বাল্টিমোরে জাহাজের ধাক্কায় নদীতে ভেঙে পড়ল সুবিশাল সেতু

Spread the love

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর শহরে কন্টেইনারবাহী একটি জাহাজের ধাক্কায় একটি বিশাল সেতু ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে। এই ঘটনায় খুব কম করে হলেও ২০ জন মানুষ ও অনেকগুলো গাড়ি নদীতে পড়ে যায়।

বাল্টিমোর সিটি ফায়ার ডিপার্টমেন্ট এই ঘটনাটিকে একটি ‘মাস ক্যাসুয়ালটি ইভেন্ট’ বলে ঘোষণা করেছে – অর্থাৎ এতে প্রচুর লোক হতাহত হবেন বলে ধরেই নেওয়া হচ্ছে।

তারা আরও জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) স্থানীয় সময় রাত দেড়টার সময় একটি পণ্যবাহী জাহাজ সেতুর একটি পিলারে ধাক্কা দিলে পুরো সেতুটাই ভেঙে নদীতে পড়ে যায়।

বিবিসি সংবাদদাতা সাইমন জোন্স বলছেন, খুব বড় মাপের কোনও দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই কেবল মার্কিন কর্তৃপক্ষ সেটিকে ‘মাস ক্যাসুয়ালটি ইভেন্ট’ বলে ঘোষণা করে থাকে – ফলে এটিও ‘অত্যন্ত গুরুতর’ একটি ঘটনা, যাতে বিপুল প্রাণহানির আশঙ্কা থাকছে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে পুরো ব্রিজটাই কীভাবে ভেঙে পড়ে জলের তলায় ঢুকে যাচ্ছে!

উদ্ধার অভিযান

ঘটনার ঠিক পর পরই একাধিক সংস্থা একযোগে খুব বড় মাপের ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানে নেমেছে।

অনেক লোক হতাহত হয়েছেন বলেও ইতোমধ্যেই খবর আসছে।

পাটাপস্কো নদীর ওপরে অবস্থিত এই সেতুটির নাম ফ্রান্সিস স্কট কি ব্রিজ। বাল্টিমোরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি ছিল তিন কিলোমিটার লম্বা।

বাল্টিমোর শহর ঘিরে যে ‘৬৯৫ অরবিটাল হাইওয়ে’ বা জাতীয় সড়ক রয়েছে, এই সেতুটি ছিল তারই অংশ।

যে জাহাজটির ধাক্কায় সেতুটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেটি সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী একটি কন্টেইনারবাহী জাহাজ, যার নাম ডালি।

বাল্টিমোরের পোর্ট ব্রিজ বন্দর থেকে ৩০০ মিটার লম্বা ওই জাহাজটি শ্রীলঙ্কার কলম্বো অভিমুখে যাচ্ছিল।

বাল্টিমোরের বন্দরটি ভেঙে পড়া এই ব্রিজ থেকে বেশ কাছেই, আর স্পেশালাইজড কার্গো পরিবহনের জন্য এটি আমেরিকার বৃহত্তম বন্দরও বটে।

বাল্টিমোর যে মার্কিন অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত, সেই মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুর খানিকক্ষণ আগে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মেরিল্যান্ডে ‘স্টেট অব ইমার্জেন্সি’ বা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।

তিনি বলেছেন, “বাইডেন প্রশাসনের সহায়তায় যাতে ফেডারেল সরকারের রিসোর্স আমরা দ্রুত মোতায়েন করতে পারি, তার জন্য একটি আন্ত:সংস্থা টিমের সঙ্গে আমরা কাজ করছি।”

এই ঘোষণার কিছুক্ষণ আগেই মার্কিন তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই-এর প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

আমেরিকায় বিবিসির সহযোগী সিবিএস নিউজ জানাচ্ছে, এফবিআই ছাড়াও ব্যুরো অব অ্যালকোহল, টোবাকো, ফায়ারআর্মস অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভস (এটিএফ) বিভাগের কর্মকর্তারাও সেখানে পৌঁছে গেছেন এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে তদন্তে সহায়তা করছেন।

মার্কিন পরিবহন মন্ত্রী পিট বুটিগিয়েগ-ও একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুরের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তার বিভাগও উদ্ধার অভিযানে সব ধরনের সহযোগিতা করছে।

নদীর হিমশীতল পানি

এদিকে বাল্টিমোর সিটি ফায়ার ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র কেভিন কার্টরাইট জানান, বাল্টিমোর বন্দর এলাকায় সেই মুহুর্তে তাপমাত্রা ছিল ৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (অর্থাৎ -১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) মতো।

ওই হিমশীতল ঠান্ডা জলে নেমেই ডুবুরিরা এখন নদীর ভেতরে তল্লাসি ও উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন।

ঘটনার ঘন্টাদুয়েক পরে বাল্টিমোর হারবার অঞ্চলের তাপমাত্রা সামান্য বেড়ে ৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে (৪৮ ডিগ্রি ফারেনহইট) পৌঁছয়।

তবে বিবিসি ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিভাগকে উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, একজন মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে নামলেই হাইপোথার্মিয়া শুরু হয়ে যেতে পারে (মানবশরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মতো)।

ফলে বহু মানুষ হয়তো প্রবল ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে এসে হাইপোথার্মিয়াতেই প্রাণ হারাতে পারেন, এমনটাও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে যখন সেতুটি ভেঙে পড়ে. তখন সেটির উপর দিয়ে একটি খুব বড় ট্র্যাক্টর-ট্রেইলার যাচ্ছিল বলে বাল্টিমোর সিটি ফায়ার ডিপার্টমেন্ট সিবিএস নিউজকে জানিয়েছে।

তারা আরও বলছে, জাহাজটি যেখানে সেতুর পিলারে ধাক্কা মারে তার আশেপাশে নদীতে প্রচুর পরিমাণে জ্বালানি ডিজেলও ভাসতে দেখা গেছে।

‘ডাইভ অ্যান্ড রেসকিউ’ টিমের ডুবুরিরা এখন ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডুবে যাওয়া মানুষদের খোঁজে অভিযান শুরু করেছেন।

অন্তত ২০ জন নদীতে পড়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে এই সংখ্যা আরও বেশিও হতে পারে। ভেঙে পড়া ফ্রান্সিস স্কট কি ব্রিজের একটা অংশ।

জাহাজের মালিকপক্ষ যা বলছে

এদিকে পণ্যবাহী জাহাজটির মালিক সংস্থা ‘সিনার্জি মেরিন গ্রুপ’ এ খবর নিশ্চিত করেছে যে তাদের জাহাজটি সেতুর পিলারে ধাক্কা মেরেছিল।

ওই শিপিং কোম্পানিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী ও পণ্যবাহী জাহাজ ‘ডালি’ বাল্টিমোরের ফ্রান্সিস স্কট কি ব্রিজের একটি পিলারে ধাক্কা মারে।

“যদিও এই ঘটনার সঠিক কারণ কী তা এখনও নিরূপণ করা যায়নি, তবে ‘ডালি’র যে ‘ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম’ আছে তাদেরকে সেই কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে”, জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

তারা আরও বলেছে, জাহাজের কর্মী ও নাবিকদের মধ্যে এই ঘটনায় কেউ আহত হয়েছেন বলে জানা নেই।

‘ডালি’তে তখন দু’জন পাইলট ছিলেন, তারা এবং জাহাজের বাকি ক্রু-দের সবারই খোঁজ মিলেছে এবং তারা সুস্থ আছেন বলে ওই শিপিং কোম্পানিটি জানিয়েছে।


Spread the love

Leave a Reply