ফ্রান্সে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, আইফেল টাওয়ার বন্ধ

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃফ্রান্সে ‘ইয়েলো ভেস্টস’ নামে সরকার বিরোধী গোষ্ঠীর চলমান বিক্ষোভের কারণে শনি ও রোববার আইফেল টাওয়ার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশের সরকার।

ঘটনা পরবর্তী ইতিমধ্যেই চারজন প্রাণ হারিয়েছে এবং ছইয় শতাধিক লোক আহত হয়েছে। পরিস্থিতি অনুধাবন করে এখন কিছুটা নরম মনোভাব পোষণ করছে সরকার। তবুও ক্ষোভের মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

দুই সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ পুনরায় ভিন্নরূপ নিতে পারে; এমন আশঙ্কা থেকেই শনি-রোববার নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ রাখা হচ্ছে আইফেল টাওয়ার লুভ্যর মিউজিয়ামসহ প্যারিসের বিভিন্ন জনপ্রিয় পর্যটনস্থলগুলো।

বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাঙ্গা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে ফ্রান্স সরকার। গত শনিবার দাঙ্গায় তিন ব্যক্তির নিহত হন। জ্বালানি তেলের কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রথমে ওই দাঙ্গা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে সরকার কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেও অন্য দাবি তুলে দাঙ্গা চালিয়ে যাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা।

উগ্র ডান ও বামপন্থীদের চলমান দাঙ্গায় আগামীকাল প্যারিসে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সহিংসতা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এবং সরকার এটি মোকাবিলায় প্রস্তুত বলে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন দেশটির অভ্যন্তরীণমন্ত্রী।

বিক্ষোভ মোকাবেলা করতে ইতিমধ্যে রাজধানী প্যারিসে সাঁজোয়া যানসহ দেশব্যাপী ৮৯ হাজার পুলিশ মোতায়েন রাখার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার্দ ফিলিপ। শুধু প্যারিস শহরকে পাহারা দিতে ব্যস্ত থাকবে ৮ হাজার পুলিশ।

ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে ফ্রান্সের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, মূলত জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় এ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এরপর তা ছড়িয়ে পড়েছে ফ্রান্সজুড়ে। জ্বালানির কর বৃদ্ধির ঘোষণার পর প্রতিবাদে ফ্রান্সে ১৭ নভেম্বর থেকে চলছে ‘ইয়েলো ভেস্টস’ আন্দোলন। এই আন্দোলন ফ্রান্সের ইতিহাসে গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড়। বর্তমানে এ আন্দোলন জোরালো হয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পরিণত হয়েছে।

বিক্ষোভের কারণে রাজধানী প্যারিসের সজ-এলিজি এলাকার দোকানপাট ও রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ রাখতে অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া বেশ কিছু জাদুঘরও একই কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে।

শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত সপ্তাহে সজ-এলিজিতে বিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভ ‘আর্ক দে ত্রিওম্ফ’ আক্রান্ত হওয়ায় অন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় তারা বিশেষ ব্যবস্থা নেবে।

যেসব স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে সেগুলোর মধ্যে ল্যুভর ও ওর্সে জাদুঘর, অপেরা হাউস ও গ্র্যান্ড প্যালে’ কমপ্লেক্স আছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সংস্কৃতিমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক রিয়েস্তার। শুধু তাই নয়, শনি ও রোববার বেশ কিছু ফুটবল ম্যাচও স্থগিত করা হয়েছে।

ফ্রান্সভিত্তিক রেডিও স্টেশন আরটিএলকে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা যেহেতু আছে, আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে পারি না।’

এদিকে টানা বিক্ষোভ- প্রতিবাদের জেরে পিছু হটেছে সরকার। ফলে পরবর্তী বাজেটে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে ফ্রান্স সরকার।

প্রথমে ঠিক হয়েছিল, আগামী ছয় মাসের জন্য তা স্থগিত রেখে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে। কিন্তু বিক্ষোভ ক্রমশ বড় হলে প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার্দ ফিলিপ নিজেই এই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসতে চাইছেন।

ইতিমধ্যে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ২০১৯ সালের নতুন বাজেট বিল থেকে জ্বালানিতে কর বসানোর বিষয়টি বাদ দেওয়া হচ্ছে। এদুয়ার্দ ফিলিপের সরকার মনে করছেন, এই ঘোষণার মধ্যদিয়ে ‘ইয়েলো ভেস্টস’ আন্দোলন বন্ধ হতে পারে।

এর আগে ২০১০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সম্ভব্য বোমা হামলার আশঙ্কায় আইফেল টাওয়ার দর্শকদের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। অনুসন্ধান চালিয়ে কোন বোমা পাওয়া না যাওয়ায় পরদিন ১৫ সেপ্টেম্বর পুনরায় আইফেল টাওয়ার খুলে দেয়া হয়।


Spread the love

Leave a Reply