ক্রাইমিয়া সেতুর ওপর ‘আক্রমণে’ দু’জন নিহত

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ রাশিয়ার সাথে তাদের দখল করে নেওয়া ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের সংযোগকারী একমাত্র সেতুটির ওপর “আক্রমণে” দু’জন নিহত হয়েছে।

এই ঘটনার জন্য রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউক্রেনকে দায়ী করেছে। তাদের অভিযোগ এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনও জড়িত রয়েছে। কিন্তু কিয়েভ আনুষ্ঠানিকভাবে এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেনি।

রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রাইমিয়া দখল করে নেওয়ার পর এই কার্চ সেতুটি নির্মাণ করে যার ওপর দিয়ে রাশিয়া ও ক্রাইমিয়ার মধ্যে ট্রেনসহ অন্যান্য যান-বাহন চলাচল করে থাকে। সেতুটি ২০১৮ সালে উদ্বোধন করা হয়।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে যেসব ভিত্তির ওপর সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোর কোনো ক্ষতি হয়নি।

তারা জানিয়েছে যে এই ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তবে অসমর্থিত খবরে বলা হচ্ছে সোমবার সকালে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

এক বছরের মধ্যে এই সেতুর ওপর বড় ধরনের এরকম দুটো ঘটনা ঘটলো। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে সেতুর একটি অংশে বড় ধরনের বিস্ফোরণের পর এটি আংশিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

ইউক্রেনীয় সৈন্যরা যখন রুশ বাহিনীর ওপর পাল্টা-আক্রমণ শুরু করেছে তখনই ক্রাইমিয়া সেতুতে এই হামলার ঘটনা ঘটলো।

ক্রাইমিয়াতে খাদ্য, জ্বালানি ও সামরিক রসদ সরবরাহ করার জন্য এই সেতুটি রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের পর এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সেটি পুনরায় পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়।

রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলগোরোদ অঞ্চলের গভর্নর ভাচিস্লাভ গ্লাদকভ টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলেছেন এতে অল্প বয়সী একটি মেয়ের পিতামাতা নিহত হয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিকে তিনি “জরুরি” অবস্থা বলে উল্লেখ করেছেন।

ওডেসা সামরিক প্রশাসনের একজন মুখপাত্র যেসব ছবি পোস্ট করেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে সেতুর সড়কের ওপর সেতুটির ক্ষতিগ্রস্ত রেলিংসহ এর ভাঙা অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। বিবিসির পক্ষ থেকে এসব ছবি যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি।

রাশিয়ার একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোন, যাদের সঙ্গে ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের সম্পর্ক রয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে সম্ভবত পানির নিচের ড্রোন দিয়ে ইউক্রেন এই হামলাটি পরিচালনা করেছে।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভাও এই হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করে বলেছেন এতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন “সরাসরি অংশ” নিয়েছে। কিন্তু তার এই অভিযোগের পক্ষে তিনি কোনো তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেন নি।

ইউক্রেনের গোয়েন্দা বিভাগ এসবিইউর একটি সূত্র বিবিসির রুশ বিভাগকে জানিয়েছে যে নৌবাহিনীর বিশেষ বাহিনীকে নিয়ে তারা এই হামলাটি চালিয়েছে।

ইউক্রেনের সংবাদ মাধ্যমেও নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রের কথা উল্লেখ করে বলা হচ্ছে যে তারাই আক্রমণটি চালিয়েছে, কিন্তু সূত্রের নাম উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তাতে খোলাখুলিভাবে এধরনের কোনো স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ করা হয়নি।

তবে তারা এতে কিয়েভের ভূমিকার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বলেছেন, “বিজয়ের পরে এই বিস্ফোরণের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।”

এধরনের ঘটনার পর ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এরকম অস্পষ্ট বিবৃতি দেওয়া সাধারণ ও প্রচলিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগেও এই সেতুতে যখন বিস্ফোরণ ঘটেছে, তখনও ইউক্রেনের পক্ষ থেকে হামলার কথা স্বীকার করা হয়নি। তবে এবছরে প্রতিরক্ষা বিষয়ক একজন কর্মকর্তা এই দায়িত্ব স্বীকার করেছেন। বিবিসি তার এই দাবিও যাচাই করতে পারেনি।

ইউক্রেনের গোয়েন্দা বাহিনীর একজন মুখপাত্র আন্দ্রেই ইউসোভ বলেছেন এই সেতুটি একটি “অপ্রয়োজনীয় কাঠামো”।

তবে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডের একজন মুখপাত্র নাতালিয়া হুমেনিউক বলেছেন মস্কোর উস্কানিতে এরকম ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

ক্রাইমিয়াতে রুশ প্রশাসনের প্রধান সের্গেই আকসিনভ টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, “ক্রাইমিয়ার ব্রিজে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার দিক থেকে সেতুর যে ১৪৫তম সাপোর্ট সেখানে জরুরি ঘটনা ঘটেছে।

“পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমি উপদ্বীপের বাসিন্দা ও অতিথিদের ক্রাইমিয়ার সেতু দিয়ে চলাচল করা থেকে বিরত থাকতে বলেছি। নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদেরকে নতুন অঞ্চলের ভেতর দিয়ে অন্য রুট ব্যবহার করতে বলা হয়েছে,” বলছেন নাতালিয়া হুমেনিউক।

রাশিয়া গত বছর ইউক্রেনের কাছ থেকে যেসব এলাকা – খেরসন, জাপোরিশা, লুহান্সক এবং দনিয়েস্ক – দখল করে নিয়েছে সেসব অঞ্চলকে এভাবেই উল্লেখ করে থাকে।

বিবিসির রুশ বিভাগ বলছে সেতুর সমান্তরালে যে ফেরি চলাচল করতো সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি নিউজের সাংবাদিক জন ইনউড বলছেন অবৈধভাবে ক্রাইমিয়া দখল করে নেওয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এই কার্চ ব্রিজ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর উদ্দেশ্য ক্রাইমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার ‘শারীরিক সংযোগ’ স্থাপন। ক্রাইমিয়া রাশিয়ারই অংশ- এটা বোঝাতে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।

নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর পুতিন নিজে এর উপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে যান।

জন ইনউড বলছেন মস্কো এই সেতুটিকে যতোটা ভালোবাসে কিয়েভ ঠিক ততোটাই এটাকে ঘৃণা করে।

তিনি বলেন গত বছরের অক্টোবর মাসে বিস্ফোরণে যখন সেতুর কিছু অংশ ধসে পড়ে তখন ইউক্রেনের ডাক বিভাগ এই ঘটনার স্মরণে কিছু ডাকটিকিটও প্রকাশ করেছিল। ক্রাইমিয়ার সেতুতে এই বিস্ফোরণের ঘটনাকে ইউক্রেনের আনন্দের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।


Spread the love

Leave a Reply