ইয়েমেনে হুথিদের ওপর হামলার পর ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গোপন বার্তা’

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ ইয়েমেনে হুথিদের উপর দ্বিতীয় দফা হামলা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলছেন তারা ইরানকে হুথিদের ব্যাপারে একটা “গোপন বার্তা” পাঠিয়েছে।

“আমরা এটা একান্ত গোপনীয়তার সাথে পাঠিয়েছি এবং আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত,” মি. বাইডেন এ ব্যাপারে আর বিস্তারিত কোনও তথ্য দেননি।

যুক্তরাষ্ট্র বলছে তাদের সর্বশেষ হামলা ছিল রাডার লক্ষ্য করে “আগের হামলারই পরবর্তী পদক্ষেপ।”

ইরান অবশ্য লোহিত সাগরে হুথিদের হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

কিন্তু তেহরান হুথিদের অস্ত্র সরবরাহ করে বলে সন্দেহ করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র বলছে জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ইরানের গোয়েন্দা বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো পশ্চিমা মিত্রদের সহায়তায় শুক্রবার হুথিদের ৩০টি অবস্থান লক্ষ্য করে যৌথ বিমান হামলা চালানো হয়।

একদিন পর ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড জানায় তারা টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইয়েমেনে একটি হুথি রাডার সাইট লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন লোহিত সাগরে চলাচলকারী জাহাজে যেভাবে হুথিরা হামলা চালাচ্ছিল তাতে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা না নিয়ে ব্রিটেনের ‘উপায় ছিল না’।

‘দ্য টেলিগ্রাফে’ তিনি লিখেছেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে ‘সীমিত ও নির্দিষ্ট’ কিছু হামলায় সহায়তার আহবানে সাড়া দিয়েছেন।

হুথির একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, এই আক্রমণ তাদের জাহাজে হামলা চালানোর সক্ষমতায় তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি।

ইয়েমেনের সংখ্যালঘু শিয়া মুসলিমদের একটি উপসম্প্রদায় জাইদির সশস্ত্র গোষ্ঠী হল হুথি।

বেশির ভাগ ইয়েমেনি এখন হুথি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে বসবাস করে। রাজধানী সানা ও ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চল সহ লোহিত সাগরের উপকূল হুথিদের নিয়ন্ত্রণে।

পশ্চিমা সরকারগুলোর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হল, হুথিদের লক্ষ্য করে বর্তমান বিমান হামলাগুলো চলমান গাজা যুদ্ধ থেকে একেবারেই ভিন্ন।

এটা ছিল লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে হুথিরা যে “অযথা ও অগ্রহণযোগ্য হামলা” চালাচ্ছে তার জবাবে “প্রয়োজনীয় ও আনুপাতিক উত্তর” – বক্তব্য এই পশ্চিমা দেশগুলোর।

কিন্তু ইয়েমেনে ও আরব বিশ্বের অনেক দেশেই এটা অন্যভাবে দেখা হচ্ছে।

সেখানে মনে করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য আসলে গাজায় যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে লড়ছে, যেহেতু হুথিরা হামাস এবং গাজাবাসীর পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।

আরেকটা মতবাদে বলা হচ্ছে, “পশ্চিমারা আসলে নেতানিয়াহুর কার্যসিদ্ধি করছে।”

এখন সম্ভাবনা আছে যে এই বিমানহামলা হুথিদের উপর কিছুটা হলেও একটা প্রভাব ফেলবে। অন্তত কিছুদিনের জন্য তাদের জাহাজ হামলার সক্ষমতা কমিয়ে দেবে।

কিন্তু এই বিমান হামলা যত দীর্ঘ সময় ধরে চলবে, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র তত ইয়েমেনে আরেকটা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়বে।

সেখানকার গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার পর সৌদি আরবের আট বছর লেগেছিল সেখান থেকে বের হতে – আর হুথিরা এখন আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী আকারে সেখানে অবস্থান করছে।

যুক্তরাষ্ট্র বলছে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রবাহিত বাণিজ্যের ১৫ শতাংশ পরিবহণ হয় লোহিত সাগর দিয়ে। যার মধ্যে আছে সারা বিশ্বের শস্যের ৮ শতাংশ, সমুদ্রজাত তেলের ১২ শতাংশ এবং বিশ্বের তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের ৮ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র হিসেব দিচ্ছে এই সশস্ত্র গোষ্ঠী এখন পর্যন্ত লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে ২৮ বার জাহাজে হামলা ও ক্ষতি করার চেষ্টা চালিয়েছে।

কিছু বড় জাহাজ কোম্পানি এই অঞ্চলে তাদের চলাচল বন্ধ রেখেছে, আর গত ডিসেম্বর থেকে ইন্স্যুরেন্স খরচ বেড়ে গিয়েছে প্রায় ১০ গুণ।

গত ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১৩০০ জনকে হত্যা ও ২৪০জনকে বন্দি করার পর থেকে লন্ডন ও ওয়াশিংটন ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আসছে।

হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পাল্টা সামরিক স্থল অভিযান ও বিমান হামলায় গাজায় শনিবার পর্যন্ত ২৩৮৪৩ জন ফিলিস্তিনি মারা গিয়েছে বলে জানায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এছাড়া আরো কয়েক হাজার মানুষ ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে মারা গিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে হুথিদের উপর হামলায় ব্রিটিশ আরএএফ টাইফুন ব্যবহার হচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে হুথিদের উপর হামলায় ব্রিটিশ আরএএফ টাইফুন ব্যবহার হচ্ছে

বাইডেন যা বললেন

যুক্তরােষ্ট্রর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তারা ইরানের সাথে কোন ছায়াযুদ্ধে জড়াননি।

“ইরান আমাদের সাথে যুদ্ধে জড়াতে চায় না,” তিনি বলছিলেন হোয়াইট হাউজে কর্মরত সাংবাদিকদের।

তিনি একই সাথে বলেন তার বিশ্বাস হুথিরা একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন হুথিদের বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।

এদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গাড়ি বহর আলেনটাউন ফায়ার ট্রেনিং একাডেমি অতিক্রমের সময় একদল মানুষ সেখানে বিক্ষোভ করেছে।

সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতির কথাও জানিয়েছেন একজন সাংবাদিক।

‘আমরা নভেম্বরে মনে করবো’ এবং ‘নো ভোট ফর জেনোসাইড জো’ – এমন স্লোগানও দিতে শোনা গেছে তাদের।

প্রসঙ্গত, চলতি বছর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা।

ওদিকে ইয়েমেনেও হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে রাজধানী সানাতে হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে জানা গেছে।


Spread the love

Leave a Reply