ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার সুপারসনিক বোমারু বিমান ধ্বংস

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ  ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার সুপরিচিত দূরপাল্লার একটি বোমারু বিমান ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে।

সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ছবি এবং বিবিসির বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের সলৎসি-২ বিমান ঘাটিতে তুপোলেভ তু-২২ বিমান আগুনে জ্বলছে।

মস্কো জানিয়েছে, গুলিতে একটি ড্রোন ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে কিন্তু সেই ঘটনায় একটি বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউক্রেন এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি।

মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবায়ানিন জানিয়েছেন, মস্কোর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে পরবর্তীতে আরও দুটি হামলাকারী ড্রোন ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।

সেই সঙ্গে ইউক্রেন সীমান্তের ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে আরও দুটি ড্রোন ঠেকিয়ে দেয়া হয়েছে বলে রাশিয়ার সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, মস্কোর বড় তিনটি বিমান বন্দরে বিমান চলাচল স্থগিত করে দেয়া হয়েছিল। পরে আন্তর্জাতিক দুটি বিমান বন্দরে আবার বিমান চলাচল খুলে দেয়া হয়।

রাশিয়ার যে তু-২২ বোমারু বিধ্বস্ত করা হয়েছে, সেগুলো শব্দের দ্বিগুণ গতিতে চলাচল করতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধে এই বিমানগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

মস্কোর প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, মস্কোর সময় সকাল ১০টার দিকে মনুষ্যবিহীন একটি উড়োযান থেকে নভোগ্রাদ অঞ্চলের একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে।

নভোগ্রাদের ওই এলাকাতেই রাশিয়ার সলৎসি-২ বিমান ঘাটি রয়েছে।

‘’বিমান ঘাটির পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে কপটের-টাইপ ড্রোনটি দেখতে পাওয়ার পর ছোট আকারের অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়। এতে একটি বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে সন্ত্রাসী ওই হামলায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি,’’ বলা হয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে।

জুলাই মাসে মস্কোয় ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় বিধ্বস্ত একটি ভবন
জুলাই মাসে মস্কোয় ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় বিধ্বস্ত একটি ভবন

বিমানঘাঁটির পার্কিং এলাকায় একটি আগুন লাগার ঘটনা ঘটলেও দ্রুত সেটা নিভিয়ে ফেলা হয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে পোস্ট করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে, বিমান বন্দরে বিশাল আকারের একটি আগুন জ্বলছে। সেই আগুনের ভেতর থেকে বোমারু তু-২২ বিমানের নাক বেরিয়ে রয়েছে।

এই ছবি যাচাই করে সত্যতা পেয়েছে বিবিসি ভেরিফাই।

যদিও যেখানে মস্কোর এ ধরনের ৬০টি বোমারু বিমানের শক্তিশালী বাহিনী রয়েছে, সেখানে এই ক্ষতি খুব একটা বড় নয়। কিন্তু এই হামলার মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে যে, রাশিয়ার অনেক ভেতরে ইউক্রেনের হামলা চালানোর সক্ষমতা দিনে দিনে বাড়ছে।

গত কয়েকমাস ধরে ড্রোন দিয়ে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার দূরের মস্কোয় একাধিক হামলা চালিয়েছে কিয়েভ।

কিন্তু রাশিয়া যে কপটের-টাইপ ড্রোনের কথা বলছে, এগুলো হচ্ছে সস্তা, বাণিজ্যিকভাবে কিনতে পাওয়া যায় এমন ড্রোন, যা স্বল্প দূরত্বে উড়তে পারে।

তু-২২ বোমারু বিমানগুলো হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার সুপারসনিক বম্বার, নেটোর কাছে যার কোড নেম হচ্ছে ‘ব্যাকফায়ার’। ইউক্রেন যুদ্ধে হামলা চালাতে এই বোমারুগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

এর আধুনিক ভার্সন হচ্ছে তু-২২এম৩ যেগুলো ঘণ্টায় ২৩০০ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে এবং ২৪ হাজার কেজি ওজনের অস্ত্র, বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম।

সিরিয়া, চেচনিয়া, জর্জিয়া এবং ইউক্রেনে এই বিমানগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।

কিয়েভের কৌসুলিদের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি মাসে দানিপ্রোর একটি আবাসিক এলাকায় তু-২২ বোমারু বিমানের হামলায় ৩০ জন নিহত হয়েছিল।

তখন তারা জানিয়েছিল, রাশিয়ার ৫২তম গার্ডস বম্বার অ্যাভিয়েশন রেজিমেন্ট ওই হামলা চালিয়েছে, যে রেজিমেন্ট সলৎসি-২তে অবস্থিত।

স্যাটেলাইটের ছবি, আবহাওয়ার অবস্থা, বিভিন্ন ছবি এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য বিষয় তুলনা করে বিবিসি ভেরিফাই ইউক্রেনের ড্রোন হামলার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে।

আগুনের সামনে যে বিমানটির নাক দেখা যাচ্ছে, সেটা তু-২২এম৩ বোমারু বিমান বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।

স্যাটেলাইটের আগের ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে বিবিসি নিশ্চিত হয়েছে যে, এই বিমানগুলো এই ঘাটিতেই অবস্থান করে।

সোমবার ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা দপ্তরের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, রাশিয়ার কালুগা এলাকায় আরেকটি ড্রোন হামলায় রাশিয়ার আরেকটি সামরিক বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওই হামলার বিষয়ে খবরও প্রকাশ করেছে রাশিয়ার গণমাধ্যম, তবে কোন ক্ষয়ক্ষতির তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।


Spread the love

Leave a Reply