আল্লাহ বলেছেন-“আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা তারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ”(আরাফ-১৭৯)।

মিডিয়া ও বহুজাতিক কোম্পানি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের মতো একটি গর্হিত কাজকে মানুষের দোরগোরায় পৌঁছে দেয়ার জন্য “ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘ক্লোজআপ কাছে আসার সাহসী গল্প’ নামের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সেখান থেকে নির্বাচিত সেরা তিন গল্প নিয়ে নির্মিত করে ভালোবাসা দিবসের তিনটি নাটক।” এবং তাদেরকে পুরস্কৃতও করা হয়। আর এই প্রতিযোগিতাকে প্যাট্রোনাইস করছে ইউনিলিভার কোম্পানি।সচেতন জনগণ তাকিয়ে দেখছে কীভাবে একটি “হারাম ও গর্হিত” কাজকে “প্রকাশ্যে” নিয়ে আসছে এবং “হারাম বিষয়ে প্রতিযোগিতা করার মানসিকতা” সমাজে ছড়িয়ে দিয়েছে।বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের মত গর্হিত কাজকে এখনই সময় এসেছে “না” বলার।

বিশ্ব ভালবাসা দিবস পালনের একদিকে যেমন সামাজিক ক্ষতিকর দিক রয়েছে, ঠিক তেমনি রয়েছে স্বাস্থ্যগত নানা ক্ষতিকর দিক সমূহ।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালনের মধ্যে দিয়ে যে অবাধ যৌন মেলা-মেশা হয় তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।বিশেষ করে Sexually Transmitted Diseases (STD) এবং Sexually Transmitted Infection (STI)এর প্রাদুর্ভাব ঘটে। STI হলো একটি যৌন রোগ যা যৌন সংস্পর্শের বা যোগাযোগের মাধ্যমে একজনের থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে সংক্রমণ হয়। এছাড়াও সিফিলিস, গনোরিয়া, যৌনাঙ্গে হার্পস ইত্যাদি সহ ঘাতক ব্যাধি HIV এইডসেরও সংক্রমণ হয়ে থাকে।

পাশাপাশি Unwanted pregnancy বেড়ে যাচ্ছে বহুলাংশে।তরুণীগণ এই অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণকে গর্ভপাত করতে গিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরে এমনকি মৃত্যুর মুখে পতিত হওয়ার দৃষ্টান্তও আমরা দেখতে পাই। আরেকটি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির দিক হলো সেক্সচুয়াল এক্সিডেন্ট (Sexual Accident), এক্ষেত্রে তরুণ-তরুণী উভয়েই এর শিকার হতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় তরুণীরাই এর বেশি শিকার হয়ে থাকে। আরও আছে বিকৃত যৌনাচার ও নির্মম শারীরিক কিম্বা মানসিক কষ্টের উদাহরন, দিহানের হাতে আনুশকার মৃত্যু এই সেদিনের ঘটনা মাত্র।

১৪ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসাকে আরো বেশি উপভোগ্য করার জন্য ড্রাগ এবং অ্যালকোহলের অবৈধ ব্যবহার চোখে পড়ার মতো।বিভিন্ন ধরণের যৌন উত্তেজক ঔষধ সেবন ও মদ্যপানের ফলে তরুন-তরুণী উভয়েই পরে স্বাস্থ্য সংকটে। গবেষণায় দেখা যায়–যে সমস্ত তরুণ-তরুণী ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে ভ্যালেন্টাইন ডে উদযাপন করেছে তাদের একটি বৃহৎ অংশ ওই সপ্তাহে হসপিটালের দ্বারস্থ হয়ে থাকে।অত্যাধিক মদ ও যৌন উত্তেজক ঔষধ সেবনের ফলে তাদের কিডনি, লিভার ও ফুসফুসে মারাত্মক রকম জখম ও ক্ষতের সৃষ্টি হয়।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উৎযাপনের আরেকটি common ব্যাধি হলো খাদ্যে বিষক্রিয়া(Food Poisoning)। মাত্রাতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড, তৈলাক্ত খাবার, অতিরিক্তি মিষ্টি জাতীয় খাবার, অপরিকল্পিত ও অপরিমিত খাবার হলো ভালোবাসা দিবস উদযাপনের আরেকটি উপাদান।অতিরিক্ত খাবারের ফলে খাদ্যে বিষক্রিয়ার শিকার হয়ে হসপিটালের বিল গুনতে হয় এমন কি মৃত্যু মুখেও পতিত হতে দেখা যায়।

কাঙ্খিত আদর, আপ্যায়ণ, সময় ও মনোযোগ না পাওয়ার কারণে ভালোবাসা দিবস ভালোবাসার না হয়ে, হয়ে উঠে বিষাদময়। ইউনিভার্সিটি অফ নিউ হ্যাম্পশায়ার (University of New Hampshire)এর এক গবেষণায় দেখা যায়-অনেক সময়ে অনেক লোকের মধ্যে ভ্যালেনটাইন ডে হতাশার অনুভূতি (Depression and anxiety), আত্মসম্মানের কমতি (Low self-esteem) এবং একাকীত্ব (Loneliness) নিয়ে আসে।

লোয়োলা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য সিস্টেমের কার্ডিওলজিস্ট ডঃ বিন আন পি ফান। (Loyola University Health System cardiologist Dr. Binh An P. Phan) বলেছেন-ভালোবাসা দিবসে, ভালোবাসার ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্য পীড়িত লোকেরা ভাঙা হৃদয়ের (broken heart/break up) শিকার হয়, আর এই ব্রেকআপের কারণে হার্টে মাত্রাতিরিক্ত চাপ অনুভব করে, মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ হয়, এমন কি তাদের মধ্যে কোন কোন তরুণ-তরুণী মারা যাওয়া, আত্মহত্যা করা, চাকরি হারানো বা চরম রাগ- গোস্বার মতো ঘটনা ঘটে থাকে।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস শুধুমাত্র সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতিই সাধন করে না বরং মানুষের ঈমান, আকিদা, ধর্মীয় মূল্যবোধকেও ধ্বংস করে থাকে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপন একটি হারাম কাজ এই ব্যাপারে বিশ্বের সমস্ত ওলামা মাশায়েখ একমত।বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের মতো একটি হারাম, ঘৃণ্য, জঘন্য, অশ্লীল ও বেহায়াপনা দিবসকে সামাজিকিকরণের হিড়িক পড়েছে বিভিন্ন মিডিয়া ও কোম্পানির যৌথ প্রযোজনায়। অথচ প্রকাশ্যে পাপাচার করা ও পাপাচার প্রমোট করাকে একটি বড় অপরাধ ও গর্হিত কাজ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিসে নবী কারীম (সঃ)বলেছেন ‘‘আমার সকল উম্মাত মাফ পাবে, তবে পাপ-প্রকাশকারী ব্যতীত।”

আল্লাহ তায়ালা গোটা বছরের ৩৬৫ দিন দিয়েছেন নির্মল ও নিখাদ ভালোবাসার জন্য। আপনার পিতা-মাতা, ভাইবোন, দাদা-দাদি, নানা-নানী, আত্মীয়-স্বজন, ভালো বন্ধু বান্ধব যারা আপনাদের জীবনে প্রভাবশালী, গঠনমূলক ভূমিকা রাখেন, তাদের সকলের সাথে ভালোবাসা প্রকাশ করুন, তাদের খোঁজ খবর নিন, তাদের সাথে সময় ব্যায় করুন, তাদেরকে নিয়ে বাহিরে যান, ঘুরতে যান, এক সাথে রেস্টুরেন্টে এক বেলা খাবার খান, তাদেরকে একটি ফোন করুন, কফি খাওয়ার জন্য বাহিরে নিয়ে যান, তাদেরকে একটি উপহার দিন, এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন ইত্যাদি ইত্যাদি।এই ছোট প্রকাশ ভঙ্গিগুলির আপাত দাম খুবই কম, তবে অবিশ্বাস্যরূপে এর অর্থবহ প্রভাব রয়েছে ।তাই ভালোবাসা প্রকাশ বা উদযাপন করার জন্য বিশেষ কোনো দিন (ভ্যালেন্টাইন ডে) ও অনৈতিক সম্পর্কের (বিবাহ বহিঃর্ভুত সম্পর্কের) প্রয়োজন নেই।বরং বছরের প্রতিটি দিনকে একেকটি ভালোবাসা দিবস মনে করে তাদের খোঁজ খবর নিন ও পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও মজবুত ও সুদৃঢ় করুন। সামাজিক মিথস্ক্রিয়া একটি ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। আমরা যে ঘনিষ্ঠ সামাজিক সম্পর্কগুলি রক্ষা করি, বিকশিত করি তা কেবল আমাদের সুখকে বাড়িয়ে তোলে আর মানসিক চাপ হ্রাস করে তাই নয়, বরং স্ব-মূল্যবোধের বোধকে বিশাল উচ্চতায় নিয়ে যায়, জীবনকে করে তোলে আরও মধুময়, আরও বেশি কল্যানকর, স্বর্গীয় সুধা যেন এই মর্তেই পাওয়া যায়, আর পারস্পরিক সম্পর্ক হয় আরো বেশি ঘনিষ্ঠ।

লেখকঃ ব্যারিস্টার ওয়াহিদ মুহাম্মাদ মাহবুব, সলিসিটর, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস


Spread the love

Leave a Reply