ফখরুল কারাগারে, নেতাদের বাসায় বাসায় অভিযান

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানায় করা মামলায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তাকে গুলশানের বাসা থেকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে  নেয়া হয়। দিনভর তাকে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর ডিবির গাড়িতে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। রমনা থানার যে মামলায় ফখরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ওই মামলায় তাকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এ মামলায় মির্জা ফখরুলকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। অপরদিকে মির্জা ফখরুলের আইনজীবী জামিন আবেদনের পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের অভিযোগের মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ ৫৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। ফখরুল-আব্বাস ছাড়াও মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, আহমেদ  আজম খান, এডভোকেট জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, ভিপি জয়নাল, মহানগর উত্তর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনার ও সদস্য সচিব আমিনুল হক। মির্জা ফখরুল ইসলামকে তার বাসা থেকে তুলে আনার পর তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম বলেন, সকালে ডিবি পুলিশের লোকজন বাসায় আসে। তারা বাসার সবার সঙ্গে কথা বলে।এরপর সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ হার্ডডিস্ক নিয়ে ভবনের নিচে চলে যায়। দশ মিনিট পর আবার ফিরে এসে ফখরুলকে আটক করে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল অসুস্থ, তার চিকিৎসা চলছিল। এভাবে নিয়ে যাবে মেনে নিতে পারছি না।

এর আগে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত ও অর্ধশত আহত হন। সংঘর্ষের পর পুলিশ বিএনপি’র কার্যালয়ে অভিযান চালায়। ঘটনার পরদিন পল্টন, মতিঝিল, রমনা ও শাহজাহানপুর থানায় পৃথক চারটি মামলা করে পুলিশ। এতে ২ হাজার ৯৭৫ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ৭২৫ জনের। তবে নাম উল্লেখ করা বিএনপি’র নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস ছিলেন না। পরে ওই দুই নেতার বাসায় ৮ই ডিসেম্বর গভীর রাতে পৃথক অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দুজনকে প্রথমে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে। বাসা থেকে নিয়ে যাওয়ার প্রায় ১১ ঘণ্টা পর মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তাদের পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই মামলায় চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি কেরানিগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তারা দুজনই মুক্তি পান।

ওদিকে ফখরুল ছাড়াও পুরনো একটি মামলার সন্দেহভাজন আসামি দেখিয়ে ব্যবসায়ী সৈয়দ এম. আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে আটক করেছিল পুলিশ। শনিবার দিবাগত রাত ৩টায় গুলশান-২ এর ১১৫ নম্বর সড়কস্থ বাড়ি থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। তিনি প্রগতি ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান।  সমপ্রতি তার বাসায় একটি নৈশভোজে অংশ নেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। ওই ভোজে বিএনপি’র বেশ কয়েকজন নেতা ও সরকারের একজন মন্ত্রীও অংশ নেন। রাতে ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেনকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

এদিকে, মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর শনিবার রাত থেকেই রোববার দিনভর বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তারে বাসায় বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। অনেক নেতাকে না পেয়ে তাদের স্বজন, ব্যক্তিগত সহকারী ও অফিসের স্টাফকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গুলশানের ভাড়া বাসায় অভিযান চালায় শতাধিক ডিবি পুলিশ। সাড়ে ৯টার দিকে বিএনপি মহাসচিবকে আটক করে নিয়ে যায়।  ভোর ৪টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আটক করার জন্য তার শাহজাহানপুরের বাসায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দীর্ঘ সময় তার বাসার সামনে অবস্থান করে তারা। মির্জা আব্বাসকে না পেয়ে ফিরে যান তারা। ওদিকে ভোর ৫টার সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বনানীর বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। আমীর খসরু বাসায় না থাকায় ফিরে যায় পুলিশ।

সকালে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের ছেলের লালমাটিয়ার বাসায় তল্লাশি চালায় ডিবি পুলিশ। আলালকে না পেয়ে বাসার প্রতিটি রুম তল্লাশি চালায় তারা। এরপর দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তার বনানীর বাসায় যায় ডিবি পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জানান, লালমাটিয়ার পর তার বনানীর বাসায় ১৪/১৫ জন ডিবি পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। প্রতিটি রুম তছনছ করা হয়েছে। তাকে না পেয়ে ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদার ও গাড়িচালক সানাউল্লাহকে তুলে নিয়ে যায়। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালামের শান্তিনগরের বাসভবন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের পল্লবীর বাসভবন এবং যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বাসভবনে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।  আমিনুল  হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালানো হয়। সেখানে আমিনুলকে না পেয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্টাফ রিপনকে আটক করে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ।

সকালে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল মিন্টুর বাসভবনে অভিযান চালায় পুলিশ। মিন্টুকে না পেয়ে তার ছোট ছেলে তাজওয়ার আওয়ালকে তুলে নিয়ে যায়। দুপুরের দিকে তাজওয়ারকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।  বেলা ১১টার দিকে বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের গুলশানের অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ।  তারা ইশরাকের বাসায় ঢুকে প্রতিটি রুমে তল্লাশি চালায়। এ সময় ইশরাককে না পেয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার সময় তার ছোট ভাই প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার কনিষ্ঠ পুত্র ইশফাক হোসেন এবং গাড়িচালক রাজিবকে আটক করে নিয়ে যান। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারী আরিফ হোসেন।


Spread the love

Leave a Reply