পৈশাচিক কায়দায় শিশু রাজন হত্যায় সৌদি ফেরত কামরুলসহ ৪জনের ফাঁসি * `যেদিন ফাঁসি হবে সেদিন আমার রাজনের আত্বা শান্তি পাবে`’

Spread the love

unnamed (2)খালেদ আহমদ,সিলেট
সিলেটের কুমারগাঁওয়ে পৈশাচিক কায়দায় অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলায় প্রধান আসামি সৌদি আরব থেকে ধরে আনা কামরুলসহ ৪ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।

১৪ কার্যদিবসে বিচার-প্রক্রিয়া শেষ করে রোববার দুপুরে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা আলোচিত এ মামলার রায় দেন।

প্রধান আসামি কামরুল ছাড়াও যে ৩ জনকে ফাঁসির দন্ডাদেশ দেয় হয়েছে তারা হচ্ছে- জালালাবাদ থানার পীরপুর গ্রামের সাদিক আহমদ ময়না ওরফে বড় ময়না ওরফে ময়না চৌকিদার (৪৫), শেখপাড়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে তাজউদ্দিন আহমদ ওরফে বাদল (২৮) ও সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের অলিউর রহমান ওরফে অলিউল­াহর ছেলে মো. জাকির হোসেন পাভেল ওরফে রাজু (১৮)। তন্মধ্যে পাভেল পলাতক রয়েছে।
এছাড়া, এ মামলায় এক জনকে যাবজ্জীবন, তিনজনকে সাত বছর ও একজনের ১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে,আলোচিত এই হত্যা মামলায় পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের ছেলে ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ ওরফে নূর মিয়া (২০) কে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।

unnamed (1)এছাড়া প্রধান হোতা কামরুল ইসলামের মেজো ভাই মুহিদ আলম (৩২), বড়ভাই আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও ছোটভাই শামীম আলমকে ৭ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একইসাথে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরো ২ মাসের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।অপর দুই আসামি দুলাল ও আয়াজ আলীকে ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।

মামলার ১৩ আসামীর মধ্যে বাকি ৩ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।খালাস প্রাপ্তরা হচ্ছে-ফিরোজ আলী, আজমত উল্লাহ ও রুহুল আমিন।রায় ঘোষণার সময় আদালতে ১৩ আসামির মধ্যে ১১ জন উপস্থিত ছিলেন।

সকাল সাড়ে ১১টায় বিচারক রায় পড়া শুরু করেন।আলোচিত এ মামলার রায় হচ্ছে ৭৬ পৃষ্টার। এর মধ্যে আছে ২৮১০ লাইন, ৩১৩৫৮ শব্দ। বিচারক রায় পড়েছেন ২২ পৃষ্টা এবং ৫৪ পৃষ্টা থেকে এ রায় পড়া হয় বলে আইনজীবিরা জানান।।

এদিকে, রায় ঘোষনার পর বেলা ১টা ১৫ মিনিটে কাঠগড়া থেকে কামরুলসহ আসামীদের বের করে প্রিজন ভ্যানে ওঠানোর সময় ‘ফাঁসি-ফাঁসি’ স্লোগানে উচ্চকিত হয়ে ওঠে আদালত প্রাঙ্গণ।নানা বয়সের লোক জন শ্লোগান দেন এবং অনেকে কামরুলের দিকে জুতা ছুড়ে মারেন।

নির্মম ও পৈশাচিক এই হত্যাকাণ্ডের ঠিক চার মাসপূর্তিতে এ মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।সকাল থেকেই আতলিত প্রাঙ্গনে হাজার হাজার জনতার ভীড় ছিল।উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে সামিউল আলম রাজনকে কথিত চুনিন অপবাদ দিয়ে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। নির্যাতনের সময় ঘাতকরা নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিওচিত্রে ধারণ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে দেশ-বিদেশে আলোড়নের সৃষ্টি হয়।

unnamedরাজন হত্যা মামলার ১৩ আসামির মধ্যে সৌদি আরবে আটক প্রধান আসামি কামরুলসহ ১১ জন কারাবন্দি ও দু’জন পলাতক রয়েছেন।

`যেদিন ফাঁসি হবে সেদিন আমার রাজনের আত্বা শান্তি পাবে` : সিলেটে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা মা-বাবা।

রোববার দুপুরে রায় পরবর্তী এক প্রতিক্রিয়ায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। রাজনের বাবা আজিজুর রহমান বলেন, ‘রায়ে আমি খুশি। তবে চাই, এ রায় দ্রুত কার্যকর হোক।’

আজিজুর রহমান বলেন,আসামীদের যেদিন ফাঁসি হবে সেদিন আমার রাজনের আত্বা শান্তি পাবে।আমি দ্রুত এ রায় কার্যকরের দাবি জানাই।

এ সময় তিনি বিচারক, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মা লুবনা বেগম তা দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান।

এদিকে রায় ঘোষণার পর রাজনের বাবার নিযুক্ত আইনজীবী শওকত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের জঘন্য হত্যাকাণ্ডের বিচার এমনটাই হওয়া উচিত।’

‘ফাঁসি চাই’ স্লোগানে প্রকম্পিত আদালতপাড়া : আলোচিত এই মামলার রায়কে ঘিরে রোববার সকাল থেকেই জনতার উপচেপড়া ভীড় লাগে সিলেটের আদালতপাড়ায়। সময়ের সাথে সাথে সেই ভীড় যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়। একইসাথে জনতার কন্ঠে বাড়তে থাকে ‘ফাঁসি চাই’ স্লোগানের তীব্রতা। তাদের ‘ফাঁসি চাই’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠেছিল সিলেটের আদালতপাড়া।

সকাল সোয়া ১১টার দিকে যখন রাজন হত্যা মামলার অভিযুক্ত ১৩ জনের মধ্যে কারাগারে থাকা ১১ জনকে আদালতপাড়ায় নিয়ে আসা হয়, তখন বিক্ষুব্দ জনতা ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ স্লোগানে প্রকম্পিত করে তুলে আদালতপাড়া।রায় ঘোষণার পুরোটা সময় জুড়েই জনতার কন্ঠে ছিল আগুন।
এমনকি বেলা সোয়া ১টার দিকে যখন রায় ঘোষণার পর অভিযুক্তদের আবার কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছিল, তখনও কামরুল, ময়না, বাদল, পাভেলদের ধিক্কার জানায় জনতা।‘ফাঁসি চাই’ ‘ফাঁসি চাই’স্লোগানে অনেকে জুতা ছুঁড়ে দেয় তাদের প্রতি।জনতাকে সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশের।


Spread the love

Leave a Reply