গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাস
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এর আগে এরকম প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিলেও এবার ভোট দান থেকে বিরত থেকেছে।
নিরাপত্তা পরিষদের এই প্রস্তাবে সব জিম্মিদের অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।
গত বছরের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর বেশ কয়েকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পরে নিরাপত্তা পরিষদ এই প্রথম যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালো।
গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ তার এবং তার মিত্র ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মতবিরোধের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
নিরাপত্তা পরিষদের এই প্রস্তাব পাসের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এর আগে জিম্মি মুক্তির সাথে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি যুক্ত রাখা হলেও এবার যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সেই অবস্থান পরিত্যাগ করেছে।
এতে বলা হয়েছে “দুঃখের বিষয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন প্রস্তাবনায় ভেটো দেয়নি “।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটা জিম্মিদের মুক্তির প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এটি হামাসকে ধারণা দিয়েছে যে, তারা বন্দীদের মুক্ত না করে যুদ্ধবিরতি অর্জনের জন্য ইসরায়েলের উপর আন্তর্জাতিক চাপ ব্যবহার করতে পারে।
ওয়াশিংটনে একটি ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে এই সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মি. নেতানিয়াহু, বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, গাজায় এখনও যেহেতু জিম্মিরা আটকে রয়েছে, তাই ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করবে না।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি, রিয়াদ মনসুর প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে, বলেছেন,এটা আরও অনেক আগেই করা দরকার ছিল।
মি. মনসুর বলেছেন, “ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানাতে এই কাউন্সিলের ছয় মাস সময় লেগেছে। এরই মধ্যে দশ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও পঙ্গু হয়েছে, দুই মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত এবং দুর্ভিক্ষ হয়েছে ”।
হামাস এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে যে, “ তারা অবিলম্বে বন্দী বিনিময় প্রক্রিয়ায় জড়িত হতে প্রস্তুত। যা উভয় পক্ষের বন্দীদের মুক্তির দিকে নিয়ে যাবে”।
সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে যুক্তরাষ্ট্র ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে। তবে, বাকি ১৪ সদস্য এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর আগে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে করা প্রস্তাবগুলিয় বাধা দিয়েছিল। তারা বলেছিলো যে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির আলোচনা চলার সময়ে এই ধরনের পদক্ষেপ ভুল হবে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার তারা তাদের নিজস্ব খসড়া উত্থাপন করেছে। যাতে প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোয় ইসরায়েলের প্রতি তাদের কঠোর অবস্থান চিহ্নিত করেছে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, রেজোল্যুশন পাস করতে দেয়ার মার্কিন সিদ্ধান্তের অর্থ “ আমাদের নীতিতে পরিবর্তন” নয়।
তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করেছে কিন্তু প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়নি কারণ এতে হামাসের নিন্দা করা হয়নি।
রেজোল্যুশনটি পাস হওয়ার পর একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে মিঃ কিরবি বলেছেন, “ আমরা খুব স্পষ্ট ছিলাম, আমরা একটি জিম্মি চুক্তির অংশ হিসেবে একটি যুদ্ধবিরতির পক্ষে বরাবরই আমাদের সমর্থন ছিল। এভাবেই জিম্মি মুক্তির চুক্তি হয় এবং প্রস্তাবে সেই আলোচনার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।”
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, যুদ্ধবিরতি এবং সব জিম্মির অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তির জন্য এই প্রস্তাবনাটির ”দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে”।
মার্ক লিয়াল-গ্রান্ট, যিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত ছিলেন, তিনি বিবিসি রেডিও 4 পিএম প্রোগ্রামে বলেছেন যে, এই প্রস্তাবনা পাসের অর্থ ইসরাইল এখন “মূলত পরবর্তী ১৫ দিনের জন্য সামরিক অভিযান বন্ধ করতে একটি বাধ্যবাধকতার অধীনে থাকবে” ।
তিনি যোগ করেছেন, এই প্রস্তাবনাটি আইনত ইসরায়েলের জন্য বাধ্যতামূলক কিন্তু হামাসের জন্য নয়। কারণ ফিলিস্তিনি গ্রুপটি একটি রাষ্ট্র নয়।
এর আগে, জাতিসংঘে ইসরায়েলকে সুরক্ষা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভেটোর ক্ষমতা ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
যাইহোক, গাজায় ক্রমবর্ধমান মৃ্ত্যুর সংখ্যার কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে ইসরায়েল।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ৩২ হাজারেরও বেশি মানুষ, প্রধানত মহিলা এবং শিশু ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে নিহত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ত্রাণ বিতরণে আরও ভূমিকা রাখার জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিচ্ছে। তারা বলছে যে, সেখানকার জনগণ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ। অন্যদিকে জাতিসংঘের বিরুদ্ধে ত্রাণ সরবরাহে ব্যর্থতার অভিযোগ করেছে ইসরায়েল।
গত অক্টাবরে হামাসের বন্দুকধারীরা সীমান্তে ইসরায়েলি বসতিতে আক্রমণ করার পরে বর্তমান যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরায়েলের হিসাব অনুযায়ী, এতে প্রায় বারশ জন নিহত হয়। ২৫৩ জনকে গাজায় জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
জিম্মিদের মুক্তি,উদ্ধার অভিযান বা মৃতদেহ উদ্ধারের পরেও ১৩০ জন জিম্মির বিষয়ে এখনো কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
এই সপ্তাহের শেষের দিকে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি প্রতিনিধি দলের যে সফর হওয়ার কথা ছিল, ইসরায়েল সেটি সেটি বাতিল করার কথা জানালেও মিঃ কিরবি বলেছেন, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের মধ্যে নির্ধারিত বৈঠক পরিকল্পনা অনুযায়ী চলবে।
সোমবার এক প্রেস ব্রিফিং এ তিনি বলেছেন, “ আমরা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কাছে স্পষ্ট করতে চাই যে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র”।