বাংলাদেশে গুম-নিখোঁজের ঘটনায় উদ্বিগ্ন নয় সরকার
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে ২০১৭ সালে দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি ‘চরম উদ্বেগজনক’ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সংস্থার হিসেবে এক বছরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ কিংবা রহস্যজনক নিখোঁজ হয়েছে মোট ৯১ জন। এর ফিরে এসেছে বা খোঁজ পাওয়া গেছে মাত্র ২৬ জনের।
এসব ঘটনা তদন্তে স্বাধীন কমিশনের দাবি করে সংস্থাটি বলছে বিদায়ী মত প্রকাশের স্বাধীনতা কিংবা সভা সমাবেশের অধিকারও খর্ব হয়েছে দারুণভাবে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে ছিলো ঢাকায় শিক্ষক সাংবাদিক সহ কয়েকজনের রহস্যজনক নিখোঁজ ও ফিরে আসার ঘটনা। চার মাস নিখোঁজের পর গত রাতেই আরও একজনের সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছে পুলিশ।
বাংলাদেশে চলতি বছরে এমন অনেকগুলো ঘটনা ঘটলেও এসব ঘটনার জন্য দায়ী কারা, সেটি কখনোই জানা যায়না।
ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মানবাধিকার বিষয়ক পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করে সংস্থাটির সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফয়জুল কবির বলেন ২০১৭ বাংলাদেশ গুম নিখোঁজ নতুন মাত্রা পেয়েছে।
তাদের পর্যবেক্ষণ, এবছর সাবেক রাষ্ট্রদূত, রাজনীতিক, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ কেউই এবার আর বাদ যায়নি গুম কিংবা নিখোঁজের তালিকা থেকে।
তিনি বলেন, “২০১৭ সালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম ও গুপ্ত হত্যার শিকার শিকার হয়েছেন ৬০জন। এর মধ্যে পরিবার ফেরত পেয়েছে সাত জনকে।”
“এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে ‘রহস্যজনক নিখোঁজ’ হয়েছে আরও ৩১ জন। যার মধ্যে ফেরত এসেছে নয় জন আর গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ছয় জনকে।”
কিন্তু দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এমন পর্যবেক্ষণ মানতে রাজী নন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচেয় কিংবা রহস্যজনক গুম বা নিখোঁজের ঘটনাসহ মানবাধিকার নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই বলেই মনে করেন তিনি।
তিনি বিবিসিকে বলেন, “অবনতির কোন প্রশ্ন উঠেনা। বরং সারা দেশের সার্বিক অবস্থা বিচেনায় নিলে বলা হয় বাংলাদেশ ২০১৭ সালে অনেক ভালো ছিলো। তবে দ্রুত উন্নয়নের যে ব্যথা বেদনা থাকে সেগুলো বাংলাদেশেও হচ্ছে। এ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই”।
এইচ টি ইমামের কাছে পরিস্থিতি উদ্বেগের না হলেও আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবিভাগীয় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও বেড়েছে আগের বছরের তুলনায়।
এ বছরেই এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ১৬২ জন মানুষ। অন্যদিকে বাধাগ্রস্ত হয়েছে মত প্রকাশের কিংবা সভা সমাবেশের অধিকারও।
আবু আহমেদ ফয়জুল কবির বলছেন শুধু ৫৭ ধারাতেই সাংবাদিক লেখকসহ মোট ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
কিন্তু সেই অভিযোগ অস্বীকার করে এইচ টি ইমাম বলেন, “প্রতিটি পত্রিকা সরকারের সমালোচনায় মারমুখো। কার লেখায় কিংবা তথ্য প্রকাশে বাধা দিচ্ছি না। অন্যদিকে সভা সমাবেশে ২০১৪ সালে বিএনপির সন্ত্রাসের সময় কিছু বাধা ছিলো। অন্যরা যারা আছে বা বিএনপি কি সভা সমাবেশ করছেনা?”
তবে সরকারের পক্ষ থেকে যা-ই বলা হোক আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে গুম, গুপ্ত হত্যা কিংবা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা মূলক তদন্ত করা উচিত।
পাশাপাশি মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারের আরও কার্যকর ভূমিকাও প্রত্যাশা করেছেন তারা।