দেশ ও জাতির কাছে ৫২ সালের ভাষা শহীদদের আর্তনাদ !

Spread the love

একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের আত্মত্যাগ ছিল অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রামের উজিজীবনী দিন । একুশে ফেব্রুয়ারির অন্যতম শিক্ষা ছিল অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা । একুশের মানে ছিল কথা বলার স্বাধীনতা । আমাদের আত্মত্যাগ ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমিত ছিল না । এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে মিশে ছিল আমাদের স্বাধিকার ও আত্মপরিচয়ের প্রত্যয় ।

গণতান্ত্রিক অধিকার সহ মার্তৃভাষার মর্যাদার অধিকার আদায় করা ও তা রক্ষা করা । মার্তৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার প্রেরণা ।

প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি যেমন আমাদেরকে ইতিহাসের সেই গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, তেমনি আমাদেরকে আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি দাঁড় করায়। দেশ ও জাতির কাছে একুশের বীর শহীদদের জিজ্ঞাসা স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর পর সর্বস্তরে বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন করে মার্তৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে রাষ্ট্র কতদূর এগিয়েছে ?

এই দীর্ঘ সময়ে মার্তৃভাষার বাস্তবায়ন, মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা কী করতে পেরেছি?

সরকারি কাজকর্মে সীমিতভাবে বাংলা চালু থাকলেও ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চশিক্ষা, গবেষণাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ইংরেজি প্রাধান্য পেয়ে আসছে। বাংলায় আইন প্রণীত হলেও উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা এখনো চালু হয়নি । সাধারন মানুষ ও গরীবের জন্য বাংলা শিক্ষার ব্যাবস্হা রেখে বিত্তবানরা ছুটছে দেশ-বিদেশে ইংরেজী শিক্ষার পিছনে ।

পৃথিবীতে কোন দেশই নিজেদের মার্তৃভাষা পরিহার করে বিদেশী ভাষা গ্রহন করে নাই । শ্রমবাজার দখল করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন ও জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির জন্য দ্বিতীয় ভাষায় জ্ঞাণার্জন আমাদেরকে সমৃদ্ধির সোপানে পৌছাতে পারে । এতে কোন সন্দেহ নেই । আমরা এখনো সকলের জন্য সুসম শিক্ষা ব্যাবস্থা প্রনয়ন করতে পারিনি । বাক-স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার নিঃশ্চিত করতে পারিনি । এর দায় কার ?

অমর একুশের মূল শিক্ষা গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করা ও অন্যায়ের কাছে মাথানত না করার চেতনা৷

লক্ষ কোটি টাকা ব্যায় করে ফুলে ফুলে আমাদের সমাধীকে আচ্ছাদিত করে দেশ ও জাতি কতটুকু লাভবান হচ্ছে । অধিকার আদায়ে জাতিকে আন্দেলন বিমুখ করার জন্য এর পিছনে কি কোন বানিজ্যিক উদ্দেশ্য ও ষড়যন্ত্র রয়েছে । তা অনুসন্ধান করার সময় এসেছে ।

যে দেশে ভাষার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে, সেই দেশে মাতৃভাষার অবমাননা অত্যন্ত লজ্জাকর । আমরা যদি নিজেদের আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে দাবি করি, তাহলে সকলের জন্য সুসম শিক্ষা ব্যাবস্থাসহ সরকারি-বেসরকারি দপ্তরসহ সর্বস্তরের বাংলা ভাষা প্রচলনে আমাদের একটি মহাপরিকল্পনা নেওয়া এবং দ্রুততম সময়ে তা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। সেটিই হতে পারে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের শ্রেষ্ঠ উপায়।

লেখকঃ কমিউনিটি লিডার ও সমাজসেবক, লন্ডন ।


Spread the love

Leave a Reply