ঢাকায় বিএনপি-পুলিশ ব্যাপক সংঘর্ষে নিহত ১, অনেক নেতা-কর্মী গ্রেফতার

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকায় দলটির নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।

বিএনপি দাবি করেছে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে তাদের একজন কর্মী মারা গেছে এবং আহত হয়েছে আরও অনেকে। একই সাথে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সহ বেশ কিছু নেতাকর্মীকে দলীয় কার্যালয় থেকে আটক করেছে পুলিশ।

নয়াপল্টনের এই সড়কেই শনিবার ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের ঘোষনা দিয়েছিলো বিএনপি। যদিও পুলিশ দলটিকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। এই সমাবেশ কোথায় হবে তা নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিএনপির পক্ষ থেকে অনুমতি না মিললেও সেখানে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন দলটির নেতারা।

সংঘর্ষে আহত হয়ে হাসপাতালে নেয়া এক ব্যক্তিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন। পুলিশ বলছে ওই ব্যক্তি কীভাবে নিহত হলেন বা তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আদৌ আছে কি-না সে সম্পর্কে  তারা নিশ্চিত নন।

তবে তাদের দাবি যাদের আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে অথবা তারা পুলিশের ওপর হামলায় জড়িত ছিলেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ফারুক হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন কোনো অনুমতি ছাড়াই বিএনপি কর্মীরা তাদের দলের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে ওই এলাকার সড়কগুলোর যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলো।

“পুলিশ সদস্যরা তাদের সড়ক বন্ধ না করার অনুরোধ করছিলো। তখনি অতর্কিতে তারা পুলিশের ওপর হামলা শুরু করে। আমাদের নয়জন সদস্য আহত হয়েছে। এরপর পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে এবং অন্য ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে,” মিস্টার হোসেন বলছিলেন।

ওদিকে সংঘর্ষ স্তিমিত হয়ে আসলে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিএনপির অফিসের সামনে আসেন দলটির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সাথে থাকা দলটির কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিমুল বিশ্বাসকেও আটক করে পুলিশ।

মিস্টার আলমগীর দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে না পেরে বাইরে ফুটপাতে অবস্থান নেন। সেখানেই তিনি সাংবাদিকদের বলেন পুলিশই হামলা করেছে এবং তারা আশঙ্কা করছেন যে আরও বড় কোন চক্রান্ত পুলিশ করছে।

“আমাকে ঢুকতেই দেয়টি পার্টি অফিসে। পুলিশ অফিসে ঢুকে আমাদের নেতাকর্মীদের আটক করে নিয়ে গেছে। নিজেরাই বোমা ফুটিয়ে তারা নির্দয়ভাবে আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে,” বলছিলেন মিস্টার আলমগীর।

বিএনপি জানিয়েছে, দলের ঢাকা নগর কমিটির দুই শীর্ষ নেতা, ঢাকা উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান এবং ঢাকা দক্ষিণের আহবায়ক আব্দুস সালাম ছাড়াও দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকনকেও আটক করেছে পুলিশ।

এদিকে নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ থামতে না থামতেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক তার দফতরে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, নয়াপল্টনের সড়কে সমাবেশের অনুমতি বিএনপি পাবে না। তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে, এরকম কোন চেষ্টা বিএনপি করলে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেবেন তারা।

কীভাবে সংঘর্ষের সূচনা হলো

 ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন সাংবাদিক জানিয়েছেন ১০ ডিসেম্বের বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে গত কিছুদিন ধরেই দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মী সমর্থকদের ভিড় বাড়ছিলো।

আজ বুধবারও সকাল থেকেই সমর্থকরা জড়ো হতে শুরু করেছিলেন এবং এক পর্যায়ে সেখানকার মূল সড়কের দুই পাশেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বেলা তিনটার দিকে পুলিশের একটি দল ওই সড়ক থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলে। এর মধ্যেই একটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

আর তখনি বিএনপি সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়ে এবং তারা পরস্পরের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।

এক পর্যায়ে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষে করা শুরু করে। এরপর গুলির শব্দ শোনা যায় অনেক বার।

প্রায় ঘন্টা খানেক এভাবে চলার পর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের অলিগলিতে।

আর খবর পেয়ে বিএনপি মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সেখানে আসেন যান সাড়ে চারটার দিকে।

এর মধ্যেই বিএনপি অফিসে ঢুকে ভেতরে থাকা নেতাকর্মীদের আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।


Spread the love

Leave a Reply