প্রেসিডিয়াম সভায় মন্ত্রীসভা ছাড়ার সিদ্ধান্ত এরশাদপন্থীদের
বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ কয়েকজনের অনুপস্থিতিতে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সভায় সরকার ছাড়তে ‘একমত’ হয়েছেন উপস্থিতরা। তবে মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার সময় নির্ধারণের ক্ষমতা দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দিয়েছেন তারা।
সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এরশাদ নিযুক্ত দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি আরও জানান আগামী ১৬ এপ্রিল জাপার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
জিএম কাদের বলেন, মিটিংয়ে যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা সবাই মতামত দিয়েছেন, রাজনীতির স্বার্থে বেরিয়ে আসাটা অত্যন্ত জরুরি। মাননীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তীতে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদসহ তার সমর্থক ২৪ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য বনানীর কার্যালয়ে এই বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ বাকি ১৩ সদস্য সভায় আসেননি।
রোববার বেলা ১১টা ৪০ থেকে শুরু হয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা এই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে আসেন এরশাদের ভাই জি এম কাদের, যাকে কো চেয়ারম্যান নিয়োগ করায় সম্প্রতি দলে নতুন করে বিদ্রোহের মুখে পড়েন এরশাদ।
এরশাদের স্ত্রী রওশন ছাড়াও পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ সম্প্রতি মহাসচিবের পদ থেকে ছিটকে পড়া জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ, তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও কাজী ফিরোজ রশিদের মতো জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্যরা এ বৈঠকে ছিলেন না।
এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলি শেষবার বৈঠকে বসে, যাতে রওশনও উপস্থিত ছিলেন। ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নাটকীয়তার এক পর্যায়ে এরশাদ বিএনপির মতোই ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলে দলের একাংশ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তাদের মধ্যে জি এম কাদেরও ছিলেন। বর্জন করেও এরশাদ আইনের মারপ্যাঁচে ভোটে জিতে যান। জাতীয় পার্টি সংসদের বিরোধী দল হয়, এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ হন বিরোধী দলীয় নেতা।
এরপর বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টির সদস্যদের মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টি আলোচনায় এলেও জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের আপত্তির কারণে তা ধোপে টেকেনি- এমন খবর এসেছে গণমাধ্যমে। রওশনপন্থিদের বিরোধিতার মধ্যেই সম্প্রতি এরশাদ নিজের ভাই জি এম কাদেরকে পার্টির কো চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন, মহাসচিব পদে ফিরিয়ে আনেন দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন রুহুল আমিন হাওলাদারকে।
এ নিয়ে দলে বিদ্রোহের মধ্যেও এরশাদ বলেন, তিনি তার সিদ্ধান্তে মৃত্যু পর্যন্ত অটল থাকবেন। তবে এর আগে রওশনপন্থি একাধিক নেতা জানিয়েছিলেন, রওশন এবং জাপার তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও তাদের অনুসারীরা সভায় যোগ দেবেন না। অন্যদিকে দশম সংসদের দুই বছর পূর্তির আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে রওশন সাফ জানিয়ে দেন, তারা সরকারেই থাকছেন।
গত ২৬ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক মন্ত্রী জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির অবস্থান জনগণের কাছে অস্পষ্ট। কারণ জাতীয় পার্টি একদিকে বিরোধী দল, আবার অন্যদিকে সরকারের মন্ত্রিসভায় আছে।