পুলিশ থামান : স্বপ্ন ৪১ মূল্যহীন হবে

Spread the love

300280_10200410185210232_305895061_nএম. আবদুর রহিম:
বাংলাদেশ পুলিশের মহা পরির্দশক জনাব একেএম শহিদুল হক গত ১৬ মে কক্সবাজার এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন কোন থানার ওসি ঘোষ দাবি করলে তাকে বেঁধে রেখে পুলিশে খবর দিতে। কথাটা যুক্তিযুক্ত বলে আমার বোধগম্য নয়। বাংলাদেশের কোন পুলিশ অফিসারকে বেধে রাখার মানুষ এখন নেই এবং সেই সাধ্যও কারো নেই। পুলিশের ওসিকে বেধে রাখবে আর ওসি সাহেব বসে বসে আঙুল চুষবে! এটা শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের যুগ না। পুলিশ মহাপরিদর্শক নিশ্চয়ই জানেন কোন পুলিশের ওসি ঘোষ চাইতে হয় না। থানার এসআই থেকে শুরু করে কনেষ্টবল পর্যন্ত ওসির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে। এখন আবার ঘোষের লেনদেন এর জন্য বিকাশ নাম্বার ব্যবহার করা হয়। এটাকে ডিজিটাল লেনদেন বললে সমিচীন হবে। তিনি বলেছেন বেধে রেখে পুলিশে খবর দিতে প্রশ্ন থেকেই যায় ওসি আর পুলিশ এর মধ্যে পার্থক্য কি?আপনারা কোন ওসিকে পুলিশ ধরতে শুনেছেন?সিলেটের শিশু রাজন হত্যার কথা সবারই জানা আছে। এই নির্মম হত্যাকান্ড দামাচাপা দিতে পুলিশ ১২ লক্ষ টাকা ঘোষ নিয়েছে তা বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচারিত হওয়ার পর কোন প্রকার শাস্তি না দিয়ে শুধুমাত্র বদলি করা হয় ঐ কর্মকর্তাকে। গত ৩০ আগস্ট ‘ব্রিটেন বনাম বাংলাদেশের পুলিশ’ শিরোনামে একটি লেখাদৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।তাতে কিঞ্চিত পরিমান বাংলাদেশ পুলিশের দুর্ণীতি ওঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যে বসে একজন সাংবাদিক সামান্য হলেও বাংলাদেশের পুলিশের দুর্ণীতির কথা লিখেছেন অথচ বাংলাদেশের অনেক বাঘা বাঘা সাংবাদিকরা পুলিশের অনেক বেশি দুর্নীতির কথা জানলেও অজ্ঞাত কারণে নীরব ভূমিকা পালন করেন। কিংবা লিখলে গুম কিংবা খুনের সম্ভাবনা করছেন। অনেক সাংবাদিক দুর্নীতি বা ক্রাইম রিপোর্ট করলেও পুলিশ নিয়ে লিখতে ভয় পাচ্ছেন কিংবা হাতপা কোথাও বাধা পড়ে আছে। কয়েকদিন আগে ২১শে টিভি’র একটি সাহসীরিপোর্ট দেখে মনে হলো পুলিশের ঘা থেকে বাঁচার উপায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীরও নেই। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহোদর বোন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ রেহানার বাসায় ভাড়া থেকেও পুলিশের হাত থেকে নিস্তার পাননি জনৈক ব্যবসায়ী। তাকেও এককোটি ঘোষ দিতে হলো। এতো কিছু জানার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কি করে চুপ করে থাকেন তা শুধু আমি নই হয়তো কারো জানা নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি পুলিশের দুর্নীতি থামাতে ব্যর্থ হন তাহলে ২০৪১ স্বপ্ন “দুর্ণীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ” অর্জিত হলেও তা সাধারণ মানুষের কাছে মুল্যহীন হয়ে যাবে।
সম্প্রতি মাননীয় সমাজ কল্যাণমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে কুলাউড়া থানার পুলিশের দুর্ণীতির কথা। মামলা করতে গেলে ২০,০০০টাকা, চার্জসীট পর্যন্ত মামলা দায়েরকারীর খরচ ৭০,০০০ টাকা। এবং একটি সাধারণ ডায়েরী করতে গেলে ১০,০০০ টাকা ঘোষ দেয়া লাগে। সবাই মাননীয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রীকে পাগল বলুন আর যাই বলুন না কেন তিনি যা বলেছেন তা সম্পূর্ণ সত্য। সারা দেশের ৪৬৭ থানার মধ্যে এমন কোন থানা আমার জানা নেই, যেখানে ঘোষ ছাড়া মামলা কিংবা জিডি হয়! প্লিজ আর্শ্চয্য হবেন না, কিছু কিছু থানায় আরো বেশি টাকা লাগে। এমনকি পুলিশ দুই পক্ষ থেকে ঘুষ খায়, মামলার রায়, চার্জসীট উলোট পালোট করে দিতে পারে শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে। শুধুমাত্র পুলিশের কারণে সারাদেশে লাখ লাখ মানুষ খুইয়েছেন সর্বস্ব। সাধারণ মানুষ টাকার অভাবে মামলা করতে ভয়পায়। নির্যাতন, নিষ্পেশনের শিকার হলেও পুলিশের কাছে বলার সুযোগ নেই। আর বললেও ঘুষ, আর না হয় উল্টো মামলা। একটি মফসসল থানার ছোট্ট একটি ঘটনা- গত ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ফেনী জেলার সোনাগাজী থানাধীন একগ্রামে একটি বাড়ি ডাকাতি হয়, ঘরের ৩ সদস্যের হাত পা বেধে সব নিয়ে যায়, পরদিন সকালে পুলিশে অভিযোগ করলে পুলিশ পরিদর্শন করে ঠিকই, কিন্তু টাকা না দেয়ায় কোন ধরনের মামলা কিংবা সাধারণ ডায়েরী নেয়নি। বরঃঞ্চ পুলিশ বলেছে উল্টো মামলা হবে। রহস্যজনক পুলিশের বক্তব্যের কারণ নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারছেন।
ঘোষ যে দিকে পুলিশ ঐদিকে ঝুঁকছে। সুবিচার দুরের কথা যে কোন মামলায় পুলিশের পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয় মামলার অভিযোগকারী কিংবা বিবাদী পক্ষ কে। যে পক্ষ বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারবে সেদিকে পুলিশের বক্তব্য যাচ্ছে। বানরের রুটি ভাগ করে দেয়ার গল্পটা নিশ্চয় আপনাদের মনে আছে। বানর দুই ইদুরের রুটি ভাগ করে দেয়ার নামে পুরো রুটি নিজেই খেয়ে নিয়েছিলো। বিভিন্ন থানায় জায়গা জমি সংক্রান্ত অনেক মামলা আছে, অথচ দেখা গেছে পুলিশকে ঘুষ দিতে দিতে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে হয়তো জায়গার পুরো দামটাই পুলিশ খেয়ে বসে আছে। একেকটি থানা একেকটি দুর্ণীতির অভয় স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় একটি রিপোর্টে দেখেছি শুধু পুলিশের ছোটখাট পর্যায়ে নয় উচ্চ পর্যায়ে বৃহৎ ঘোষের লেনদেন চলছে, যোগ্যতার কি দরকার! পদোন্নিতর নামে বরিশালের ডিসি হাতিয়ে নিয়েছেন ৭৭ লাখ টাকা। পুলিশের নিজস্ব তদন্তে বের হয়ে আসায় নাকি ৫০ লাখ টাকা ফেরতও দিয়েছেন। শুধু বরিশালে নয় সারাদেশে পদোন্নতি, বদলিতে ঘোষের লেনদেন ঘটে, যা সাধারণ মানুষের চোখে পড়ার কথা নয়। একটু ভেবে দেখুন যে পুলিশ অফিসার ঘোষ দিয়ে পদোন্নতি পেল, সে কি করে এই টাকা ফিরে পাবে, অনেক ক্ষেত্রে ঘোষের টাকা এতো বেশি যে একজন পুলিশ সদস্যের ১০ বছরের বেতনের সমান। বর্তমান বেতন স্কেল হয়তো ভিন্ন। এক সময় মানুষ মনে করতো পুলিশের বেতন কম তাই পুলিশ ঘোষ খায় অথচ বর্তমানে পুলিশের বেতন কম নয়। বরং অনেক পেশা থেকে পুলিশের বেতন বেশি। সম্ভবত তাই ঘুষের দরটা বেড়েছে। বিভিন্ন থানায় ‘বিকাশ’ মাধ্যমেও ঘোষের লেন দেন হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পুলিশ অফিসারের সাথে কথা বলা জানা গেছে, থানায় সাধারণ একটি তদন্তের জন্য সর্বনি¤œ ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘোষ দিতে হয়। এসব ঘটনার সাথে সুপরিচিত বাংলাদেশের প্রায় সব ক’টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বারগণ। পুলিশ এখন ওপেন সিক্রেট ভাবেই বলে থাকে উপরের স্যারদের দিতে হয়, আমাদের কিছু করার থাকে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। আপনারাই বলুন উপরের স্যার কারা? আপনারা কি জানেন পৃথিবীর অন্যকোন দেশের মানুষ এভাবে পুলিশের কাছে শোষিত হচ্ছে? আমাদের দেশে হওয়ার একটাই কারণ তাহলো পুলিশ ঘোষ কেলেঙ্কারী প্রমাণিত হওয়ার পর বড়জোর “বদলি করার ক্ষমতা” সরকারের আছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কিংবা উন্নত দেশে ঘুষ কেলেঙ্কারীতে লিপ্ত হলে তার কঠিনতম শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এখনি এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেদ গ্রহণ জরুরি। এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়। বদলাতে হবে সরকারের কাঠামোকেও। মনে রাখতে হবে ৪৬৭ থানাই যদি দুর্ণীতিবাজ পুলিশ অফিসার কিংবা পুলিশ সদস্য গ্রাস করে নেয় তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মূল্য থাকে কোথায়? বাংলাদেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে হলে প্রথমে পুলিশ প্রসাশনকে ঠিক করতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো কেউ কারো সাথে জোর গলায় কথা বললেও পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। ঘুষতো দুরের কথা কোন প্রকার উৎকোচ দেয়ার সুযোগও নেই। পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে পুলিশ ষ্টেশনও যেতে হয় না। আর বাংলাদেশে অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ বলে কোন ঘটনা না ঘটলে জিডি বা মামলা করার দরকার নেই। চমৎকার দৃশ্য হলো পুলিশ ইনভেষ্টিগেশনের জন্যও টাকা দাবি করে। তবে স্থান ভেদে ভিন্ন উপায়ে। কোথাও বলা হয় গাড়ি ভাড়া দেয়ার জন্য, কোথাও আবার চা নাস্তার খরচ! এসব হীন কর্মকান্ডের জন্য পুলিশের প্রতি জনগণের ঘৃণা ও নাভিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। বিশেষ করে বিচার বিভাগ আলাদা হওয়ার পর পুলিশ বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। তবে সবাই যে ঘুষ বা দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত তা কিন্তু নয়। ২০০৬ সালে আমি সিলেট মডেল থানায় একটি জিডি করেছিলাম সেক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তা এএসপি স্বয়ং সহযোগিতা করেছেন এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর আমি যখন যুক্তরাজ্য আসি তখন পাসপোর্ট সাথে ছবি মিল নেই বলে দুই ঘন্টা আটকে রাখা হয় এবং আবার কাছে ১০০০ টাকা দাবি করে। ঠিক সেই সময় বিমান বন্দর এর দায়িত্বপাপ্ত কর্মকর্তা আমাকে চিনতে পারেন এবং তিনি নিজে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি তখন নবাগত ওসি ছিলেন কিছুদিন পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিদায়ী পুলিশ সুপারের বক্তব্য শুনে অনেকেই নীরবে চোখের জলও ফেলেছেন। তাঁর বক্তব্য শোনার পর যেকেউ পুশিলকে সম্মান প্রদর্শন করতে বাধ্য হবেন এবং এটাই হওয়া স্বাভাবিক। অনেক পুলিশ অফিসার আছেন সৎ নিষ্ঠাবান এবং দেশপ্রেমিক, ব্যক্তিগতভাবে অনেক পুলিশ অফিসারের সাথের পরিচয় হওয়ার সুযোগ হয়েছে, আলাপচারিতায় তাদের দেশপ্রেম কোন ধরণের প্রশ্ন রাখার সুযোগ নেই। তাদেরও কি হাতপা বাঁধা পড়ে আছে কোথাও!
বিশ্বস্তসূত্র মতে যতদূর জানি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সঠিক কাঠামোতে দেশকে দাঁড় করানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাঁর দৃঢ় প্রত্যাশা আর স্বপ্ন নিয়ে দেশ ৪১ সালের আগেই ঘুরে দাঁড়াবে। মনে রাখতে হবে ঘরে ঈদুর থাকলে ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলেও যেমন লাভ নেই, তেমনি ভিশন ২০৪১ অর্জনের আগে পুলিশের শোষণের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে না পারলে পুরোটাই ব্যর্থ হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুলিশ থামান, দেশ বাঁচান।


Spread the love

Leave a Reply