গাজার উত্তরাঞ্চলে সংঘাতের তীব্রতা বেড়েছে
ডেস্ক রিপোর্টঃ গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে হামাস যোদ্ধাদের তীব্র লড়াই চলছে। গত কয়েক দিন ধরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর স্থল হামলা জোরদার হওয়ার পর থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলে সংঘাতের তীব্রতা বেড়েছে।
সংঘাতের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি উত্তর গাজার শহর গাজা সিটির হাসপাতালগুলোর আশেপাশে।
ইসরায়েলি বাহিনী বেশ কিছুদিন ধরেই দাবি করে আসছে যে এই হাসপাতালগুলোর নিচে হামাসের টানেলের নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং এসব হাসপাতালকে কেন্দ্র করেই তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
হাসপাতালগুলোর আশেপাশের এলাকায় বেশ কয়েকদিন ধরে তীব্র সংঘাত চলার কারণে কয়েকটি হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফা ‘আর হাসপাতাল হিসেবে কাজ করছে না’ বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ইসরায়েলি বাহিনীর ক্রমাগত বোমা হামলা ও স্থল আক্রমণ চলতে থাকায় গাজার আরো কয়েকটি হাসপাতালও একই পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
গাজা সিটির আল শিফা হাসপাতালে এতদিন বোমা না ফেললেও হাসপাতালটির ৫০ থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরেই বোমা হামলা করে আসছিল ইসরায়েলি বাহিনী।
তবে গত কয়েকদিন ধরে ঐ হাসপাতালের ভেতরে থাকা স্থাপনায় বোমা হামলা করার পাশাপাশি হাসপাতালের আশেপাশে স্থল হামলার তীব্রতাও বাড়িয়েছে তারা।
রবিবার জাতিসংঘ জানিয়েছে অক্সিজেন প্রস্তুতকারী যন্ত্র, পানির ট্যাংক, ম্যাটার্নিটি ওয়ার্ড ও হৃদরোগ বিভাগ সহ হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বোমা হামলায় ধ্বংস হয়েছে।
চলমান সংঘাতের মধ্যে রবিবার আল ঐ হাসপাতালের তিনজন নার্সও মারা গেছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
সাতই অক্টোবর হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ১০১ জন জাতিসংঘ কর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
লেবানন থেকে ইসরায়েলে হামলা
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস আইডিএফ সোমবার সকালে জানিয়েছে লেবানন থেকে ইসরায়েলে দুটি মর্টার নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে এই হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সাতই অক্টোবর ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে হামাসের সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর মধ্যে বিচ্ছিন্ন সংঘাত চলছে।
লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র সংগঠন হেজবুল্লাহ ইসরায়েলের উত্তর দিকের সীমানায় থাকা মিলিটারি পোস্টে বেশ কয়েকবার রকেট ও বোমা হামলা চালিয়েছে।
জবাবে ইসরায়েলের বাহিনীও লেবাননের দিকে বেশ কয়েক দফা রকেট ছুঁড়েছে। গত মাসে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ছয় জন হেজবুল্লাহ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।
হেজবুল্লাহর রকেট হামলায়ও এর মধ্যে বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি সেনা আহত ও নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
হেজবুল্লাহর শীর্ষ নেতারা বেশ কিছুদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন যে গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা বন্ধ না হলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে যেতে পারে।
তবে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের সীমান্ত অঞ্চলেই হামলা জারি রেখেছে হেজবুল্লাহ।
যুদ্ধবিরতির আহ্বান ইউরোপীয় ইউনিয়নের
গাজার ভেতরে থাকা হাসপাতালগুলো যেন রোগীদের চিকিৎসা দেয়া চালিয়ে যেতে পারে তা নিশ্চিত করতে গাজায় ‘অর্থপূর্ণ’ যুদ্ধবিরতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ইউরোপিয়ান কমিশন ফর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের কর্মকর্তা ইয়ানেজ লেনারচিচ সোমবার ব্রাসেলসে এক বৈঠকে মন্তব্য করেন যে জ্বালানির অভাবে গাজা উপত্যকার অর্ধেকেরও বেশি হাসপাতাল কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
সাতই অক্টোবরের পর থেকে গাজায় নতুন করে জ্বালানি প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র জানায় যে গাজায় প্রতিদিন চার ঘণ্টার জন্য হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। কিন্তু ইউরোপীয় কমিশন বলছে ‘কার্যকর’ যুদ্ধবিরতি না হলে গাজার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘব সম্ভব হবে না।
মি লেনারচিচ বলেন, “প্রথমত, যুদ্ধবিরতির সময় আগে থেকে ঘোষণা করতে হবে যেন সব প্রতিষ্ঠান আগে থেকে পরিকল্পনা করে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারে। দ্বিতীয়ত, যুদ্ধবিরতির সময়ের সুনির্দিষ্ট হিসেব থাকতে হবে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ রবিবার এক বিবৃতি প্রকাশ করে গাজায় যুদ্ধের ‘অতি স্বত্ত্বর মানবিক বিরতি’ দেয়ার আহ্বান জানায়।
পাশাপাশি গাজার বাসিন্দাদের ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য হামাসের প্রতি নিন্দাও প্রকাশ করা হয় ঐ বিবৃতিতে।
ইসরায়েলের বিবৃতি
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে সোমবার গাজার উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধ চলাকালীন সময় দুইজন ইসরায়েলি সেনা সদস্য মারা গেছেন।
ইসরায়েলের গণমাধ্যমের হিসেব অনুযায়ী, সাতই অক্টোবর হামাসের সাথে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৪৪ জন ইসরায়েলি সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন।
আইডিএফ জানিয়েছে যে হামাসের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৩০০ রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে গাজায়।