আল্লামা সাঈদী ছিলেন উম্মাহর সম্পদ

Spread the love

প্রচন্ড ব্যস্ত থাকায় এখন আর আগের মতো পত্রিকায় লিখা হচ্ছেনা, এমন কি ফেসবুকও ফলো করা হয় না ঠিকমতো। দেশীয় পত্রিকাও ফলো করা হচ্ছে না নিয়ম করে। গতকালকে যখন অফিসে মক্কেল দেখছিলাম তখন আমার কলিগ ব্যারিস্টার মোস্তাক আহমেদ এক গগনবিদারী সংবাদ দিলেন যে আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী ইন্তেকাল করেছেন, খবরটি শুনে আর একটি কাজও করতে পারিনি। দিনের বাকিটা সময় এবং রাতের সিংহভাগ বাংলাদেশের ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তরের খবর দেখছিলাম সাঈদী সাহেবের ইন্তেকাল নিয়ে। ছোটকাল থেকেই যার নামটি আর আলোচনা শুনে বেড়ে উঠা।

শুরুটা ছিলো এমন যে আমার গেন্দা বয়সেই সাঈদী সাহেবেকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তখন হয়তোবা তাকে চিনিই না বা বুঝিই না। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ঢাকার পোস্তগোলা বালুর মাঠের ঐতিহাসিক মাহফিলের কথা, সে মাহফিল পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য ছিলেন আমার আব্বা। আমার আব্বার উপর মাহফিল পরিচালনা ও উপস্থাপনার দায়িত্ব থাকতো বরাবরই। সে মাহফিলের নিয়মিত আলোচক ছিলেন আল্লামা সাঈদী। সেখানে অধিকাংশ সময়ই চরমোনাইর মরহুম পীর ফজলুল করিম সাহেব, ফুরফুরা শরীফের পীর আবু বকর সিদ্দিক সাহেব, ছারছীনা ও জৈনপুরীর পীরসাহেব, বায়তুল মোকারমের খতিব ওবায়দুল হক সাহেব, সুললিত কণ্ঠে রেডিওতে আযান পরিবেশনকারী ক্বারী উবায়দুল্লাহ সাহেব, মীর হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী সাহেব, সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন জাফরী সাহেব, লুৎফর রহমান সাহেব, আবুল কালাম আজাদ সাহেবসহ অসংখ্য স্বনামধন্য ইসলামী আলোচক প্রতি বছরই থাকতেন এবং তাদের আলোচনা পেশ করতেন। আমার আব্বা প্রায়ই আমাকে সেই মাহফিলে নিয়ে যেতেন এবং আলোকচকদের চেয়ারের পাশে এক কোনায় বসিয়ে দিতেন। আলোচনা শেষ হলে আব্বা আলোচকদের বলতেন আমার একমাত্র আল্লাহর মাল, ওকে একটা ফু দিয়ে দেন। অসংখ্য হকপন্থী আলেমের ফু, আদর স্নেহ এই ভাবে আমার শরীরে পড়েছে। থাকে সে কথা। আমার আব্বা সবসময়ই চরমোনাই পীরের মুরিদ ছিলেন, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের ঢাকা কেন্দ্রীয় মুজাহিদ কমিটির অন্যতম সদস্য থাকা সত্ত্বেও তিনি জামায়াতে ইসলামীর প্রচুর সাহিত্য, ম্যগাজিন, আর্টিকেল, মওদুদী সাহেবের তাফহীমুল কুরআনের তাফসীর, মাসিক পৃথিবী পত্রিকা পড়তেন নিয়মিত। তিনি আমাদেরকে কিশোরকণ্ঠ, জুভেনাইল ভয়েসসহ প্রচুর শিশু ও কিশোর সাহিত্য এনে দিতেন। যখন স্কুলে পড়ি তখন আব্বা আমাদেরকে ওয়াজের ক্যাসেট, সাইমুম সিরিজ, সাইমুমের ইসলামী সংগীতের ক্যাসেট এনে দিতেন আর এভাবেই পরিচিত হই আল্লামা সাঈদীর সাথে।

যখন স্কুলে পড়ি তখন আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রাম জাজিরা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ১৯৮৮ সালে সাঈদী সাহেব তাফাসীর করেন। আমাদের গ্রাম থেকে অসংখ্য মানুষ, বিশেষ করে যুবক, যারা আজকে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত তারাও সেই মাহফিলে এবং পরবর্তীতে সাঈদী সাহেবের পল্টনের মাহফিলের নিয়মিত শ্রোতা ছিলেন। তারা আবার আমাদেরকে সাথেও নিয়ে যেতেন পল্টন ময়দানের ঐতিহাসিক তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে। মাহফিল থেকে ফেরার পথে গরম গরম ডিম সেদ্ধও খাওয়াতেন।

আমি যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি, তখন উত্তর পানগাওঁ (ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের একটি গ্রাম) মোল্লাবাড়ির তাফসিরুল কোরআন মাহফিল পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছি বহু বছর, ইংল্যান্ডে আসার আগ পর্যন্ত। আর সেই মাহফিলের নিয়মিত আলোচক ছিলেন সাঈদী সাহেবের বড় ছেলে মরহুম রাফীক বিন সাঈদী (যিনি আমাকে লিখালিখির ব্যাপারে অনেক উৎসাহ ও উদ্দীপনা যুগিয়েছেন) এবং তারেক মনোয়ার প্রায় প্রতি বছরই যেতেন। রাফীক বিন সাঈদী (বুলবুল ) ভাইকে দাওয়াতের সুবাদে অনেক বার তাদের শহীদবাগের বাসায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছে, দেখার সুযোগ হয়েছে সাঈদী সাহেবের বিশাল, সৌন্দর্যমন্ডিত ও গোছালো লাইব্রেরী, আল্লামা সাঈদী সাহেবের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। পরবর্তীতে ইংল্যান্ডে আসার পরেও ইস্ট লন্ডন মসজিদের প্রোগ্রামে তার সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। এই রকম আরো অসংখ্য ঘটনা রয়েছে আমি সহ অসংখ্য-অগণিত যুবক তরুণদের মানসপটে।

ইউনিভার্সিটি পড়াকালীন সময়ে ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর যেখানে (তার নির্বাচনী এলাকা) হিন্দুদের জনবসতি প্রায় ৪৮%, সুধাংশু শেখর হাওলাদারকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হন, দায়িত্ব পালন করেন ধর্মমন্ত্রণালয়ের কমিটির প্রধান হিসেবে, জামায়াতের সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে, সংসদের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি স্পিকার হিসাবে আরও অনেক ক্ষেত্রে। তবে তিনি সর্বদা নিজেকে কোরআনের একজন নগন্য খাদেম, তাফসীর মাহফিলের আলোচক হিসেবেই পরিচয় দিতে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। জীবনের শেষ ইচ্ছাও ছিলো একবার হলেও কোরআনের ময়দানে আবার ফিরে আসা, আরেকবার আলোচনা করা, কিন্তু সেটি আর সম্ভব হলনা। এটি যে আল্লাহ তায়ালার ফায়সালা।

আল্লামা সাঈদী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বা বাংলাদেশের সম্পদ নয়, বরং তিনি ছিলেন গোটা বিশ্বের, উম্মাহর সম্পদ, পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষীর সম্পদ। তার জীবনের প্রায় ৫০টি বছর কাটিয়েছেন কোরআনের তাফসীর করে, ছুটে গেছেন দেশ থেকে দেশান্তরে, প্রায় ৫২টি দেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সামনে অত্যন্ত সুন্দর, সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় কোরআনের আলোচনা করেছেন। তারই আলোচনা শুনে প্রায় সাত শতাধিক অমুসলিম ইসলামের ছায়াতলে এসেছেন- চিন্তা করুনতো ওই সাতশো মুসলিম থেকে এখন কত শত সহস্র মুসলিম বনে গেছে, আপনি আমি কি আমাদের গোটা জিন্দেগীতে একজন অমুসলিমকে ইসলামের সুধায় দীক্ষিত করতে পেরেছি? কোরআনকে যে এতো সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় ব্যাখ্যা করা যায়, সেটি করে দেখিয়েছেন আল্লামা সাঈদী। আজ বাংলাদেশের অসংখ্য আলেম তাকেই অনুসরণ করে কোরআনের তাফসীর পেশ করে চলেছেন। এক সাঈদীকে আটকিয়ে যেন হাজার হাজার সাঈদী তৈরী হয়েছে!

তারই আলোচনা শুনে বহু মদখোর মদ ছেড়েছে, যেনা ব্যাভিচার ছেড়েছে, সন্ত্রাস ছেড়েছে, সঠিক পথের দিশা পেয়েছে, ধরেছে ইসলামী পথ, বেছে নিয়েছে ইসলামী জীবন-বিধান। পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান হয়েছে বাধ্যগত। আধুনিক, বিজ্ঞান মনস্ক তরুণ-যুবক, নাস্তিকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আপন মনে আনমনে মেনে নিয়েছেনা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব, চলেছেন ইসলামী বিধানমতে, নিজের জীবনে হালাল-হারামের বিধিবিধানকে বাস্তবায়িত করেছেন। তিনি তথাকথিত পীরপূজাকে নিরুৎসাহিত করতেন আর মাজার পূজা বন্ধের ক্ষেত্রে তার কণ্ঠ ছিলো সবসময়ই সোচ্চার। যার কারণে তিনি মাজার পূজারীদের বিরাগভাজন হলেও শিক্ষিত জনগণের কাছের ছিলেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়। তার ভক্ত, অনুরাগীর মধ্যে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, তরুণ,যুবকের সংখ্যাই ছিলো চোখে পড়ার মতো। আমার নিজের চোখে দেখা, যারা তথাকথিত কিছু দলের সদস্য বা দলের সমর্থক, তবুও আল্লামা সাঈদীর জন্য, তাদের অন্তরে ভালোবাসা ছিল নিখাদ, নির্ভেজাল, নির্মোহ। দেখেছি অনেককে প্রকাশ্যে জনসভায় জামায়াতের বিরোধিতা করলেও- অন্তরে আল্লামা সাঈদীর প্রতি তাদের ছিলো অসংখ্য ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ও সম্মান। কি আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাসদ, বাসদ তারা দলের কারণে মুখে মুখে জামায়াতের বিরোধিতা করলেও, বা বক্তৃতার মঞ্চে বিরোধিতা করে পরক্ষণেই গাড়িতে উঠে আল্লামা সাঈদীর সুললিত কণ্ঠে মন্ত্রমুগ্ধের মতো, পাগলপাড়া হয়ে সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় কোরআনের সময়পোযোগী তাফসীর শুনতেন। কি অবাক করা বিষয় ছিল? জিজ্ঞেস করলেও বলতেন আমার কবরে কিন্তু আমাকেই যেতে হবে বা আমাকেই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। আমার দায়দায়িত্ব ওই কঠিন সময়ে কেউ নিবেন না, এমন কি আমার দলের নেতা নেত্রীও না। ধর্ম, দল, মত নির্বিশেষে সকলের নিকট আল্লামা সাঈদী ছিলেন সম্মানের আসনে, শ্রদ্ধার প্রাণ পুরুষ হিসেবে।

২০১০ সালের জুন মাসে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অজুহাতে তাকে গ্রেফতার করা হলেও পরবর্তীতে মানবতা বিরোধী অপরাধের অজুহাতে তাকে ফের গ্রেফতার দেখিয়ে এক সাজানো ও ফরমায়েশি ট্রাইবুনালের মাধ্যমে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। সাজানো ট্রাইবুনাল এই অর্থে যে ট্রাইবুনাল না পেরেছে কোনো আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করতে, না পেরেছে দেশীয় বিচার ব্যবস্থার মান রাখতে। তার বিচারে রাষ্ট্রীয় পক্ষের সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীকে (যিনি আল্লামার পক্ষে সাফাই সাক্ষী দিতে চেয়েছিলেন) দিনের আলোতে আদালত প্রাঙ্গন থেকে তুলে নিয়ে ভারতে পাচার করে দিয়ে বিচার ব্যবস্থার যে নেককার জনক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল যা কোনো সাধারণ, বিবেকবান মানুষ ভালোভাবে দেখেনি, বা নেয়নি। এই ট্রাইবুনালের মাধ্যেমই ফরমায়েশি রায়ের স্কাইপ কেলেঙ্কারির কথা কারো ভুলে যাওয়ার মতো নয়।এই ট্রাইবুনালের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি ও ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যানকে দিয়ে ফরমায়েশি রায় দিয়ে আবার সেই বিচারপতিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক যে সমস্ত ট্রাইবুনাল রয়েছে যেমন রোম স্ট্যাটুট, যুগোস্লাভিয়া ট্রাইবুনাল, নুরেমবাগ ট্রায়াল, টোকিও ট্রায়াল কোনোটির ছিটেফোঁটা মানদন্ডও জামায়াতের নেতৃবৃন্দের ফাঁসি দেয়ার ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়নি যা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্ব বার বার প্রশ্ন তুলেছিলো। ক্ষমতাসীন সরকার এতে বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ না করে পাশের দেশের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে ছিলো অনড়, ফলশ্রুতিতে জামায়াতের ৪ জন প্রথম সারির নেতাকে ফাঁসি দেয়। সাঈদী সাহেবকে প্রথমে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিলে দেশের আপামর জনগণ যখন বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং এই রায়ের বিরোধিতা করে; প্রায় দুইশতাধিক লোক নিজের জীবন বিলিয়ে দেয় এই একজন আল্লামাকে ভালোবেসে। পরবর্তীতে ট্রাইবুনাল ফাঁসির পরিবর্তে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। যদিও এই ধরণের কারাদণ্ড বাংলাদেশের পেনাল কোড ও ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের শাস্তির কোনো বিধানে উল্ল্যেখ না থাকলেও একটি মামলার কেস রেফারেন্স দিয়ে তাকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল।

ভুলত্রুটি নিয়েই মানুষ। যদি সাঈদী সাহেব আসলেই কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধী হয়ে থাকেন, তাহলে স্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমে যদি সাজা হতো তাহলে জনমনে কোনো প্রশ্ন উঠতোনা। বিচারের নামে জুডিসিয়াল কিলিংস, যে জুডিশিয়াল মিসক্যারিজ হয়েছে তা ইতিহাস হয়ে থাকবে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার এক কলংকজনক অধ্যায় হিসেবে চিরকাল লেখা থাকবে, আজ থেকে শত বছর পরে হলেও এই বিচার নিয়ে পুনরায় প্রশ্ন উঠবে, তখন হয়তো আজকের অনেকেই আসামির কাঠগড়ায় থাকবেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপর এক্সেকিউটিভ বডির যে ন্যাক্কারজনক হস্তক্ষেপ হল, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে ছিনিমিনি খেলে পরাধীনতার যে জিঞ্জির পরিয়ে দেয়া হলো, তা ইতিহাস হয়ে থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।

কারাবাসী থেকেই আল্লামা সাঈদীকে ইন্তেকাল করতে হলো গতকাল। একজন আল্লামা সাঈদীকে দলমত নির্বিশেষে মানুষ যে কি পরিমান ভালোবাসে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়, হিংসা করার মতো। মৃত্যু সংবাদ প্রচারের সাথে সাথেই মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে পিজি হাসপাতালে ও শাহবাগে তাকে এক নজর দেখার জন্য, তার জানাজায় উপস্থিত হওয়ার জন্য মানুষের যে তীব্র আকাঙ্খা তা থেকে অনেক কিছু শিক্ষার আছে, আর মনে মনে প্রশ্ন জাগে কেমন করে তিনি দেশ বিদেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মনের মনিকোঠায় আসন করে নিলেন? এইতো এই বছরের গোড়ার দিকে ফেব্রুয়ারী মাসে আমি যখন বাংলাদেশে গিয়েছিলাম তখন নরসিংদী থেকে আসার পথে এক বিশাল ট্রাফিক জামে আটকে বসেছিলাম প্রায় দুই ঘন্টার মতো। রাত্র তখন ১২টার বেশি, হটাৎ করে শুনি সাঈদী সাহেবের ওয়াজের আওয়াজ, এক চির চেনা সুর, বাচন ভঙ্গি, শব্দের গাঁথুনি। গাড়ির গ্লাসটা একটু নামিয়ে কান খাড়া করে শুনি এক ড্রাইভার ভাই, আপন মনে সাঈদী সাহেবের আলোচনা শুনছেন। কি জাদু ছিল তার আলোচনায়। অন্য রকমের প্রিয় পাত্র ছিলেন সকলের আল্লামা সাঈদী।এমন এক ভুবন ভালোবাসা খুব কম মানুষেরই ভাগ্যে জোটে।

সাঈদী সাহেব দুনিয়া থেকে চলে গেছেন সবাইকে যেতে হবে, কিন্তু তিনি যে ছিলছিলা রেখে গেলেন, কোরআনের প্রতি তার যে ভালোবাসা, কোরআনের আধুনিক ও সময়োপযোগী আলোচনা, যা ধনী ও থেকে গরিব, শিক্ষিত কি মূর্খ – কেউ বাকি নেই তার সেই আলোচনা শুনতে। বিজ্ঞান সম্মত সহজ ব্যাখ্যা সম্বলিত যে আলোচনা ও লিখনি তিনি রেখে গেলেন, তা এই ক্ষণজন্মা পুরুষকে শত বছর থেকে হাজারো বছর মনে রাখার উপাদান হয়ে থাকবে, চলমান থাকবে কাল থেকে কালান্তর।ওনার লিগ্যাসি, মিশন, ভীষণ, মেসেজ থাকবে মানুষের হৃদয়ে বহুকাল ধরে। তাইতো বলা হয়- আল্লামা সাঈদী একটি প্রতিষ্ঠানের নাম, একটি ইতিহাস, একটি আবেগের নাম, এক ভুবন ভালোবাসা ও সম্মানের নাম আর ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে উম্মাহর সম্পদ।

লেখকঃ ব্যারিস্টার ওয়াহিদ মুহাম্মদ মাহবুব
১৫/০৮/২০২৩, লন্ডন।


Spread the love

Leave a Reply