তাইওয়ান সফরের জন্য ৯০ হাজার পাউন্ডের বেশি অর্থ নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস গত মে মাসে তাইওয়ান সফরে গিয়েছিলেন। পাঁচ দিনের ওই সফরের জন্য ৯০ হাজার পাউন্ডের বেশি অর্থ নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর এ সফরের কঠোর সমালোচনা করেছিল চীন।

লিজ ট্রাস হলেন যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে কম সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী। মাত্র ৪৪ দিন এ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার তাইওয়ান সফর করার পর দেশটির শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবে লিজ ট্রাস এ সফর করেন।

তাইওয়ান ঘিরে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক দিন দিন বৈরী হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তাইপের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর মৈত্রী বাড়াতে লিজ ট্রাসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সফরে ট্রাস তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

গত মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, এ সফরের জন্য উড়োজাহাজের ভাড়া ও থাকার খরচ বাবদ লিজ ট্রাসকে ১০ হাজার ৮৪১ পাউন্ড দিয়েছিল তাইওয়ান সরকার। তাঁকে ৮০ হাজার পাউন্ড দিয়েছিল তাইওয়ানভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক প্রসপেক্ট ফাউন্ডেশন। এ প্রতিষ্ঠান আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি ১৭ মে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। প্রসপেক্ট ফাউন্ডেশনের ওপর চীনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

সংবাদমাধ্যম তাইওয়ান নিউজের খবরে বলা হয়, তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার বলেছে, যুক্তরাজ্যের বিদায়ী নেতাদের এ ধরনের ভাষণ দেওয়ার ঘটনা ব্যতিক্রম কিছু নয়। তবে ভাষণের বিনিময়ে অর্থ নেওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি মন্ত্রণালয়। কারণ, এ অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে তারা কোনো পক্ষ ছিল না।

প্রসপেক্ট ফাউন্ডেশনে দেওয়া ভাষণে লিজ ট্রাস পশ্চিমা দেশগুলোকে চীনের সঙ্গে কাজ না করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ সময় তিনি স্বায়ত্তশাসিত তাইওয়ানকে ইউক্রেনের সঙ্গে তুলনা করেন। লিজ ট্রাস বলেন, ‘বেইজিং যদি নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলে এবং তাইওয়ান ঘিরে নিজেদের আগ্রাসন বাড়ায়, তাহলে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা অনিবার্য হয়ে পড়বে। আমরা যদি এর প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হই, তাহলে এর পরিণতি হিসেবে মুক্ত বিশ্বে আমাদের লোকজনকে অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়তে হবে।’

লিজ ট্রাসের এ সফরের কড়া নিন্দা জানায় চীন। বেইজিং তাঁর এ সফরকে ‘বিপজ্জনক রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এর ফলে ‘যুক্তরাজ্যের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হবে না’। আর লন্ডনে চীন দূতাবাসের এক মুখপাত্র বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা ব্রিটেনের সংশ্লিষ্ট রাজনীতিককে তাঁর ভুল শুধরে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

১৯৪৯ সালে এক গৃহযুদ্ধের পর চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাইওয়ান। চীন দ্বীপটিকে আবার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তাইওয়ান ঘিরে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে বেইজিং। তাদের দাবি, বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্ক রাখার কোনো অধিকার নেই।

এরপরও ১৩টি দেশের সঙ্গে তাইওয়ানের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী অনেক দেশের সঙ্গেও তাইওয়ানের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। চীনের তৎপরতা রুখতে পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছে তাইওয়ান সরকার। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের প্রধানকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে তারা। মধ্য আমেরিকার দেশগুলোতেও সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের নেতারা।

জানা গেছে, ২০২৩ সালে ২ হাজার ৪০০ বিদেশি নেতাকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাইওয়ান সরকারের। এ কাজে বাজেট বাড়িয়ে ১ কোটি ৯ লাখ পাউন্ড করার পরিকল্পনা করেছে তারা। এর আগের বছর ২ হাজার ১০০ জন বিদেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তাইওয়ান।

এদিকে চীনের সরকারি গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, লিজ ট্রাসের সফরের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং দেশটির প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিও ট্রাসের মতো তাইওয়ান সফর ও ভাষণ দেওয়ার জন্য অর্থ নিয়েছিলেন।

তবে মাইক পম্পেওকে অর্থ দেওয়ার খবরের সত্যতা গত বছর নাকচ করেছিল তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের ভাষ্য ছিল, ‘সফরের প্রকৃত অর্থ থেকে জনসাধারণের নজর সরাতে এবং তাইওয়ানের প্রকৃত একজন বন্ধুকে অপমান করতে এ বিদ্বেষপূর্ণ গুজব ছড়ানো হয়েছে।’


Spread the love

Leave a Reply