চীনা ভিজিটরদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ

Spread the love

বাংলা সংলাপ রিপোর্ট
করোনাভাইরাসে যুক্তরাজ্যে আরও একজন আক্রান্ত হয়েছেন । বৃহশপতিবার আক্রান্ত ব্যক্তিকে হেলথ স্পেশালিস্ট কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যে ৩ জন কে শনাক্ত করা হয়েছে ।
এদিকে করোনাভাইরাস সংকট বাড়ার কারনে চীন থেকে আগতদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা করছে সরকার ।
হেলথ সেক্রেটারী ম্যাট হ্যানকক বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানান। তিনি জানান,আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় সরকার করোনাভাইরাসকে যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ করতে এই উদ্যোগ নিচ্ছে।

ইতিমধ্যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে চীনে থাকা বিদেশি দর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

মূল ভূখণ্ডের চীনে প্রায় ৩০,০০০ ব্রিটিশকে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রবিন্দুতে উহান থেকে শেষ সরকারী চার্টার্ড প্রত্যাবাসন ফ্লাইটটি রবিবার ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

ব্রিটিশ কূটনীতিকরা চীনে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদেরও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন যে স্থানীয় স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দ্বারা তাপমাত্রা পরীক্ষা করা ব্যর্থ হলে তারা জোর করে “জ্বরের ক্লিনিকগুলিতে” পাঠানো বন্ধ করতে পারবেন না।

বিশ্বে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে নতুন করোনাভাইরাস।চীন থেকে শুরু হয়ে তা ছড়িয়ে গেছে বহু দেশে। মৃত্যুর সঙ্গে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।মানুষের জীবনই কেবল নয়,চীনের অর্থনীতিতেও ভয়াবহ হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে এ মহামারি। আর চীন হুমকিতে পড়া মানে বিশ্ব অর্থনীতিও আর নিরাপদ নয়।

এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সাড়ে পাঁচশ ছাড়িয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ২৮ হাজার।

দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার আরও ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে, তাতে চীনের মূলভূখণ্ডেই মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬৩ জনে।

অধিকাংশ মৃত্যু ও নতুন সংক্রমণের ঘটনাই ঘটেছে হুবেই প্রদেশে, যে প্রদেশের উহান শহরকে এ ভাইরাসের ‘উৎসস্থল’ বলা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে বিস্তার ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ (৬৭৫ মিলিয়ন) ডলার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাস যাতে আর ছড়াতে না পারে এবং দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে, এমন দেশগুলোকে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রস্তুত করতে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে এই অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছে সংস্থাটি।

জরুরি এই তহবিল প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাডহানম গেব্রিয়াসাস বলেন, “সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হল- এমন অনেক দেশ আছে যাদের এই ভাইরাসে সংক্রমিতদের শনাক্ত করা, এমনকি কোথা থেকে এর উদ্ভব হতে পারে, তা শনাক্ত করার মতো পদ্ধতি নেই।

“আক্রান্তদের শনাক্ত করা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তাদের সেবা নিশ্চিতে দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাগুলোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানো ঠেকাতে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।”
ভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে ১৭ বছর আগের সার্সের মহামারিকে এরই মধ্যে ছাড়িয়ে গেছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। সার্সে বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষতি হয়েছিল হাজার হাজার কোটি ডলারের।এবার করোনাভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিতে সার্সের চেয়েও বড় বিপদ ডেকে আনবে বলেই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

করোনাভাইরাসের আতুড়ঘর বলে গণ্য চীনের উহান এখন কার্যত একটি অবরুদ্ধ এলাকা।ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে একের পর এক দেশ চীনের সঙ্গে যাতায়াত-যোগাযোগ বন্ধ করতে থাকায় বিশ্ব থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চীন।

কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় করোনাভাইরাস মহামারি চীনের পাশাপাশি বিশ্বের জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছে।চীনা কারখানাগুলোর ওপর পণ্য উৎপাদনের জন্য এবং সেসব বিক্রির জন্য চীনা ভোক্তাদের ওপর যেসব আন্তর্জাতিক কোম্পানি নির্ভর করে তারা এরই মধ্যে সমস্যার কথা বলতে শুরু করেছে।

চীনে অ্যাপল,স্টারবাকস এবং আইকার মতো দোকানগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং শপিং মলগুলো জনমানবশূন্য হয়ে পড়ায় বেচা-কেনা ব্যাহত হচ্ছে।কর্মীরা ছুটিতে থাকায় অনেক কলকারখানাই পণ্য উৎপাদনে বিলম্ব করছে।

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের নেতিবাচক প্রভাবে এবছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতবছরের ৬ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে অক্সফোর্ড ইকোনোমিক্স।

চীনের অর্থনীতির এ শ্লথগতির প্রভাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বার্ষিক ২ দশমিক ৩ শতাংশ হার থেকে এবছর কমে দাঁড়াবে ০ দশমিক ২ শতাংশে।যা বিশ্ব অর্থনীতিতে এক দশক আগে সংকটের শুরু থেকে সবচেয়ে শ্লথগতির।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে এমনিতে নাজুক হয়ে পড়া চীনের অর্থনীতিতে নতুন ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে এই করোনাভাইরাস। গতবছর ৩ দশকের মধ্যে চীনের প্রবৃদ্ধি ছিল সর্বনিম্নে। এর মধ্যে ভাইরাসের প্রদুর্ভাব তাদের জন্য আরেক বোঝা। অর্থনীতিকে টেকাতে চীন এরই মধ্যে ভর্তুকি বৃদ্ধি, ব্যয় সংকোচনের মতো পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনাও করেছে।

কিন্তু চীনে করোনাভাইরাস এমন সময়ে ছড়িয়েছে যখন সেখানে চলে এসেছে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার সময়। নতুন রোগের কারণে এ উৎসব ঘিরে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছর এই সময় চীনের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পরিমাণ যা ছিল এবার তাতে ধস নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তাছাড়া,করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চীনের সঙ্গে যাতায়াত যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া কারণে এবং জনস্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা জারি থাকার কারণে চীনের বহুজাতিক কম্পানিগুলোর কাজও ব্যাহত হচ্ছে গোল্ডম্যান সাক্সসহ বড় বড় ব্যাংকগুলোর যেসব কর্মী চীন ভ্রমণ করেছে তাদের আলাদা করে রাখার কারণেও ব্যাংক সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

বিশ্বে বর্তমানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এক তৃতীয়াংশই আসে চীনের অর্থনীতি থেকে।যা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং জাপানের সম্মিলিত বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির চেয়েও বেশি।

চীন বিশ্বের প্রধান একটি ‘ম্যানুফ্যাকচারিং হাব’ এবং উহান বিশেষভাবে অটোমোবাইল বা গাড়ি নির্মাণশিল্প গড়ে ওঠার জন্য পরিচিত। বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের অংশ হিসেবে সেখানকার শিল্পকারখানা গুরুত্বপূর্ণ। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এসব কারখানা বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়বে পুরো বিশ্বের অর্থনীতিতে।

করোনাভাইরাস মহামারি কতদিন চলবে তা কেউ জানে না। চীনের অর্থনীতিতে তা কতটা ক্ষতি ডেকে আনবে তাও ধারণা করা মুশকিল।তবে বিশ্ব অর্থনীতিতে সার্সের তুলনায় করোনাভাইরাসের প্রভাব যে আরো বিধ্বংসী হবে তা আঁচ করা যাচ্ছে।

২০০৩ সালে চীনে প্রাদুর্ভাব ঘটা সার্স ভাইরাস বিশ্বে আতঙ্ক তৈরি করেছিল। সে সময় বিশ্ব বাণিজ্যের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ চীন থেকে এসেছিল। আর গত বছর তা বেড়ে হয়েছিল ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। সুতরাং,এবার চীনের প্রবৃদ্ধি কমে তা সার্সের তুলনায় বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলার আশঙ্কা আছে।


Spread the love

Leave a Reply