পুলিশের মামলায় নায়িকা মাহিয়া মাহি সকালে গ্রেপ্তার, দুপুরে কারাগারে এবং বিকেলে জামিন

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে গ্রেপ্তারের পর প্রথমে জামিন না মিললেও বিকেলে নতুন করে আবেদনের পর জামিন দিয়েছে গাজীপুরের আদালত।

জামিনের আদেশের পরপরই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে কারাগারে গেছেন তার আইনজীবীরা।

তার আইনজীবী আনোয়ার শাহাদত সরকার সাংবাদিকদের বলেছেন গ্রেপ্তার হওয়া অভিনেত্রী ‘সন্তান সম্ভবা ও সেলিব্রিটি’ এই বিবেচনায় তাকে জামিন দিয়েছে আদালত।

যদিও শনিবার সকালে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আটকের পর গাজীপুরে নিয়ে সেখানকার আদালতে উপস্থাপন করেছিলো পুলিশ। তখন একই আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলো।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন দুপুরে তারা জামিন আবেদন করতে পারেননি বলে আদালত মাহিয়া মাহিকে কারাগারে পাঠালেও এরপরেই তারা জামিন আবেদন দাখিল করেন।

সেখানে তিনি সন্তান সম্ভবা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই দেশে ফিরে এসেছেন- উল্লেখ করে জামিন দেয়ার আবেদন করলে আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করে।

এর আগে সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় গাজীপুরের পুলিশ।

‘পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে’ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছিলেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম।

একই মামলার আসামী তার স্বামী দেশে না ফেরায় তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

‘’আজকে সকালে সৌদি আরব থেকে একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকায় এসেছেন। তাকে আমরা এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেপ্তার করেছি। বিমানবন্দর থেকে মাহিয়া মাহিকে এখন গাজীপুরে নিয়ে আসা হচ্ছে। এখন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্ত হচ্ছে।‘’

‘’তিনি আমাদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যাচার করেছেন, সেজন্য মামলা হয়েছে। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছি। তাকে রিমান্ড চাওয়া হবে,’’ বলেন কমিশনার নজরুল ইসলাম।

একুট পরে গাজীপুরে একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মাহিয়া মাহির স্বামী আসেনি, তাই তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। মাহিয়া মাহিকে থানা থেকে তাকে আদালতে পাঠানো হবে। সেখানে পরবর্তী আইনানুগ প্রক্রিয়া চলবে।

মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকার ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব গিয়েছিলেন।

এর মধ্যেই মিস্টার সরকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুরের একটি ঘটনার পর তারা ফেসবুক লাইভ করে গাজীপুরের পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধেও ঘুষ গ্রহণ ও পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ করেন।

যদিও এমন অভিযোগ তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

মোল্যা নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে বক্তব্য দেয়ার কারণে শুক্রবার রাতে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি এবং তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে গাজীপুরের বাসন থানায় একটি মামলা হয়েছে।

এছাড়া ভাঙচুর ও মারধর করায় বিদেশ থেকে হুকুম দেয়ার আসামি হিসাবে তাদের সহ আরও ২৮জনকে অভিযুক্ত করে স্থানীয় একজন ব্যক্তি মামলা করেছেন।

স্বামী রকিব সরকারের জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে স্থানীয় ইসমাইল হোসেন নামের একজন ব্যক্তির বিরোধ রয়েছে।

এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে মক্কায় থাকা মাহিয়া মাহি এবং তার স্বামী রকিব সরকার ফেসবুক লাইভে এসে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারী ইসমাইল হোসেন এবং গাজীপুরের পুলিশের বিরুদ্ধেও ঘুষ গ্রহণসহ পক্ষপাতের নানা অভিযোগ করেন।

শনিবার সকালে ঢাকা পৌঁছলে তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন, এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয় সেখানে।

শুক্রবার রাতেই গাজীপুরের বাসন থানার পুলিশের একজন কর্মকর্তা মাহিয়া মাহি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে গাজীপুর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘’তিনি আমার বিরুদ্ধে, আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ করে তিনি ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন। আমার বিরুদ্ধে, আমার পরিবারের বিরুদ্ধে, আমার বাহিনীর বিরুদ্ধে, আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তারা যেসব মিথ্যাচার করেছেন, সেজন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করা হয়েছে।‘’

মারধর, ভাংচুর, চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগে মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী সহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ইসমাইল হোসেন নামের একজন ব্যবসায়ী।

ওই মামলায় শুক্রবার রাতে নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান কমিশনার নজরুল ইসলাম।

বাংলাদেশে একাধিক চলচ্চিত্রের নায়িকা মাহিয়া মাহি ২০২১ সালে তৎকালীন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের একটি টেলিফোন আলাপ ফাঁসের ঘটনায় আলোচিত হয়ে ওঠেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থীতার জন্য গত বছর তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছিলেন। যদিও তিনি মনোনয়ন পাননি।


Spread the love

Leave a Reply