পৃথিবীকে বাঁচাতে স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হচ্ছেন তাঁরা

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃজলবায়ু পরিবর্তনের এমন মহামারি প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষার দাবিতে যুক্তরাজ্যে চলছে এক অভিনব আন্দোলন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে রাজনীতিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হতে রাস্তায় নামছেন হাজার হাজার আন্দোলনকারী। তাঁরা অহিংস উপায়ে লন্ডনের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে যান চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছেন। ব্রিজ কিংবা রাস্তায় তাঁবু টাঙিয়ে বসে পড়ছেন। গত সোমবার থেকে লন্ডনের গণপরিবহন চলাচলে বড় ধরনের বাধার সৃষ্টি করেছেন আন্দোলনকারীরা। রাস্তায় তাঁরা রাত যাপন করছেন।
বুধবার আন্দোলনের তৃতীয় দিনে লন্ডনের অন্তত একটি পাতাল রেললাইন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। তবে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তাঁরা। তবে আন্দোলনকারীরা ক্যানারি ওয়ার্ফে একটি উড়াল ট্রেনের ছাদে উঠে পড়েন এবং দরজা আটকিয়ে বাধার সৃষ্টি করেন।
পুলিশ বুধবার সকাল পর্যন্ত তিন শতাধিক আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে আন্দোলনকারীরা বলেছেন, তাঁরা আরও হাজারে হাজারে গ্রেপ্তার হতে প্রস্তুত।
বিশ্বের ৩৩টি দেশের ৮০টি শহরে একই কায়দায় আন্দোলনে নেমেছেন পরিবেশবাদীরা। যুক্তরাজ্যের লন্ডন, এডিনবরাসহ কয়েকটি শহরে এমন আন্দোলন হচ্ছে। চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
যুক্তরাজ্যে অভিনব এই আন্দোলনের আয়োজক এক্সটিঙ্কশন রেবিলিয়ন। গত বছরে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন। যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসির প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করেন এবং সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অধিবেশন চলাকালে অর্ধনগ্ন হয়ে সেখানে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে অবস্থান নেওয়া ৩১ বছর বয়সী লরনা গ্রিনউড নামের এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘আমি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ সময়ে কেউ চাইবে না রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবস্থান করতে কিংবা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে হাজতে রাত কাটাতে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টির পক্ষেও আমি নই। কিন্তু পৃথিবীকে ধ্বংস থেকে রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করতে এগুলোই সহজ বিকল্প।’
এক্সটিঙ্কশন রেবিলিয়ন-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা রজার হ্যালম বলেন, দাবি আদায়ে চিঠিপত্র চালাচালি আর বিবৃতি দিয়ে কোনো কাজ হয় না। প্রয়োজন অহিংস উপায়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে বিরক্ত করে তোলা। এতে সাধারণ মানুষও দাবিগুলো সম্পর্কে জানতে পারে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ কত মানুষকে আটক করবে? একসময় পুলিশ নিজেই সরকারকে বলবে, আমরা আর পারছি না। এর একটা রাজনৈতিক সমাধান জরুরি।’এক্সটিঙ্কশন রেবিলিয়ন আন্দোলনকারীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়, কীভাবে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের কাজ কঠিন করে তোলা যায় এবং গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের অধিকারগুলো কী কী। আন্দোলনকারীদের মূল দাবি তিনটি। এগুলো হলো জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সরকার যেন সত্য কথা বলে। ২০২৫ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্য মাত্রায় নামিয়ে আনা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেপগুলোর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে একটি গণপরিষদ গঠন করা। আন্দোলনকারীরা চান সরকার দ্রুত দাবিগুলোর বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক। অন্যথায় লন্ডনের পাতালরেলও বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।
গত সোমবার থেকে এই আন্দোলনকারীরা লন্ডনের ব্যস্ততম ওয়াটার লু ব্রিজ, ম্যাফেয়ার, অক্সফোর্ড এবং পার্লামেন্ট স্কয়ার দখলে রেখেছেন।


Spread the love

Leave a Reply