অভিবাসন বিতর্কে নেদারল্যান্ডসের জোট সরকারের পতন

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ অভিবাসন ও আশ্রয় ইস্যুতে মতবিরোধের জেরে ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র দেড় বছরের মাথায় পতন হলো নেদারল্যান্ডসের চার দলীয় জোট সরকারের।

মতবিরোধ দূর করে সরকার বাঁচাতে গত শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সভাপতিত্বে চার পক্ষ বৈঠকে বসলেও কোনো সমঝোতা ছাড়াই তা শেষ হয়।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন নেদারল্যান্ডসকে দীর্ঘ সময় ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসা প্রধানমন্ত্রী রুটে।

তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে আজ সন্ধ্যায় আমরা একটি সিদ্ধান্ত উপনীত হতে পেরেছি, সেটা হলো আমাদের মধ্যে চলমান মতবিরোধ দূর করা সম্ভব নয়। আর তাই আমি খুব দ্রুত সরকারের পক্ষ হয়ে রাজার কাছে আমার লিখিত পদত্যাগ জমা দেব।’

পরদিন শনিবার রাজা ভিলেম আলেকজান্দারের কাছে তিনি পদত্যাগ জমা দিয়েছেন। নতুন নির্বাচনের আগপর্যন্ত বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা কাজ চালিয়ে যাবেন বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।

গত বছর আশ্রয়শিবিরগুলোয় উপচে পড়া ভিড় নিয়ে হইচই হওয়ার পর রুটের রক্ষণশীল ভিভিডি পার্টি শরণার্থীদের আগমন সীমিত করার চেষ্টা করে আসছিল। কিন্তু চার দলীয় জোট সরকারের দুই অংশীদার রুটের পরিকল্পনার বিরোধিতা করে।

বিরোধের কারণ

মূলত অভিবাসন ইস্যুতে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে জোট সরকারের অংশীদারেরা। সরকারের সবচেয়ে বড় অংশীদার ছিলেন ডানপন্থী ভিভিডি পার্টির নেতা রুটে।

২০২২ সালে অভিবাসী আশ্রয়শিবিরগুলো পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় আবাসনসংকটে পড়তে হয়েছিল সরকারকে।

তখন আশ্রয়প্রার্থীদের পারিবারিক পুনর্মিলনকে সীমিত করার চেষ্টা করেছিলেন রুটে। দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া যুদ্ধ শরণার্থীদের আত্মীয়স্বজনের পুনর্মিলন ভিসায় নেদারল্যান্ডসে আসা কমাতে প্রতি মাসে ২০০ জনে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব দেন তিনি। আর এ প্রস্তাব মানা না হলে সরকারের পতনের হুমকিও দেন জোটের শরিকদের।

জোট সরকারের দুই শরিক ক্রিস্টেন ইউনি ও ডি৬৬ এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে। তারা মনে করে এভাবে সংকটের সমাধান হয় না।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেওয়া জোট সরকার সংকট কাটাতে এর আগে গত বুধ ও বৃহস্পতিবারও আলোচনা করেছিল। সবশেষ শুক্রবার রুটে নিজেও চেষ্টা করেন, তবে শেষ রক্ষা হয়নি।

ক্রিশ্চিয়ান ইউনির মুখপাত্র টিম কায়েস্তে বলেছেন, অভিবাসন নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে না বলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডাচ্‌ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে আর লুকানোর কিছু নেই যে আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল।’

মাত্র দেড় বছরের মাথায় সরকারের পতন প্রসঙ্গে তিনি জানান, খুবই দুঃখজনক, কিন্তু এটিই রাজনৈতিক বাস্তবতা।

নেদারল্যান্ডসে আশ্রয় আবেদন গত বছর এক–তৃতীয়াংশ বেড়েছে। দেখা যায়, দেশটিতে গত বছর ৪৬ হাজারের বেশি আবেদন জমা হয়েছে। সরকারের ধারণা, চলতি বছর এ সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এই ধারণা সত্য হলে তা ২০১৫ সালের অভিবাসন সংকটের সময়কেও ছাড়িয়ে যাবে।

কী হতে যাচ্ছে

সূচি অনুযায়ী এই সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করলে ২০২৫ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এখন তার আগেই নির্বাচন হবে।

বিরোধী দলগুলো এর মধ্যেই দ্রুত নির্বাচন ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। শুক্রবার রাতে কট্টর অভিবাসন বিরোধী দল পিভিভির নেতা গির্ট ভিল্ডারস দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে টুইট করেছেন।

গ্রিন লেফট পার্টির নেতা জেসি ক্লেভারও নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ডাচ্‌ সম্প্রচারকেন্দ্র এনওএসকে তিনি বলেছেন, এই দেশটির দিক পরিবর্তন দরকার।

এমনও হতে পারে, দেশটির রাজা অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাকে জোট গঠন করে সরকার পরিচালনার কথা বলতে পারেন। কিন্তু নানা হিসাব–নিকাশের কারণে সেটা একপ্রকার অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, ২০২১ সালের ভোটে কোনো রাজনৈতিক দলই এককভাবে ভালো ফল করতে পারেনি, ফলে জোট করে সরকার গঠন করতেই চলে যায় ৯ মাস।

রুটের দল ভিভিডি সবচেয়ে বেশি ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। আর দুটি দলের ১০ শতাংশের ওপরে ভোট ছিল। আরও ১৭টি রাজনৈতিক দল পার্লামেন্টে একটি করে আসন পেয়েছিল। ফলে ভেঙে যাওয়া জোটকে বাদ দিলে অন্যদের নিয়ে নতুন করে জোট সরকার গঠনের কোনো সুযোগ নেই।

নতুন নির্বাচন দেওয়া হলেও দল টানা পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় আসতে পারবে বলে আশা করেন মার্ক রুটে। শিশুদের যত্নআত্তিসংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে ২০২১ সালে তাঁর সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। কিন্তু তারপরের নির্বাচনেও রুটে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন।


Spread the love

Leave a Reply