অধ্যাপক ইউনূসের পক্ষে খোলা চিঠি, আদালতে নতুন মামলা

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ বাংলাদেশের শ্রম আদালতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে আরো ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

যেদিন এ মামলা দায়ের হয়, সেদিনই অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে বিশ্বের ১৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি যেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দেয়ার খবর প্রকাশিত হয়।

২৮শে অগাস্ট প্রকাশিত চিঠিতে বলা হয়েছে, অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর বিষয়ে তারা শঙ্কিত এবং এর মাধ্যমে তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে বলে তারা মনে করেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস ‘ধারাবাহিক বিচারিক হয়রানির শিকার হয়েছেন’।

খোলা চিঠিতে যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন – যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস হোর্তা, আয়াল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন ও ইরানের শিরিন এবাদি।

ইউনূস
অধ্যাপক ইউনূস হলেন পৃথিবীতে সাতজন ব্যক্তির মধ্যে অন্যতম যিনি নোবেল, ইউএস কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল এবং ইউএস প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম পেয়েছেন।

নতুন মামলা

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে সোমবার অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এসব মামলা দায়ের করেছেন গ্রামীণ টেলিকমের ১৮ জন কর্মচারী, যারা ২০০৬ সালের আগে নিয়োগ পেয়েছিলেন। আইনজীবীরা বলছেন, ১৮ ব্যক্তি আলাদা মামলা দায়ের করলেও সেগুলোর ধরণ একই রকম। যেখানে বলা হয়েছে – শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হয়নি।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে যখন মামলা চলছে তখন এ সংক্রান্ত আরো ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। মামলার বাদী ১৮ জন শ্রমিকের মধ্যে ১৭ জন অবসরে গেছেন এবং একজন কর্মরত আছেন।

বাদীপক্ষের ১৮ জনের আইনজীবী হেলাল উদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, এই মামলায় শ্রমিকরা প্রায় ২২ কোটি টাকা দাবি করছেন গ্রামীণ টেলিকমের কাছে। তিনি বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী কোম্পানির লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ টাকা শ্রমিকদের পাওয়ার কথা। কিন্তু সেটি তারা পায়নি বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

“২০০৬ সাল থেকে হিসেব করে বাৎসরিক মুনাফার পাঁচ শতাংশ টাকা ১৮ জনের জন্য প্রায় ২২ কোটি টাকা হয়। সে টাকা তারা দাবি করেছেন,” বলেন হেলাল উদ্দিন।

এই মামলার বাদী শ্রমিকের মধ্যে অনেকই অবসরে গেছেন চার-পাঁচ বছর আগে। তাহলে এতদিন পরে তারা কেন এই মামলা করেছে?

এমন প্রশ্নে বাদীপক্ষের আইনজীবী হেলাল উদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ সেই ব্যাখ্যা আমার কাছে নাই।”

ইউনূস
২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সাথে অধ্যাপক ইউনূস। অনেকে মনে করেন, আমেরিকার প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের সাথে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে।

আরো যত মামলা

অধ্যাপক ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিবিসি বাংলাকে বলেন, বর্তমানে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দায়ের করা একটি মামলা রয়েছে এবং সেটির শুনানি চলছে। এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।

এছাড়া অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা একটি মামলা রয়েছে বলে জানান আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন। এসব মামলাকে ‘হয়রানিমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করছেন অধ্যাপক ইউনূসের আইনজীবী।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন মানি লন্ডারিং-এর অভিযোগে এই মামলাটি চলতি বছরের মে মাসে দায়ের করা হয় এবং এখনো কোন চার্জশিট দেয়া হয়নি।

অধ্যাপক ইউনূসকে নিয়ে নোবেল বিজয়ীরা যে বিবৃতি দিয়েছেন সেটি দেশের বিচার বিভাগের উপর ‘হস্তক্ষেপ’ বলে মনে করেন মি. খান।

এছাড়াও শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীরা (বর্তমান ও সাবেক) আলাদা-আলাদাভাবে মামলা দায়ের করেছেন অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে।

ইউনূস
গ্রামীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের জন্য অধ্যাপক ইউনূস আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত। ছবিটি ১৯৯৭ সালের।

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

২৮শে অগাস্ট পৃথিবীর ১৬০ জন সুপরিচিত ব্যক্তি ও নেতা অধ্যাপক ইউনূসের পক্ষে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। এই চিঠি প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যার-এর ওয়েবসাইটে। বিবৃতি-দাতাদের মধ্যে একশ’র বেশি নোবেল বিজয়ী রয়েছেন। অধ্যাপক ইউনূসের কারাদণ্ড হতে পারে এমন আশংকা ব্যক্ত করা হয়েছে সে চিঠিতে।

অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলার কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করার আহবান জানানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলায় যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের ভেতরে নিরপেক্ষ বিচারক ও দেশের বাইরের আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেলের মাধ্যমে পর্যালোচনার আহবান জানানো হয়েছে।

“ আমরা এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী যে ওনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করা হলে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন,” বিবৃতিতে বলা হয়।

এর আগে গত মে মাসে বিশ্বের ৪০জন রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একই ধরণের খোলা চিঠি দিয়েছিলেন।

সে ধারাবাহিকতায় এবার ১৬০জনের বিবৃতি আসলো।


Spread the love

Leave a Reply