‘পুনরায় গাজা দখল করা ইসরায়েলের জন্য বড় ভুল হবে’- মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, হামাসকে অবশ্যই উপড়ে ফেলতে হবে এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কোন পথ অবশ্যই পাওয়া যাবে।

সিবিসি সিক্সটি মিনিটস-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরান ও হেজবুল্লাহকে এই সংঘাতে জড়িয়ে তা আরো না বাড়ানোর জন্য সতর্ক করেন।

“এই মুহূর্তে গাজায় ইসরায়েলি দখলদারিত্ব সমর্থন করেন কিনা” এমন প্রশ্নের উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, এটা হবে একটি “বড় ভুল”।

মি. বাইডেন বলেন, “হামাস এবং হামাসের অংশগুলো চরমপন্থি উপাদানগুলো পুরো ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। আর আমার মনে হয় আবারো গাজার দখল নেয়াটা ইসরায়েলের জন্য একটি ভুল পদক্ষেপ হবে।”

“কিন্তু গাজায় প্রবেশ করে চরমপন্থিদের বের করে আনাটা…এখন জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছে,” তিনি সাক্ষাৎকারের একটি ক্লিপে বলেন যা গত রোববার রাতে সম্প্রচারিত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, তিনি “আত্মবিশ্বাসী যে, ইসরায়েল অবশ্যই যুদ্ধের নীতি মেনেই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।”

মি. বাইডেন বারবারই বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করার অধিকার ও কর্তব্য রয়েছে ইসরায়েলের। গত সপ্তাহে চালানো হামাসের হামলাকে তিনি “শয়তানের কাজ” বলে অভিহিত করেন।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জিম্মি হওয়া নাগরিক যারা এখনো জীবিত আছে তাদের “মুক্ত করতে” সম্ভাব্য সব কিছুই করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন।

তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না, তবে এতটুকু বলছি যে, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।”

এর আগে রোববার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর নিশ্চিত করেছে যে, ১৩ জন আমেরিকার নাগরিক নিখোঁজ রয়েছেন। তারা হামাসের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই নৃশংসতা থামানো এবং দায়ীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।”

গাজার হাসপাতালগুলোর জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে

জাতিসংঘ হুঁশিয়ার করে বলেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার সব হাসপাতালের জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে। এর ফলে “হাজার হাজার রোগীর প্রাণ শঙ্কার মধ্যে পড়বে” বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি।

বেশ কয়েকটি সহায়তা সংস্থাকে গাজায় ত্রাণ নিয়ে প্রবেশ করতে দেয়ার আহ্বান জানানোর পর এই খবর আসলো। এই সংস্থাগুলো জ্বালানি এবং পানি সরবরাহ করার মতো সহায়তা দিতে আগ্রহী।

এর আগে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস এর ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত ফিলিস্তিনি চিকিৎসক ঘাসান আবু সিত্তা জানিয়েছেন, তার হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই।

তিনি বিবিসিকে বলেন, “এই জরুরী পরিস্থিতিতে আমাদের প্রতিদিন এক মাস বা দেড় মাস চলার মতো চিকিৎসা সরঞ্জাম দরকার হচ্ছে।”

গাজার বাসিন্দাদের অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে। পানি, খাবার, জ্বালানি এবং ওষুধ- সব কিছুরই ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলি সেনারা এখনো সীমান্তে জড়ো হচ্ছে। হামাসের সশস্ত্র সদস্যদের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

ইসরায়েল গাজার উত্তরাঞ্চলে বাস করা ১১ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এরই মধ্যে এই নির্দেশনা মেনে নিয়ে সরে গেছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহরে রাতারাতি জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

জাতিসংঘ বলেছে, মধ্যপ্রাচ্য “নরকের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে” এবং ইসরায়েলকে ত্রাণ প্রবেশ করতে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

গত সপ্তাহে হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা সীমান্ত পার হয়ে ইসরায়েলে গিয়ে হামলা চালানোর পর এখনো পর্যন্ত ১৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে।

আর এর পর গাজায় ইসরায়েলি পাল্টা হামলায় এখনো পর্যন্ত ২৪৫০ জন নিহত হয়েছে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধ্বংসস্তুপের নিচে প্রায় এক হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে শিশু নিহত

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম হওয়ার কারণে এক শিশুসহ দুই জনকে ছুরিকাঘাত করে মেরে ফেলার ঘটনায় এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে হত্যা এবং হেইট ক্রাইম বা ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।

জোসেফ সিজুবা নামে ৭১ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, তিনি ইলিনয় রাজ্যের প্লেইনফিল্ড এলাকায় ছয় বছর বয়সী একটি ছেলেকে হত্যা এবং ৩২ বছর বয়সী এক নারীকে আহত করেন।

ছেলেটিকে ২৬ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে উইল কাউন্টি শেরিফের দপ্তর থেকে জানানো হয়, “গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে যে, এই বর্বর হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা মুসলিম হওয়ার কারণেই তাদেরকে টার্গেট করা হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কারণেই এই হামলা চালানো হয়েছে।”

খান ইউনিসে রাতারাতি জনগণ বেড়েছে লাখ লাখ

খান ইউনিসে জিনিসপত্রের মজুদ শেষ হয়ে আসছে। এই শহরটিতে সাধারণত চার লাখ মানুষের বসবাস। কিন্তু এক রাতের মধ্যে এই সংখ্যা ১০ লাখের বেশি হয়ে গেছে।

এখানকার হাসপাতাল যেখানে এরইমধ্যে প্রয়োজনীয় সরবরাহ কমে এসেছে, সেখানে শুধু অসুস্থ আর আহতদেরই স্থান দেয়া হয়নি, বরং এটি এখন একটি আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

বারান্দায় লাইন ধরে আশ্রয় নিয়েছে শরণার্থীরা। এর মধ্যেই চিকিৎসকরা ইসরায়েলি বোমা হামলায় নতুন করে আহত হওয়া লোকজনকে সেবা দিচ্ছেন। এদের সবার সম্মিলিত আওয়াজে কানে তালা ধরার অবস্থা হয়।

তবে এখানে আসার জন্য লোকজনকে দোষও দেয়া যায় না। কারণ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, যুদ্ধের সময় হাসপাতালই হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা।

অনেক দিক থেকে দেখতে গেলে এই মানুষগুলো ভাগ্যবান, অন্তত এখন পর্যন্ত।

চিকিৎসকরা বলছেন, নতুন করে আহত হয়ে আসা এই জনস্রোতকে দেয়ার মতো তেমন কিছুই তাদের নেই। প্রতি রোগীর জন্য দিনে ৩০০মিলিলিটার পানি বরাদ্দ। আর শরণার্থীদের কিছুই দেয়া হয় না।

অন্য জায়গায় স্থানীয় বাসিন্দারা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। অনেক ছোট অ্যাপার্টমেন্টে যেখানে আগে থেকেই ধারণ ক্ষমতার বেশি মানুষ বসবাস করতো, সেগুলোও এখন ৫০-৬০ জন লোকের আবাস হয়ে উঠেছে।

‘সংঘাত বাড়লে সেটি পুরো এলাকার জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে’-জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেছেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের মিশরে চলে যাওয়াটা তার দেশের কাছে “অগ্রহণযোগ্য” হবে।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ আওয়ারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “লোকজনকে সরিয়ে নেয়া বা স্থানান্তর করাটা কোন সমস্যার সমাধান করবে না” এবং বিশ্বের উচিত ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন-দুই দেশেরই বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানানো।

তিনি বলেন, “ইউক্রেনে খাবার এবং পানি না দেয়াটা যুদ্ধাপরাধ হলে গাজায় একই ঘটনা যুদ্ধাপরাধ নয় কেন?”

জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে জর্ডান মিশর এবং কাতারের মতো আরব দেশগুলোর সাথে মিলে কাজ করছে। জিম্মিদের মধ্যে বয়স্ক এবং শিশুদের মুক্ত করার সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মি. সাফাদি বলেন, এই ঘটনার পেছনে অনেক বেশি কাজ করতে হয়েছে।

“আমরা আশা করছি যে, এমন একটি স্থানে পৌঁছাবো যেখানে জিম্মিদের মুক্ত করা হবে এবং এই উত্তেজনা থামিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারবো।”

এছাড়া তিনি উত্তেজনা আরো বিস্তৃত হওয়ার শঙ্কার কথাও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “যদি এই উত্তেজনা বাড়ে এবং এটি বাড়ার মতো বাস্তব হুমকি রয়েছে, তাহলে আমরা এমন একটি দুঃস্বপ্ন নিয়ে কথা বলছি যা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে।”

“আমরা নির্বিচারে হামাসের হাতে পড়েছি- এটা একটা ব্যর্থতা”

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ইসরায়েলি এক মন্ত্রীর কথা বলার সময় তাকে থামিয়ে দিয়ে মন্তব্য করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাল হন শিরেল হোগেগ।

ভিডিওতে তিনি গত সপ্তাহে হামাসের আক্রমণ ঠেকাতে না পারার জন্য ইসরায়েলি মন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। ওই হামলায় ১৪০০ মানুষ নিহত হয়।

“আপনার ক্ষমা চাওয়া উচিত। আপনার হাঁটু গেড়ে বসে শার্ট ছিঁড়ে ফেলা উচিত কারণ আপনি ইসরায়েলি মানুষদের অশ্রু বর্ষণের কারণ হয়েছেন,” মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে চিৎকার করে তিনি এসব কথা বলেন।

কাফার আজা শহরে তাদের বাড়িতে হামাস আক্রমণ চালালে তার বোন, বোনের জামাতা এবং মেয়ে আহত হয়।

রোববার বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজআওয়ার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা নির্বিচারে হামাসের হাতে পড়েছি। সরকার, সামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা- সবার জন্য এটা একটা ব্যর্থতা। কেউ সেটা লুকাতে পারছে না। আমরা মাত্র কয়েক ঘণ্টায় দুই হাজার মৃত্যুর কথা বলছি। এখানে একটা ব্যর্থতা আছে। আপনি দায়িত্বে থাকার সময় এটা ঘটেছে। আর এটা যেহেতু আপনি দায়িত্বে থাকার সময় ঘটেছে, তাই আমরা চাই আপনি এর দায় নিন।”

“তবে সেটা এখন নয়। এখন আমরা লড়বো।”


Spread the love

Leave a Reply